বালি তোলার অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন, নালিশ
প্রশাসনের ‘অনুমতি’ নিয়েই বাঁধ কেটে অজয়ের চর থেকে বালি তোলার অভিযোগ উঠল কেতুগ্রামের ত্যাওড়া গ্রামে। বন্যাপ্রবণ এলাকায় ওই ভাবে বালি তোলার বিরুদ্ধে সরব হয়ে সম্প্রতি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিয়েছেন গ্রামবাসীরা।
কয়েক মাস আগেই অজয়ের বাঁধ কেটে বালি ‘চুরি’-র অভিযোগ উঠেছিল। আনন্দবাজার পত্রিকায় সেই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। বাঁধ সংস্কার করা হয়। বালি চুরির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ধূলধর হাজরা নামে এক ব্যক্তিকে। অভিযোগ, সম্প্রতি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর ত্যাওড়া গ্রামের ওই জায়গায় বালি তোলার জন্য এজেন্ট নিয়োগ করে। এক মাসের জন্য প্রশাসনের ‘অনুমতি’ নিয়েই বাঁধ কেটে বালি তুলছেন ওই এজেন্ট। ঘটনাচক্রে ধূলধর হাজরাই সেই এজেন্ট।
এই বাঁধ কেটে তৈরি করা হয়েছে রাস্তা। কেতুগ্রামের ত্যাওড়া গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।
যদিও রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুইয়াঁ বলেন, “বাঁধ কেটে বালি তোলার কোনও অনুমতি আমরা দিইনি। জেলাশাসককে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।”
গত ৪ এপ্রিল ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর-সহ প্রশাসনের কাছে গ্রামবাসীরা লিখিত অভিযোগে জানান, কেতুগ্রাম থানার বিল্লেশ্বর গ্রাম থেকে নারেঙ্গা গ্রাম পর্যন্ত অজয় নদের উপর ‘এক্স জমিনদারি’ বাঁধটি রয়েছে। তাঁরা জানান, বাঁধটি এমনিতেই দুর্বল। প্রতি বছর বর্ষায় অজয়ের জল বাড়লে বাঁধের মাটি ধসে পড়ে। রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিতে হয় তাঁদের। এলাকার বাসিন্দা দেবব্রত দে, অসীম দাসদের অভিযোগ, “শীতকালে ওই বাঁধের একাংশ কেটে বালি বোঝাই গাড়ি চলাচলের রাস্তা তৈরি করেছিল মাফিয়ারা।” সেই সময়েও প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছিলেন তাঁরা। বাঁধ কেটে বালি চুরি করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল ধূলধর হাজরাকে। ঘটনাচক্রে তিনিই বর্ধমান জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে এক মাসের জন্য ত্যাওড়া গ্রামে বালি তোলার ‘অনুমতি’ পেয়েছেন।
গ্রামবাসীরা জানান, ‘অনুমতি’ পাওয়ার কয়েক দিন পর্যন্ত বাঁধ না কেটেই বালি তোলা হচ্ছিল। তাঁদের দাবি, কিছু দিন পরেই বাঁধের উপরের অংশটি কাটা হতে থাকে। গ্রামবাসী পরেশ দে, কান্তি পাল, জয় প্রধানেরা জানান, বাঁধের কাটা অংশটি কেতুগ্রাম ২ ব্লকের প্রশাসন সংস্কার করে দিয়েছিল। ফের সেই জায়গাতেই বাঁধ কেটে বালি বোঝাই গাড়ি যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগে গ্রামবাসীরা আরও জানান, বাঁধের একাংশ (প্রায় ৫ ফুট) কেটে নেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসী নীলেশ দে, বিশ্বজিৎ গুপ্তদের আশঙ্কা, “আর কয়েক মাস পরেই আসবে বর্ষা। সেই সময়ে অজয়ের জল বাড়ে। তখন বাঁধের ওই অংশ ভেঙে গেলে কেতুগ্রাম ১ ও ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যাবে।”
গ্রামবাসীরা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে বার বার বিষয়টি জানিয়েছেন। কোনও ফল না মেলায় কয়েক দিন আগে তাঁরা দেখা করেন কেতুগ্রাম ২ বিডিও-এর সঙ্গে। বিডিও হেমন্ত ঘোষ কয়েক দিন আগে ত্যাওড়া গ্রামে গিয়ে ছবি তুলে আনেন। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এর পরেই ওই এজেন্ট ধূলধর হাজরার সমর্থনে স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বিডিও-র কাছে গিয়ে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার অনুরোধ জানান। হেমন্তবাবু এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই বলবে।”
তবে কেতুগ্রাম বিএলএলআরও রমেশ গাইন অবশ্য জানান, ওই এজেন্ট ‘অনুমতি’ নিয়েই বাঁধ কেটে বালি তুলছেন। তিনি বলেন, “মহকুমাশাসকের (কাটোয়া) নির্দেশে ওই এজেন্ট আমাদের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন, বালি তোলা হয়ে গেলে বাঁধের কাটা অংশ তিনি সংস্কার করে দেবেন।” মহকুমাশাসক (কাটোয়া) দেবীপ্রসাদ করণম ছুটিতে থাকায় এ ব্যাপারে তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
যদিও দলের লোকেরা এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া ‘অনুরোধ’ জানিয়েছেন, তা মানতে চাননি কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ। তাঁর কথায়,“আমরা কেন বিডিওকে ওই অনুরোধ করব? আমি তো নিজেই বিধানসভায় ওই বাঁধটির সংস্কারের ব্যাপারে সরব হয়েছি। কয়েক দিনের মধ্যেই বাঁধটি দেখতে তদন্ত কমিটির সদস্যেরা আসবেন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.