নিতিন গডকড়ীর নাম না করেও উত্তরপ্রদেশে হারের জন্য পরোক্ষে তাঁকেই দায়ী করলেন রাজ্যের বিজেপি নেতারা।
উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর্যালোচনা করতে একপ্রস্ত আলোচনা সেরে ফেলেছেন রাহুল গাঁধী। কিন্তু, নানা বিষয়ে দলে ‘একঘরে’ গডকড়ী বিজেপি-র হারের ময়না-তদন্ত শুরু করতে অনেকটা সময় নিয়েছেন। এই দেরি নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। রাজ্যে শোচনীয় ফলের পর্যালোচনা করতে আজ উত্তরপ্রদেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন গডকড়ী। সেখানে রাজ্য নেতারা হারের যে কারণগুলি বিশ্লেষণ করেন, তাতে পরোক্ষে দায় বর্তাচ্ছে খোদ সভাপতির উপরেই। উমা ভারতী, বরুণ গাঁধী, রাজনাথ সিংহ, মোক্তার আব্বাস নাকভি, বিনয় কাটিয়াররা এই বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও অরুণ জেটলি কিংবা সুষমা স্বরাজের মতো শীর্ষ নেতারা ছিলেন না। অনেক নেতার ধারণা, কার্যত মুখরক্ষার জন্য এই বৈঠক ডেকেছিলেন গডকড়ী।
বৈঠকে উপস্থিত এক নেতার কথায়, আলোচনায় হারের পিছনে মূলত চারটি কারণ উঠে এসেছে। এক, বিজেপি যখন দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলন করছে, তখন দুর্নীতির দায়ে মায়াবতীর দল থেকে বিতাড়িত বাবুসিংহ কুশওয়াহাকে নিয়ে আসায় দলকে খেসারত দিতে হয়েছে। দুই, লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো নেতারা উমা ভারতীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে ভোটে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু কাউকেই সেভাবে সামনে আনা হয়নি। ফলে বিজেপি লখনউয়ের তখ্ত দখল করতে পারে, এই বার্তা ভোটারদের কাছে পৌঁছয়নি। তিন, মায়াবতী-মুলায়ম-রাহুল গাঁধীরা অনেক আগে টিকিট বন্টন করে দিয়েছিলেন। এই কাজে সবচেয়ে পিছিয়ে ছিল বিজেপি। ভোটযুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতেও দল অনেক দেরি করেছে। চার, উত্তরপ্রদেশে সক্রিয় ছিল দলের অনেক ‘মাথা’। ফলে, নেতৃত্বের আসল ভার কার উপরে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল।
গডকড়ীর নির্দেশে ভোটের ফল পর্যালোচনা করে জেলাভিত্তিক যে রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে, তাতে সামগ্রিকভাবে এই চিত্রটিই ফুটে উঠেছে। দলের নেতাদের মতে, হারের পরোক্ষ দায় বর্তায় গডকড়ীর উপরেই। কারণ, বাবুসিংহ কুশওয়াহাকে নিয়ে আসার জন্য বিনয় কাটিয়ার বা রাজ্যের প্রাক্তন সভাপতি সূর্যপ্রতাপ শাহির ভূমিকা থাকলেও গডকড়ী তাতে শিলমোহর বসান। কলরাজ মিশ্রদের আপত্তিতে উমাকেও মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রার্থী করতে পারেননি গডকড়ী। দু’বছর ধরে আডবাণী এই বিষয়ে সক্রিয় থাকলেও গডকড়ী একেবারে শেষ মুহূর্তে উমাকে দলে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। টিকিট বন্টনের আগে গডকড়ী তিন-তিনবার ‘নিরপেক্ষ’ সমীক্ষা করেছেন। ফলে এই প্রক্রিয়া শুরু হতেও অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। নেতাদের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করতেও গডকড়ী ব্যর্থ হয়েছেন।
কিন্তু গডকড়ী শিবিরের যুক্তি, সভাপতি হিসেবে দলের জয় বা হারের দায় থাকলেও রাজ্য নেতাদের মধ্যে কোন্দল অন্যতম বড় কারণ। ফলে শুধু গডকড়ীর ঘাড়ে গোটা দায় চাপিয়ে দেওয়া যায় না। সভাপতি চাইলেও অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি নিছক গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে। সভাপতি হওয়ার পরে গডকড়ী সেই কোন্দল অনেকটাই প্রশমিত করেছেন। কিন্তু, দীর্ঘদিনের ঘুণ ধরা দলকে রাতারাতি বদলানো সম্ভব নয়। বিরোধী শিবিরের এক নেতার পাল্টা বক্তব্য, “দলের ভাবমূর্তির পরোয়া না করেই সভাপতি অনেক সিদ্ধান্ত একা নিয়েছেন।” তাঁর বক্তব্য,“ সেই সময়ে সভাপতির দাবি ছিল, একশোর বেশি আসন উত্তরপ্রদেশে নিজেদের ঝুলিতে পুরতে পারবে বিজেপি।” বিরোধী শিবিরের দাবি, ভোটের ফল বেরনোর একদিন আগেও গডকড়ী এই তত্ত্ব দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এখন তাঁর যাবতীয় দাবির ফানুস ফেটে গিয়েছে। |