উনত্রিশ দিন পর মাওবাদীদের কবল থেকে মুক্তি পেলেন ইতালীয় নাগরিক পাওলো বোসুস্কো। ৫৪ বছরের বোসুস্কোকে আজ মাওবাদীরা তাদের মধ্যস্থতাকারী দণ্ডপাণি মহান্তি এবং কয়েক জন সাংবাদিকের হাতে তুলে দেয়। সরকারি সূত্রের খবর, আদিবাসী অধ্যুষিত কন্ধমাল জেলায় এই হস্তান্তর হয়। মুক্তির পর বোসুস্কো বলেন, “এই অভিজ্ঞতা সারা জীবনেও ভুলব না।” তাঁর মুক্তির জন্য আজ ভারত ও ইতালির আধিকারিকদের ধন্যবাদ জানিয়েছে ইতালি। অপহৃত বিজেডি বিধায়ক ঝিনা হিকাকার মুক্তি নিয়ে অবশ্য এখনও কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি।
১৪ মার্চ দারিংবাড়ির জঙ্গল থেকে অপহরণ করা হয় পুরীর পর্যটন ব্যবসায়ী বোসুস্কো ও তাঁর সঙ্গী ক্লদিও কোলাঞ্জেলোকে। ‘সৌহার্দ্যমূলক আচরণ’ হিসেবে ২৫ মার্চ ক্লদিওকে মুক্তি দিলেও বোসুস্কোকে ছাড়তে বেশ কয়েক দফা দাবিদাওয়া পেশ করে মাওবাদীরা। যার মধ্যে ছিল মাওবাদী নেতা সব্যসাচী পণ্ডার স্ত্রী শুভশ্রী ওরফে মিলি-সহ ৭ মাওবাদী বন্দির মুক্তি। দু’দিন আগে গুনপুরের এক আদালত মুক্তি দেয় শুভশ্রীকে। ২০০৩-এ এক সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। আরও পাঁচ বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার দাবি মেনে নেয় ওড়িশা সরকার। ৭ এপ্রিল তারা বিবৃতি দিয়ে জানায়, মানা হবে মাওবাদীদের পেশ করা ১৩ দফা দাবিও। অপহৃত ইতালীয়ের মুক্তির ইঙ্গিত মিলেছিল তখনই। |
মুক্তির পর ভুবনেশ্বরে সরকারি অতিথিশালায় আনা হয় বোসুস্কোকে। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন ইতালীয় রাষ্ট্রদূত ও কনসাল জেনারেল। ২২ বছর ওড়িশায় থাকার স্মৃতি আউড়ে তাঁর মন্তব্য, “আমার কাজ শেষ। এ বার ভারত ছাড়ার পালা। ওড়িশার মানুষদের থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি তার জন্য ধন্যবাদ।” সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে পাওলো জানান মাওবাদী শিবিরে থাকার অভিজ্ঞতাও। তাঁর কথায়, “ওঁরা মানুষগুলো খারাপ নন। ধরা পড়ার ঝুঁকি নিয়েও শহরের বাজার থেকে আমার জন্য ফল কিনে আনতেন ওঁরা।” এই অভিজ্ঞতা একটি বই আকারে প্রকাশ করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। ফেরার সময় মাওবাদী নেতা সব্যসাচী পণ্ডার সঙ্গে করমর্দনের স্মৃতিও উজ্জ্বল সদ্য মুক্তি পাওয়া বিদেশির মনে। কিন্তু রোগা হয়ে গিয়েছেন কেন? বোসুস্কোর জবাব, “মাওবাদীরা সাধ্যমতো খাবার দিয়েছে। তবে আমিই খাওয়ার মতো অবস্থায় ছিলাম না। তা ছাড়া দু’বার ম্যালেরিয়াও হয়েছিল।”
বোসুস্কো মুক্তি পেলেও বিধায়ক ঝিনা হিকাকার মুক্তি নিয়ে চাপানউতোর জারি রয়েছে রাজ্য সরকার ও মাওবাদীদের মধ্যে। হিকাকার মুক্তির বিনিময়ে ৩০ বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার দাবিতে এখনও অনড় মাওবাদীরা। গত রাতে সরকারকে এক চিঠিতে তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তাদের দাবি মানতে অযথা দেরি করলে হিকাকার ‘ভাগ্যনির্ধারণ’ করতে বাধ্য হবে তারা। সরকারের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, বন্দিদের মুক্তি দিতে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনেই এগোনো হবে। হিকাকার স্ত্রী কৌশল্যা আজ ফের অপহরণকারীদের অনুরোধ করেন, তাঁর স্বামীকে অক্ষত অবস্থায় মুক্তি দেওয়া হোক। |