গোধরা পরবর্তী দাঙ্গায় সুপ্রিম কোর্ট গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) ক্লিনচিট মিলেছে দু’দিন আগেই। তাতেই ‘উজ্জীবিত’ নরেন্দ্র মোদী ফের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাতের অভিযোগ তুলে চিঠি পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে।
জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র, আরপিএফের হাতে পুলিশের ক্ষমতা তুলে দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাতের প্রশ্ন তুলে সরব হন মোদী। এ বার নতুন অস্ত্রে কেন্দ্রকে ঘায়েল করতে আসরে নামলেন তিনি। তা-ও আগামী সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের ঠিক আগে। বৈঠকে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি সুকৌশলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাতের বিষয়টিও তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
চিঠিতে মোদী জানান, চলতি বাজেটে শহরের ক্ষেত্রে ৫০ লক্ষ বা তার বেশি ও বাকি এলাকায় কুড়ি লক্ষ টাকা দামের সম্পত্তি কেনাবেচায় ১% কর আয়ের উৎসমূল (টিডিএস) থেকে কেটে নেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে কেন্দ্র এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে। এক, রাজস্ব বাড়ানো। দুই, কর সংগ্রহের মাধ্যমে সম্পত্তি কেনাবেচার ঘটনাটি সরাসরি কেন্দ্রের নজরদারিতে নিয়ে আসা। কিন্তু মোদীর অভিযোগ, সম্পত্তি কেনাবেচা ও তাতে স্ট্যাম্প ডিউটি সংগ্রহের কাজটি রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। ফলে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করেই রাজ্যের এক্তিয়ারে ফের প্রবেশ করল কেন্দ্র। টিডিএস না দিলে সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনও হবে না। ফলে সম্পত্তি কেনাবেচার সময় রাজ্য যে রাজস্ব সংগ্রহ করবে, সেই প্রক্রিয়াটিও এর ফলে দীর্ঘায়িত হয়ে যাবে। এতে আমজনতার হেনস্থা তো বাড়বেই, রাজস্ব সংগ্রহের প্রক্রিয়াটিও প্রতিটি ক্ষেত্রে দেরি হয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে মোদীর দাবি, “এই প্রস্তাব মানুষের স্বার্থ, রাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। অবিলম্বে এই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে বাজেটের এই প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করুন।” মোদীর পাঠানো চিঠিটি নিয়ে দিল্লিতে বিজেপি নেতৃত্বও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তেড়েফুড়ে নেমেছেন। দলীয় সদর দফতরে আজ সাংবাদিক বৈঠক করেও একই দাবি জানান বিজেপি নেতারা। বিজেপি শাসিত বাকি রাজ্যগুলিও যাতে এই বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের উপরে চাপ বাড়ায়, তার জন্য সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এনডিএ ও তার বাইরে ‘বন্ধু’ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন বিজেপি নেতারা, যাতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ধারাবাহিক আক্রমণের বিষয়ে একজোট হয়ে কংগ্রেস-বিরোধিতা করা যায়।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, গোধরা কলঙ্ক মুছে দাপট বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছেন মোদী। ফলে নানা বিষয়ে তিনি ভবিষ্যতে আক্রমণাত্মক মনোভাব নেবেন। মোদীর উত্থাপিত বিষয়গুলিকে দলের পক্ষে উপেক্ষা করাও সম্ভব নয়। ইউপিএর শরিকরাও সরকারের নানা কাজে অসন্তুষ্ট। মমতার মতো কেন্দ্রের শরিক এনসিপির নেতা শরদ পওয়ারও কেন্দ্রের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এখন সকলকে একজোট করে কেন্দ্রকে দুর্বল করাই বিজেপির লক্ষ্য। বিজেপির মুখপাত্র নির্মলা সীতারামণ বলেন, “সরকারের নীতি যেভাবে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে, তাতে শরিকরাও আপত্তি জানাতে শুরু করেছে। অ-কংগ্রেসি দলগুলিকে নিয়ে সরকারের উপর চাপ বাড়িয়ে যাব।”
কংগ্রেস বিষয়টি লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করছে। দলের মুখপাত্র রশিদ অলভি শরদ পওয়ারের প্রসঙ্গে বলেন, “এটি মন্ত্রিসভার অভ্যন্তরীণ বিষয়। এক মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখছেন, এর মধ্যে রাজনীতি নেই।” তবে ঘরোয়া স্তরে কংগ্রেস নেতারা কবুল করছেন, সরকার দুর্বল হলে পওয়ার এ ভাবে নানা অছিলায় আক্রমণের সুযোগ খোঁজেন। |