সংরক্ষণে কাজ হবে কি, সংশয় বহু শিক্ষাবিদের
বেসরকারি স্কুলগুলিতেও ২৫ শতাংশ আসনে ফি ছাড়া ছাত্র ভর্তি করতে হবে বলে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, নীতিগত ভাবে সমর্থন করলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অধ্যক্ষ-অধ্যক্ষাদের একাংশ। তাঁদের মতে, এর জেরে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির পড়ুয়ারা বাস্তবিকই কতখানি উপকৃত হবে, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ রয়েছে।
অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী এ দিন বলেন, ‘‘দর্শন ও সমাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে এই রায় নিঃসন্দেহে খুবই ভাল। কিন্তু যে পড়ুয়ারা কোনও নামী বেসরকারি স্কুলে ভর্তি হবে আর যারা সাধারণ স্কুলে পড়বে, তাদের মধ্যে তো বৈষম্য থেকেই যাবে। সরকারি এবং সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলির মানোন্নয়নের কথা সরকার ভাববে কি?” রাজ্যের স্কুলশিক্ষা সচিব বিক্রম সেন এ দিন এই রায়ের প্রেক্ষিতে বলেন, “২০১১ সালেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে স্কুলগুলিকে ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টে মামলার দোহাই দিয়ে যারা তা করেনি, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কড়া ব্যবস্থা নিতে পারে।”
শিক্ষার অধিকার আইন কার্যকর হওয়ার পরেই অধ্যক্ষদের একটা বড় অংশ প্রশ্ন তুলেছিলেন, এ ভাবে পড়াশোনার মানোন্নয়ন কতটা সম্ভব তা নিয়ে। তাঁদের মতে, সমাজে যে বৈষম্য রয়েছে, ক্লাসের মধ্যেও তা ঢুকে পড়বে। একটি আইসিএসি স্কুলের অধ্যক্ষ বলেন, “টিফিন বাক্স, স্কুলব্যাগ, পেন্সিল বাক্সের মতো সাধারণ জিনিস দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হবে। বেসরকারি স্কুলগুলিতে মূলত উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়তে আসে। সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির কিছু ছেলেমেয়ে যদি তাদের সঙ্গে পড়তে আসার সুযোগ পায়ও, তা হলেও তো তারা সমস্যায় পড়বে। হীনমন্যতায় ভুগবে।” স্কুলের বাইরে বাড়িতে এদের পড়া দেখিয়ে দেবে কে, কী করে এরা নিজেদের তৈরি করবে তা নিয়েও দরিদ্র ঘরের ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের অসুবিধা হবে বলে মনে করছেন অধ্যক্ষেরা।
পাশাপাশি, বেসরকারি স্কুলে ক্লাস-পিছু ২৫ শতাংশ আসনে পড়ুয়ারা নিখরচায় বা সামান্য সরকারি ভর্তুকিতে পড়লে, ক্লাসের অন্য ছাত্রদের শিক্ষার খরচ অনেকটাই বেড়ে যাবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী যে সব ছাত্রছাত্রী ফি ছাড়াই পড়াশোনা করবে, তাদের জন্য বেসরকারি স্কুলগুলিকে অর্থসাহায্য করতে হবে রাজ্য সরকারকে। রাজ্যের স্কুলশিক্ষা সচিব বিক্রম সেন এ দিন বলেন, “ছাত্র পিছু বছরে প্রায় ছ’ হাজার টাকা বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্কুলগুলি জেলা পরিদর্শক মারফত এই অনুদানের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাতে পারবে।” সরকারি এই বরাদ্দ অবশ্য বেসরকারি স্কুলগুলির ছাত্রপিছু খরচের তুলনায় অতি সামান্য। তাই ছাত্রছাত্রীর একাংশের ফি মকুব করা হলে তার দায় আসলে অন্য ছাত্রছাত্রীদের উপরেই পড়বে। সেন্ট্রাল মডার্ন স্কুলের অধ্যক্ষ নবারুণ দে বলেন, “এই ব্যবস্থা শুরু হলে বাকি ৭৫ শতাংশের ফি এক লাফে ১২-১৩ শতাংশ বেড়ে যাবে।” সাউথ পয়েন্ট স্কুলের তরফে কৃষ্ণ দামানি বলেন, “এখন আমাদের স্কুলে ছাত্রপিছু গড়ে ১৮ হাজার টাকা ফি লাগে বছরে। সরকার যদি ছ’হাজার টাকা দেয়, তা হলে বাকি ১২ হাজার টাকা অন্যদের থেকে নিতে হবে। এতে তাদের শিক্ষার খরচ কিন্তু বাড়বে।”
কেন্দ্রীয় আইন কার্যকর হলে স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁদের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে, এই প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টে মামলার আবেদন করেছিল বেসরকারি স্কুলগুলির কয়েকটি সংগঠন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল কলকাতার লা মার্টিনিয়ার স্কুল। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় অনুযায়ী, ২৫ শতাংশ আসনে ফি ছাড়া ছাত্র ভর্তি করতে হবে না এই স্কুলকে। কারণ এটি সরকারি সাহায্য ছাড়াই পরিচালিত একটি বেসরকারি সংখ্যালঘু স্কুল। স্কুলের পরিচালন সমিতির সচিব সুপ্রিয় ধর এ দিন বলেন, “আমাদের উপরে ওই আইন কার্যকর না-হওয়ায় আমরা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল ব্যবস্থাও বজায় রাখতে পারব। এতে অন্তত আমাদের মানটা বজায় থাকবে।”
সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য পায় যে সব সংখ্যালঘু স্কুল, সেগুলিকে অবশ্য এই আইন কার্যকর করতে হবে। ওই সব স্কুলের তরফে এ নিয়ে তাই আপত্তি উঠছে। বঙ্গীয় খ্রিস্টিয় পরিষেবার সাধারণ সম্পাদক হেরোদ মল্লিক এ দিন বলেন, “সরকারের কাছ থেকে মহার্ঘভাতা পায় যে সব সংখ্যালঘু স্কুল, তাদের অনেককেই হয়তো এ বার ওই টাকা না নেওয়ার কথা ভাবতে হবে। নইলে সামান্য অর্থের বিনিময়ে স্কুলের যাবতীয় স্বাধীনতা হারাতে হবে।” কেউ কেউ আবার কিছুটা সময় দিতে চান। যেমন, মহাদেবী বিড়লা স্কুলের অধ্যক্ষা
মালিনী ভগত বলেন, “তাত্ত্বিক ভাবে এই আইন খুবই ভাল। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে সত্যিই কতটা কার্যকর বা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছেই। যার উত্তর সময়ের হাতে।”
এ দিন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথা শোনার পরে বেশ কিছু স্কুলের কর্তৃপক্ষ ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়েও দ্বিধায় পড়েছেন। সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, এই রায় বৃহস্পতিবার থেকেই কার্যকর হল। এর আগে স্কুলগুলিতে যে ভর্তি প্রক্রিয়া হয়েছে, তার উপরে এই রায়ের প্রভাব পড়বে না। এ রাজ্যের এক নামী ইংরেজি মাধ্যম বেসরকারি স্কুলের অধ্যক্ষ জানান, বহু স্কুলেই ভর্তি প্রক্রিয়া মাঝপথে। সেখানে এখন নতুন করে ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা কার্যত অসম্ভব।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.