নতুন সরকারের ‘মানবিক’ দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও ‘সীমারেখা’ অতিক্রম করলে যে বরদাস্ত করা হবে না শহর কলকাতার হকারদের তা স্মরণ করিয়ে দিলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। সেই সঙ্গে তিনি বললেন, “এতকাল বলা হত, শহরের মাত্র ৬ শতাংশ রাস্তা। আমি বলছি, দখলদারদের দাপটে তা কমে হয়েছে ৪ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বিধি অনুযায়ী, একটি শহরে ৩০ শতাংশ রাস্তা থাকা উচিত। আমাদের এখানে যা হয়েছে, তা দুর্ভাগ্যজনক।”
বৃহস্পতিবার একটি বণিকসভার অনুষ্ঠানে পরিবহণমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, রাজ্য হকার উচ্ছেদ করবে কি না। মদনবাবু বলেন, “হকার-সমস্যার ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট মানবিক মুখ দেখাচ্ছি। তবে কোথায় সীমারেখা টানা উচিত, ওঁদেরও (হকারদের) তা মাথায় রাখতে হবে। মধ্য কলকাতার বেশ কিছু এলাকায় ফুটপাথে হাঁটা যায় না। আমরা এ সব মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানাব। সব কিছু বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন।”
হকারদের ‘দখলদারি’তে যে রাস্তার পরিমাণ কমেছে, তা কার্যত কবুল করছেন সিটু নিয়ন্ত্রিত ‘কলকাতা স্ট্রিট হকার্স ইউনিয়ন’-এর সভাপতি মহম্মদ নিজামুদ্দিনও। তিনি বলেন, “মন্ত্রীর তথ্য পুরো ঠিক নয়। কিছু রাস্তা বেড়েছে। তবে আরও বাড়া উচিত।”
রাজ্যের বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হকার উচ্ছেদের বিরোধিতা করে এসেছেন বরাবর। গড়িয়াহাটে ‘অপারেশন সানশাইন’-এর পরে ফুটপাথে বসে আন্দোলনও করেন তিনি। হকার তুলতে টালবাহানা করেছে বামফ্রন্টও। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে অবশ্য পরিস্থিতি বুঝে বিভিন্ন জায়গায় হকার বসায় রাশ টেনেছে।
ওই বণিকসভার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট দীপক জালান এ দিন মন্ত্রীকে বলেন, “ফুটপাথ হকারে ভরে যাচ্ছে। এমনকী, সব্জি-বিক্রেতারাও রাস্তায় বসতে শুরু করেছেন। এ সবের জন্য দুর্ঘটনাও ঘটছে। রাজ্য সরকার কী করছে?” মদনবাবু বলেন, “চেষ্টা করছি। সবে ১০ মাস হল এসেছি। সময় দিন। আমাদের হাতে তো আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ নেই!”
হকার উচ্ছেদের নির্দিষ্ট সময়সীমার ব্যাপারে পরিবহণমন্ত্রী কোনও আশ্বাস দিতে না পারলেও সাবলীল যান-চলাচলের জন্য রাস্তার পরিমাণ বাড়াতে বণিকসভার তরফে এ দিন পরিবহণমন্ত্রীর কাছে দেওয়া সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আশ্বাস দেন।
এ দিন হকার নিয়ে বিশেষ কথা না বাড়ালেও শহরকে বন্ধ ও অবরোধমুক্ত করতে সরকার কড়া ব্যবস্থা নেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন মন্ত্রী। যখন-তখন বন্ধ, অবরোধ রোধে সরকারকে কড়া ব্যবস্থা নিতে এ দিন লিখিত আর্জিতে বণিকসভা জানায়, রাজনৈতিক দলগুলো যত্রতত্র অবরোধ করে যাত্রীদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে।
বণিকসভার প্রস্তাব: রাস্তা অবরোধ কর্মসূচিকে ‘বেআইনি’ বলে ঘোষণা করুক রাজ্য সরকার। এর প্রেক্ষিতে পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “এ ব্যাপারে যতটা কড়া হওয়া সম্ভব, আমরা হব। আমাদের দলের কেউ বন্ধ-অবরোধে সামিল হলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে দল থেকে বার করে দেওয়া হবে।”
কোনও অবস্থায় নাগরিক জীবনে ব্যাঘ্যাত ঘটতে দেওয়া হবে না বলে এ দিন প্রতিশ্রুতি দেন মন্ত্রী। তাঁর কথায়, “আমরা আগে কিছু বন্ধ-অবরোধ করেছি। কিন্তু অনেক দিন ধরেই আমাদের নেত্রী এ ব্যাপারে দলের সুস্পষ্ট অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।” |