প্রতিশ্রুত পরিকাঠামো দিতে রাজ্যকে দু’সপ্তাহ সময় দিল বিগ অ্যানিমেশন। প্রায় দেড় বছর আগে চুক্তি করলেও, এখনও কাজ শুরু করার মতো জায়গাই দিয়ে উঠতে পারেনি রাজ্য সরকার। তাই তাদের আর সময় দিতে নারাজ অনিল অম্বানী গোষ্ঠীর সংস্থাটি।
গত বছরেই রাজ্য থেকে পাততাড়ি গুটিয়েছে ‘ছোটা ভিম’ ও ‘কৃষ্ণ বলরাম’-এর মতো জনপ্রিয় কার্টুন ফিল্ম প্রস্তুতকারক সংস্থা গ্রিনগোল্ড। এ বার সেই একই পথে হাঁটছে স্টিভেন স্পিলবার্গের সংস্থায় টাকা ঢালা অনিল অম্বানী গোষ্ঠীর সংস্থা। অভিযোগ সেই একই। সরকারি সংস্থা ওয়েবেল
প্রতিশ্রুতি মতো পরিকাঠামোই দিয়ে উঠতে পারেনি। কেন? এই প্রশ্নে অবশ্য মুখ খুলতে চায়নি ওয়েবেল।
রাজ্যে অ্যানিমেশন শিল্পে বড় লগ্নি টানার চেষ্টা বহু দিন ধরেই চালাচ্ছিল সরকার। তবে বাদ সাধছিল দক্ষ কর্মীর অভাব। প্রশিক্ষণ ও স্টুডিও, দু’টি ক্ষেত্রেই অনিল গোষ্ঠীকে রাজ্যে টানতে ২০১০ থেকেই আলোচনা চলছিল। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের সংস্থা ওয়েবেল-এর সঙ্গে চুক্তিও সই করে বিগ অ্যানিমেশন। কিন্তু নির্বাচনের দামামা বেজে যাওয়ায় আটকে যায় পরবর্তী কাজ।
চুক্তি অনুযায়ী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য পরিকাঠামো দেবে রাজ্য সরকার। কাজের জায়গা, কম্পিউটার, ক্যামেরা-সহ বিভিন্ন হার্ডওয়্যার ও সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার দেবে ওয়েবেল। এ বাবদ রাজ্য সরকারের লগ্নির পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি টাকা। স্টেট ডেটা সেন্টার মণিভাণ্ডারে ২০১১ সালে ১০ হাজার বর্গ ফুট জায়গা চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু নির্বাচনের জন্য সরকারি কাজকর্ম থমকে যাওয়ায় গোটা বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।
নয়া সরকার গঠনের পরে পুরনো টেন্ডার কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। ফলে এত দিন কাজ শুরু করার জায়গাই পায়নি সংস্থা। গত বছর জুন মাসের শেষে তথ্যপ্রযুক্তি তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সংশ্লিষ্ট সচিবের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ। এর পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। কিন্তু তার পরে আর কাজ এগোয়নি। সংস্থার প্রধান আশিস কুলকার্নি বলেন, “এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তার মধ্যে পরিকাঠামো তৈরি না হলে বিকল্প ব্যবস্থা করব আমরা। আপাতত মধ্য কলকাতার একটি জায়গায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু সেটা অস্থায়ী ব্যবস্থা।”
অ্যানিমেশন জগতে দেশের মধ্যে হায়দরাবাদ, মুম্বই ও চেন্নাই জায়গা করে নিয়েছে। কলকাতার স্থান এখনও তালিকার নীচেই। যদিও সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, কল্পনা শক্তি ও সৃষ্টশীল বলে পরিচিত বাঙালি কর্মীর চাহিদা রয়েছে এই দুনিয়ায়। কিন্তু প্রশিক্ষণের অভাবে চাহিদা থাকলেও জোগান নেই। এই ছবিটা বদলে দিতে রাজ্য সরকার টুন্জ অ্যানিমেশনের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেছিল। পরে তা ডি কিউ নামে একটি সংস্থাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ডি কিউ প্রশিক্ষণের পাশাপাশি চালু করেছে তাদের স্টুডিও। বর্তমানে ৪০০-র বেশি কর্মী সেখানে কাজ করেন। এই মডেলেই উৎসাহী হয়ে রিলায়্যান্সের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার পরিকল্পনা নেয় রাজ্য সরকার।
বিশেষজ্ঞদের মতে ২০১২ সালে অ্যানিমেশনের আন্তর্জাতিক বাজারের আয়তন দাঁড়াবে ১০ হাজার কোটি ডলার। আর ভারতে ২২ শতাংশ হারে বাড়তে থাকা এই শিল্পের বাজার দাঁড়াবে ১০০ কোটি ডলার। প্রয়োজন হবে প্রায় ৪ লক্ষ কর্মীর। আর এই কর্মসংস্থানের দিকে চোখ রেখেই প্রাথমিক ভাবে বেশি টাকা ঢেলেও বিভিন্ন বড় সংস্থাকে এখানে নিয়ে আসতে মরিয়া রাজ্য সরকার। |