রাজ্য সরকারের সঙ্গে জমির ‘লিজ চুক্তি’ হওয়ার তিন বছরের মধ্যে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে তিন শিল্পগোষ্ঠীকে ইস্পাত প্রকল্প গড়তে হবে বলে জানিয়ে দিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ায় তথ্য-প্রযুক্তি হাবের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে এসে পার্থবাবু বলেন, “আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে ৯৯টি শিল্পসংস্থার সঙ্গে জমির ‘লিজ চুক্তি’ সম্পন্ন করবে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম।”
প্রশ্ন করা হয়, রঘুনাথপুরে জয় বালাজি, শ্যাম স্টিল ও আধুনিক কর্পোরেশনএই তিন শিল্পসংস্থা এখনও প্রকল্প গড়তে পারেনি। এ ক্ষেত্রে সরকার কী করছে? শিল্পমন্ত্রীর বক্তব্য, “ওই তিন সংস্থাকে বলা হয়েছে, চুক্তির ৩ বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে।”
রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, যে ৯৯টি সংস্থার সঙ্গে ‘লিজ চুক্তি’ হওয়ার কথা, সেগুলির মধ্যে এই তিন শিল্পসংস্থাও রয়েছে। পার্থবাবু জানান, ওই সংস্থাগুলিকে জানাতে বলা হয়েছে, তারা কী ধরনের প্রকল্প করবে এবং ওই প্রকল্পে দক্ষ, অদক্ষ শ্রমিক কত সংখ্যায় নিয়োগ করা হবে। শিল্পমন্ত্রীর কথায়, “সংস্থাগুলির প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার স্থানীয় বেকার যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী ‘অনলাইন এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক’ তৈরি করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের নাম নথিভুক্ত করে তাঁদের ওই প্রকল্পে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।” |
শিল্পমহল সূত্রের খবর, খসড়া ‘লিজ চুক্তি’ ওই তিনটি ইস্পাত সংস্থা-সহ একাধিক সংস্থার কাছে ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে। চুক্তির আইনানুগ দিকগুলি খতিয়ে দেখার জন্য সংস্থাগুলি আইন-বিশেষজ্ঞদের পরমার্শ নিচ্ছে। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের নতুনডি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ইস্পাত, সিমেন্ট ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়বে জয় বালাজি গোষ্ঠী। ২০০৭-এর নভেম্বরে প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। জয় বালাজি-র মোট জমির চাহিদা প্রায় ৩৬০০ একর। এখন পর্যন্ত শিল্পোন্নয়ন নিগম তাদের দিয়েছে ১০৯৪ একর। তাতেও কারখানা গড়ার কাজ কার্যত হয়নি বললেই চলে। সেই নিয়ে এলাকায় ক্ষোভও রয়েছে। অধিগৃহীত জমি ফেরতের দাবি তুলেছে স্থানীয় কৃষিজমি রক্ষা কমিটি। রঘুনাথপুরে শ্যাম স্টিল ও আধুনিক গোষ্ঠীর প্রস্তাবিত ইস্পাত প্রকল্পও জমি-জটে আটকে রয়েছে। নিগম সূত্রে জানা যাচ্ছে, আধুনিকের জমির চাহিদা প্রায় ২৩০০ একর থাকলেও এখনও তাদের নিগম দিয়েছে ৫০৫ একর। শ্যাম স্টিল ১১০০ একরের মধ্যে হাতে পেয়েছে ৬০০ একর। শিল্পমহলের বক্তব্য, ‘লিজ চুক্তি’ না হওয়া পর্যন্ত জমিতে পাঁচিল দেওয়া বা মাটি সমান করার মতো ছোটখাটো কাজ ছাড়া কার্যত আর কিছু করা যায় না।
ওই চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ব্যাঙ্ক শিল্পসংস্থাকে ঋণও দিতে চায় না। আর ঋণ না পেলে কারখানার যন্ত্রপাতির বরাত বা প্রয়োজনীয় বড় নির্মাণকাজ করাও কার্যত অসম্ভব। শিল্পমহলের একাংশের আরও দাবি, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে বর্তমান শাসকদলের বিরোধিতার জেরে এই ‘লিজ চুক্তি’ ও জমি অধিগ্রহণ-সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ থমকে যাওয়ায় গোটা প্রক্রিয়াটাই বিশ বাঁও জলে পড়ে যায়। জমির পাশাপাশি লৌহ আকরিক, জল বা কয়লার ব্লকও ইস্পাত প্রকল্পের ক্ষেত্রে সমান গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলির জটও পুরো কাটেনি বলে দাবি সংস্থাগুলির। তবে তাদের আশা, দ্রুত প্রকল্প গড়ার স্বার্থে এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার সহায়তা করবে। এ দিন পুরুলিয়া শহরের উপকন্ঠে রাঘবপুরে প্রস্তাবিত তথ্য-প্রযুক্তি হাবের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন পার্থবাবু। এক একর জমিতে এই হাব গড়বে ‘ওয়েবেল’।
উপস্থিত ছিলেন কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতরের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। ঘটনা হল, দুর্গাপুরে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে চালু হওয়া ‘তথ্য-প্রযুক্তি পার্ক’-এর জায়গাতেই নতুন করে সম্প্রতি ‘তথ্য-প্রযুক্তি হাব’-এর শিলান্যাস করেছেন শিল্পমন্ত্রী। বাম-আমলেই কাজ শুরু করা একটি সংস্থাকে বাদ দিলে আরও কোনও সংস্থা এখনও সেখানে আসেনি বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। এ বার সেই দুর্গাপুরের কাছেই বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় তথ্য-প্রযুক্তি হাবের শিলান্যাস হবে আজ, শুক্রবার। সেখানে শিল্পমন্ত্রী ছাড়াও থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরুলিয়ার তথ্য-প্রযুক্তি হাবে কোন কোন সংস্থা আসবে? প্রশ্নের জবাবে পার্থবাবু বলেন “বেশ কিছু সংস্থার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত কিছু হয়নি। আগে হাব গড়ে উঠুক।” পর্যায়ক্রমে আসানসোল, খড়্গপুর, হলদিয়া, শিলিগুড়ি, কল্যাণী, বিষ্ণুপুর ও ফলতাতেও তথ্য-প্রযুক্তি হাব হবে বলেও শিল্প দফতর সূত্রের খবর। |