|
|
|
|
বন্ধের মুখে সরকারি ডেয়ারি |
সুব্রত সীট • দুর্গাপুর |
উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে বছরখানেক আগেই। হরিণঘাটা থেকে দুধ এনে সরবরাহের কাজ চালানো হচ্ছিল। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সেই কাজও বন্ধ করে দেওয়া হতে চলছে। দুর্গাপুর স্টেট ডেয়ারি কর্তৃপক্ষের ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আজ, শুক্রবারই শেষ দুধ সরবরাহের কাজ হবে সেখান থেকে। এমন নির্দেশিকার জেরে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন এই ডেয়ারির কর্মীরা। ডেয়ারি পুনরুজ্জীবনে কর্তৃপক্ষের উপযুক্ত উদ্যোগের অভাবেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। ডেয়ারি কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মাদার ডেয়ারি বাদে রাজ্যের অন্য চারটি ডেয়ারিই লোকসানের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। হরিণঘাটা, কৃষ্ণনগর, বর্ধমান ও দুর্গাপুর, এই চার জায়গাতেই মান্ধাতার আমলের যন্ত্রপাতি ও অতিরিক্ত কর্মী সংখ্যাই এমন পরিস্থিতির মূল কারণ বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। ২০০৫ সালের জুনে তৎকালীন প্রাণিসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী আনিসুর রহমান দুর্গাপুরে ডেয়ারি পরিদর্শনে আসেন। তিনি তখন জানিয়েছিলেন, ডেয়ারিগুলি যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সে ব্যাপারে সরকার চিন্তাভাবনা করছে। এ জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হবে। পরিচালন সমিতি নতুন করে গড়া, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, বিপণন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং প্রয়োজনে কর্মী সংকোচন করা হবে বলে আশ্বাস দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। দুর্গাপুর ডেয়ারির কর্মীদের অবশ্য দাবি, মন্ত্রীর সেই আশ্বাস বাস্তবায়িত হয়নি। |
|
নিজস্ব চিত্র। |
এই ডেয়ারি থেকে দৈনিক প্রায় হাজার লিটার দুধ পাঠানো হত বিভিন্ন হাসপাতালে। ২০১১ সালের মে মাসে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত হরিণঘাটা থেকে দুধ এনে তা হাসপাতালগুলিতে সরবরাহ করার ব্যবস্থা হয়। তখন থেকে দুর্গাপুরের এই ডেয়ারি মূলত দুধ সরবরাহকারীর কাজ করে চলেছে।
ডেয়ারির কর্মীরা জানান, রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে তাঁরা প্রাণিসম্পদ বিকাশ মন্ত্রকে যোগাযোগ করে ডেয়ারি পুনরুজ্জীবনের আর্জি জানান। সম্প্রতি দফতরের নতুন মন্ত্রী নুরে আলম চৌধুরী দুর্গাপুর স্টেট ডেয়ারি পরিদর্শনে আসেন। ডেয়ারি ঘুরে দেখার পাশাপাশি এখানকার কর্মী-আধিকারিকদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। পরে মন্ত্রী বলেন, “এই ডেয়ারির ঘুরে দাঁড়ানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।” মন্ত্রীর এমন কথায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন কর্মীরা। কিন্তু কয়েক দিন আগে ডেয়ারি কর্তৃপক্ষের এক নতুন নির্দেশিকায় এখন তাঁরা কাজ হারানোর আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছেন। ডেয়ারির কর্মীরা জানান, সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, ৯ এপ্রিল থেকে আর দুধ সরবরাহের কাজ করা হবে না। এমন নির্দেশিকা দেখে চিন্তায় পড়ে যান তাঁরা। তাঁদের দাবি, কর্তৃপক্ষ ডেয়ারি বেসরকারিকরণ করতে চাইছেন। ফলে তাঁদের কাজ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ডেয়ারির অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার ইন্দ্রনীল মহান্তির কাছে বিক্ষোভও দেখান। শেষ পর্যন্ত কর্মীদের চাপে দুধ সরবরাহের সময়সীমা আপাতত ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ডেয়ারির কর্মী অজয় দত্তের অভিযোগ, “উৎপাদন ফের শুরু করার জন্য বিকল যন্ত্রপাতি সারানো প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সে ব্যাপারে উদ্যোগী হননি। তার জেরেই এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে।” অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার ইন্দ্রনীলবাবুর আশ্বাস, পুরো বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হবে। |
|
|
|
|
|