|
|
|
|
অনুমতি ছাড়াই দাপাচ্ছে অটো, প্রশাসন নির্বিকার |
নীলোৎপল রায়চৌধুরী • আসানসোল |
পুর এলাকায় যাত্রী পরিবহণের অনুমোদনই নেই। অথচ আসানসোল শহরে বেআইনি ভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বারোশোরও বেশি অটোরিকশা।
আসানসোলের মহকুমাশাসক সন্দীপ দত্তের দাবি, “এই অটোগুলির বেশির ভাগেরই রেজিস্ট্রেশন পুরুলিয়ার। পারমিট ছাড়াই বেআইনি ভাবে শহরে চলাচল করছে এরা। এদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।” যদিও সেই অটোগুলিকেই প্রকাশ্যে ‘পুলকার’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পুলিশও ফরমান জারি করেছে, তাতে চার জনের বেশি ছাত্রছাত্রী নেওয়া যাবে না। তবে মহকুমাশাসক সে ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল পুর এলাকায় মাত্র ৫টি অটো এবং পুর এলাকার বাইরে মাত্র ৭৫টি অটোর অনুমোদন রয়েছে। আসানসোল মিনি বাস অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, বেআইনি অটোর দাপটে বাস পরিবহণ শিল্প রুগ্ণ হতে বসেছে। মহকুমা হাসপাতাল থেকে হাটন রোড মোড়, হাটন রোড মোড় থেকে কোর্ট স্ট্যান্ড, কোর্ট থেকে আসানসোল স্টেশন, বার্নপুর ত্রিবেণী মোড় থেকে বিএনআর, কল্যাণীপুর হাউজিং থেকে বিএনআর-সহ ১৫টি রুটে মহকুমা জুড়ে তিন হাজারের বেশি বেআইনি অটো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রশাসনকে জানিয়েও প্রতিকার হয়নি। |
|
নিজস্ব চিত্র। |
২০০৫ সালের ১৩ অগস্ট মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে হাইকোর্টে যাত্রী পরিবহণ সংক্রান্ত ‘রিট পিটিশন’ দাখিল করা হয়েছিল। তার সঙ্গে সমীক্ষা রিপোর্টও জমা দেওয়া হয়। তাতে জানানো হয়, পুর এলাকায় ৪৫০টি মিনিবাস ও ৩১৭টি বড় বাস চলাচল করে। দৈনিক ১৯০০ ‘ট্রিপ’ দেয় মিনিবাসগুলি। রাস্তা ও যাত্রী সংখ্যার আনুপাতিক হিসেবে পরিবহণ বিধি অনুযায়ী এর বেশি যাত্রী পরিবহণের অনুমতি দেওয়া যায় না। ২০০৬ সালের জুনে হাইকোর্ট জানায়, ওই অ্যাসোসিয়েশনের দাবি যথার্থ। ওই বছর ২০ অক্টোবর আদালতের তরফে রাজ্য সরকারকে ওই মর্মে একটি নির্দেশও দেওয়া হয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্য পরিবহণ দফতর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেয়, পুর এলাকায় যাত্রী পরিবহণে আর কোনও অনুমোদন দেওয়া যাবে না। পরিবহণ দফতরের তৎকালীন সচিব সুমন্ত্র চৌধুরী সেই বিজ্ঞপ্তিতে সই করেছিলেন।
আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত আসানসোল মহকুমা মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন অবশ্য জানায়, ২০০৮-এর অগস্টে সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী, তৎকালীন মুখ্য জেলা পরিবহণ আধিকারিক ও জেলাশাসক মনীশ জৈন আসানসোল রবীন্দ্র ভবনে সরকারি প্রকল্পে ঋণ নিয়ে সিএনজি অটো কেনা ২০০ জনের হাতে অটোর চাবি তুলে দেন। ২০০৯ সালে সুমন্ত্রবাবুই তৎকালীন জেলাশাসক মনীশ জৈনকে একটি চিঠিতে জানান, ঋণ নেওয়া ২০০ অটোমালিককে অনুমোদন দেওয়ার জন্য ২০০৮ সালের ৪ অগস্ট এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক যাতে বিষয়টি দেখেন, তার জন্য তাঁকে অনুরোধ করা হয়।
মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়ার অভিযোগ, ওই সময়ে রাজস্ব বাবদ ২৫২০ টাকা করে পরিবহণ দফতরে জমা দেওয়া হলেও তাঁরা কেউই এখনও ‘পারমিট’ পাননি। সে টাকাও ফেরত পাননি তাঁরা। রাজুবাবুর অভিযোগ, “পূর্বতন রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করলেও অটোর সংখ্যা কমেনি। পুরুলিয়া থেকে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে এনে অটোর সংখ্যা বেড়েছে অনেক। এখন তাতে লাগাম টানতে গেলে ওই অটো চালকেরা তাঁদের পরিবার নিয়ে পথে বসবেন। ঋণশোধও করতে পারবেন না।” রাজুবাবুর দাবি, কী ভাবে হাইকোর্টের অনুমতি ছাড়াই পরিবহণ কর্তারা ২০০ অটোকে ঋণ দিলেন বা তাদের কাছ থেকে পারমিটের টাকা জমা নিলেন, তা জানতে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
বর্তমানে আসানসোলের শশীভূষণ গড়াই রোড জি টি রোডের একটি বিকল্প রাস্তা। অনুমোদন থাকলেও যাত্রী না মেলার অজুহাতে কোনও বাস ওই রাস্তা দিয়ে চালানো হয় না। অন্য দিকে হাটন রোড থেকে কুরেশি মহল্লা বা গিরমিন্ট মোড় থেকে ভানোরা মোড় বা সেন র্যালে মোড় থেকেও কোনও বাস চলে না। রাজুবাবুদের মতে, এই সব রুটে অটোর পারমিট দিলে যাত্রীরা উপকৃত হবেন, সরকারেরও রাজস্ব বাড়বে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিরিখে ফের নতুন করে পরিবহণের অনুমোদন পেতেও তাঁরা সংগঠিত ভাবে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে তিনি তাঁরা জানিয়েছেন। কিন্তু বেআইনি অটো বা অটো-চালকদের ভবিষ্যৎ কী, সে প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। |
|
|
|
|
|