পুলিশের ‘ভুলে’ জেলবন্দি দম্পতিকে জামিনে মুক্তি দিল আদালত। সোমবার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বুনিয়াদপুর মহকুমার অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতের বিচারক দেবাশিস চৌধুরী ওই দম্পতিকে ২০০ টাকা জমার শর্তে ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তির নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ তাঁরা বালুরঘাট জেলা সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পান। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, বিচারক ওই দম্পতির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার ব্যাপারেও গঙ্গারামপুর থানার আইসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি, তরুণীর অভিযোগে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তদন্তকারী অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তকারী অফিসার কী ব্যবস্থা নিলেন সেটাও আদালতে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। ওই দম্পতির আইনজীবী অভীক সিংহ ও গৌতম সেন জানান, বিচারকের আদেশের নথি নিয়ে বালুরঘাট আদালত থেকে জেলে পৌঁছতে সন্ধে হয়ে যায়। যেহেতু সন্ধের পরে জেল থেকে বন্দিদের ছাড়া হয় না, সে জন্য মঙ্গলবার ওই দম্পতি জেল থেকে বার হবেন। তিন মাস আগে ওই তরুণী ভিন ধর্মে বিয়ে করায় তাঁর বাড়ির লোকেরা বিয়ে ভাঙার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে তরুণীর স্বামী বেসরকারি সংস্থায় চাকরি নিয়ে মুম্বইয়ে চলে যান। সম্প্রতি তিনি স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষা দিতে বাড়িতে ফিরেছিলেন। অন্যদিকে, তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা তরুণী গত শুক্রবার বাড়ি থেকে পালিয়ে স্বামীর কাছে চলে যান। এর পরেও তাঁর বাড়ির লোকেরা বিয়ে ভাঙার জন্য চাপ দেওয়ায় গত শনিবার তিনি স্বামীকে নিয়ে গঙ্গারামপুর থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, অভিযোগ জমা নেওয়া তো দূরের কথা, তদন্তকারী অফিসার ওই দম্পতিকে সারা রাত লকআপে আটকে রাখেন। এর পরে রবিবার ওই দম্পতির বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল প্রসিডিওর কোডের ৪১ ধারায় মামলা দায়ের করে আদালতে পাঠান। ছুটির দিনে আদালতে কোনও আইনজীবী না-থাকায় দম্পতির হয়ে কেউই জামিনের আবেদন না-জানানোয় বিচারক তাঁদের জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তদন্তকারী অফিসার যে ‘ভুল’ করেছেন সে কথা ইতিমধ্যেই স্বীকার করেন মহকুমা পুলিশ আধিকারিক নারায়ণ সরকার। জেলার পুলিশ সুপার চিরন্তন নাগও ঘটনার কথা জানার পরে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ সুপার বলেন, “মহকুমা পুলিশ আধিকারিককে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেব।” এদিন দম্পতির হয়ে আদালতে জামিনের আবেদন জানান দুই আইনজীবী অভীক সিংহ এবং গৌতম সেন। মামলার শুনানির সময়ে এজলাসে আইনজীবী ও কৌতুহলী জনতার ভিড় উপচে পড়ে। সরকারি আইনজীবী দেবজ্যোতি পাল জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেন। বিচারক দু’পক্ষের সওয়াল শুনে ওই দম্পতিকে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দিলে সেখানে খুশির হাওয়া ছড়িয়ে পড়ে। |