নিজস্ব সংবাদদাতা • কোচবিহার |
ভুল চিকিৎসার জেরে কিশোরের অণ্ডকোষ কেটে বাদ দেওয়ার ঘটনায় রেডিওলজিস্ট ও বেসরকারি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের মালিক পক্ষকে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিল ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। মঙ্গলবার কোচবিহার ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক বিপিন মুখোপাধ্যায় ওই রায় দিয়েছেন। বিচারক ওই রায় দিতে গিয়ে জানান, আলট্রাসোনোগ্রাফি রিপোর্ট ঠিক না-হওয়ায় ভুল চিকিৎসার জেরেই কিশোরের একটি অণ্ডকোষ বাদ দিতে হয়েছে। চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি খতিয়ে দেখার পরে বিচারক আলট্রাসোনোগ্রাফির ভুল রিপোর্টের জন্য সংশ্লিষ্ট ডায়াগনিস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষকে ৫০ হাজার, রেডিওলজিস্টকে ১ লক্ষ টাকা এবং মামলার খরচ সহ ৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রায় দেন। এক মাসের মধ্যে ওই টাকা মিটিয়ে দিতে হবে। না হলে দৈনিক ১০০ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে বলে রায়ে বলা হয়েছে। রায় শোনার পরে ওই ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের কর্ণধার কিশোর গুহ বলেছেন, “রায়ের কথা শুনেছি। আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আপাতত এর বেশি কিছু বলছি না।” ওই প্রতিষ্ঠানের রেডিওলজিস্ট বাসুদেব হালদার বিশদে মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “আমার আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনার পরে যা বলার বলব।” মাথাভাঙার জরাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ওই ১৫ বছর বয়সী কিশোরের অণ্ডকোষে ব্যথার জন্য কোচবিহার শহরের ওই বেসরকারি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে নিয়ে যান তার বাড়ির লোক। গত বছরের ২১ জুলাই রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে কিশোরের অণ্ডকোষের আলট্রাসোনোগ্রাফি করানো হয়। রেডিওলজিস্ট রিপোর্ট দেন, অণ্ডকোষে জল জমায় ব্যথা হচ্ছে। সেই মতো চিকিৎসা করলেও ব্যথা কমেনি। উল্টে বেড়ে যায়। ২৯ জুলাই তিনি ছেলেকে কোচবিহারের অন্য রোগনির্ণয় কেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে আলট্রাসোনোগ্রাফির পরে রেডিওলজিস্ট রিপোর্ট দেন, অণ্ডকোষের মধ্যেকার শক্ত অংশ কুঁচকে যাওয়ায় ব্যথা হচ্ছে। চিকিৎসকেরা এটাও জানিয়ে দেন, প্রথমাবস্থায় সঠিক চিকিৎসা না-হওয়ায় একটি অণ্ডকোষ অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। তার পরে ৩০ জুলাই কোচবিহারের একটি নার্সিংহোমে অস্ত্রোপচার করে কিশোরের একটি অণ্ডকোষ কেটে বাদ দেওয়া হয়। প্রথম ভুল রিপোর্টের জেরে সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় কিশোরের বাড়ির লোক জন ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন। ওই কিশোরের আইনজীবী সুরজিৎ দত্ত বলেন, “কিশোরের অণ্ডকোষে যে রোগ হয়েছিল সঠিক চিকিৎসা হলে তা ওষুধেই সেরে যেত। কিন্তু, ভুল রিপোর্টের জন্য কিশোরের একটি অণ্ডকোষ বাদ দিতে হয়। ভুল চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণও জমা দেওয়া হয়। আদালতের রায়ে আমরা খুশি।” পক্ষান্তরে, বেসরকারি রোগ নির্ণয় কেন্দ্র ও রেডিওলজিস্টের আইনজীবী অনিরুদ্ধ দে বলেন, “প্রথমে কিশোরের অণ্ডকোষের যা পরিস্থিতি ছিল সেটাই রিপোর্টে লেখা হয়। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।” |