ভাস্করজ্যোতি মজুমদার • মহম্মদবাজার |
পাঁচামি পাথর খাদান এলাকার শ্রমিকদের অনেকেই যক্ষ্মায় আক্রান্ত। স্বাস্থ্য দফতর শুক্রবার ও শনিবার ওই এলাকায় শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে এই তথ্য পেয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশে রাজ্যের স্বাস্থ্য সহসচিব মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে চার জনের প্রতিনিধি এলাকার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। পরে মহুয়াদেবী বলেন, “এলাকায় ঘুরে সম্ভাব্য ১৮-২০ জনের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা গিয়েছে অনেকেই যক্ষ্মায় আক্রান্ত। প্রাথমিক ভাবে একজনকে সিলিকোসিসে আক্রান্ত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে আরও কিছু পরীক্ষা করা হবে।”
পাথর খাদান ও ক্রাশার এলাকার অনেক শ্রমিক ধুলোজনিত সিলিকোসিসে আক্রান্ত বলে অভিযোগ তুলে আসছে আদিবাসী গাঁওতা। তাঁরাই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। স্বাস্থ্য দফতরের সহ সচিব মহুয়াদেবী, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ শান্তনু ঘোষ, মল্লারপুরের ব্লক মেডিক্যাল অফিসার চিন্ময়কুমার ঘোষ ও পাঁচামি এলাকার ভাঁড়কাটা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক প্রমিত গোস্বামী এলাকায় ঘুরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। তাঁরা ভাঁড়কাটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে বেশ কয়েকজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। পাঁচামির আদিবাসী গাঁওতার অফিসে গিয়েও কিছু শ্রমিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। তাঁদের মধ্যে থেকে অসুস্থ ১৮-২০ জনকে মল্লারপুরের একটি বেসরকারি প্যাথলজি সেন্টারে নিয়ে গিয়ে এক্স-রে করানো হয়। স্বাস্থ্য সহ সচিব বলেন, “হাবড়া পাহাড়ির মুকুল টুডু নামের এক যুবক সিলিকোসিসে আক্রান্ত বলে প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।”
গাঁওতা নেতা রবিন সরেন ও সুনীল সরেনদের অভিযোগ, “পাথর খাদান ও ক্রাশার শিল্প শ্রমিকদের অধিকাংশই বারো মাস শ্বাসকষ্টে ভোগেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলে গতে বাঁধা কয়েকটি পরীক্ষা করার পরে তাঁদের যক্ষ্মার চিকিৎসা করানো হয়। যক্ষ্মার জীবানু না পাওয়া গেলে কোনও রোগ নেই বলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। সিলিকোসিসে আক্রান্ত কি না সে পরীক্ষা করানো হয় না। তাঁদের মধ্যে কয়েক জনের মৃত্যুও হয়।” তাঁদের দাবি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে তাঁরা এ ব্যাপারে আর্জি জানান। পরে কমিশনের নির্দেশে ১২ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। দেখা যায়, স্থানীয় তালবাঁধ ও কেন্দ্রাপাড়া গ্রামের দু’জন সিলিকোসিসে আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে একজন মারা যান। স্বাস্থ্য সহ সচিব বলেন, “জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশে আমরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছি। গাঁওতার পক্ষ থেকে যে দু’জন সিলিকোসিসে আক্রান্ত বলে কমিশনের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে একজন আগেই মারা গিয়েছেন। অন্য জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রাথমিক ভাবে তাঁকে সিলিকোসিস আক্রান্ত বলে মনে হয়নি। তবে তাঁর আরও কিছু পরীক্ষা করা প্রয়োজন রয়েছে।” গাঁওতার দাবি, এলাকার সমস্ত শ্রমিক ও বাসিন্দার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। নাম মাত্র কয়েক জনের পরীক্ষা করলে চলবে না। একই সঙ্গে তাঁদের দাবি, সিলিকোসিসে আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া-সহ পাথর শিল্পাঞ্চলের দূষণ বন্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মল্লিক বলেন, “২০০২ সালে ওই এলাকায় সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে অনেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। বেশ কয়েকজন যক্ষ্মায় আক্রান্ত। স্বাস্থ্য দফতর আর নির্দেশ না দেওয়ায় পরবর্তীকালে সমীক্ষা করা হয়নি।” তিনি জানান, ওই এলাকায় খাদান ও ক্রাশারের ধুলো থেকেই শ্রমিক ও বাসিন্দারা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। তবে পাঁচামি মাইন অ্যান্ড ক্রাশার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজির হোসেন মল্লিকের দাবি, “৪০-৫০ বছর ধরে এখানে পাথর শিল্প চলছে। সে জন্য সিলিকোসিসে কেই মারা গেছেন বলে শুনিনি। কিছু লোক পাথর শিল্পাঞ্চল বন্ধ করে দেওয়ার জন্য নানা ভাবে ঘোঁট পাকানোর চেষ্টা করছেন।” তাঁর দাবি, “ধুলো নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” |