কাছাড়ের একটি ক্যানসার হাসপাতালে রোগীদের সুচিকিৎসার জন্য পাশে দাঁড়ালেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী ভারতীয়রা। এ জন্য আয়োজন করা হয় পাঁচ কিলোমিটারের এক বিশেষ ম্যারাথন দৌড়ের। ‘ইন্ডিয়া রান ফর হোপ’ নামে আয়োজিত ওই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন বেশ কিছু মার্কিন নাগরিকও। ওই দৌড়ের সূত্রে ওঠা অর্থের একটা বড় অংশ (৮ লক্ষ টাকা) সংগঠকরা দান করেছেন সংগঠকরা। ভবিষ্যতেও আরও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি মিলেছে।
মূলত ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের উদ্যোগে ক্যানসার আক্রান্তদের জন্য আমেরিকায় ২০০৬ সাল থেকে আয়োজিত হচ্ছে বিশেষ এক ম্যারাথন দৌড়ের। উদ্যোক্তারা এই দৌড় প্রতিযোগিতাকে ঘিরে যে অর্থ ওঠে তা সাহায্য হিসাবে দান করেন ক্যানসার নিয়ে কাজ করছে দেশ-বিদেশের এমন প্রতিষ্ঠানগুলিতে। উদ্দেশ্য, ক্যানসার রোগীদের পাশে দাঁড়ানো। ‘ইন্ডিয়া রান ফর হোপ’-এর উদ্যোক্তারা গত বছর জানতে পারেন কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালের কথা। অসমের প্রত্যন্ত কাছাড় জেলায় ক্যানসার রোগীর সংখ্যা অনেক। ওই এলাকার কিছু বিশিষ্টজন সোসাইটি গড়ে চালিয়ে যাচ্ছেন এই হাসপাতাল। ক্যানসার রোগীদের জন্য কাছাড়ে এমন কল্যাণমুখী কর্মযজ্ঞের কথা জানার পরই এ কাজে পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন ওই দৌড়ের উদ্যোক্তারা। গত বছর ৮ লক্ষ টাকা সাহায্য করেছে প্রবাসী ভারতীয়দের এই সংস্থাটি।
নিছক টাকা পাঠিয়েই অবশ্য দায় সারেনি ওই সংস্থাটি। কাছাড়ের ওই হাসপাতাল সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে মার্কিন মুলুক থেকে সম্প্রতি প্রত্যন্ত শিলচরে এসেছিলেন সংস্থার দুই ডিরেক্টর ময়াঙ্ক সিংহল এবং প্রিয়া পটেল। তিন দিন এখানে থেকে ঘুরে ঘুরে তাঁরা দেখেন হাসপাতালের কাজকর্ম। তাঁরা জানিয়ে যান, যতদিন পর্যন্ত না এই হাসপাতাল নিজের পায়ে -দাঁড়াবে, তত দিন কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালের রোগীদের সাহায্যের জন্য তাঁরা দৌড়বেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূতরাই এই ম্যারাথনের উদ্যোক্তা হলেও মার্কিনরাও এই দৌড়ে অংশ নেওয়া-সহ নানা ভাবে সাহায্য করেন। তাঁদের অনেকে হয়তো জানেনই না, কাছাড় বিশ্বের কোন অঞ্চলে।
ময়াঙ্ক ও প্রিয়া জানান, ২০০৬ সালে শুরু হয় এই বিশেষ ম্যারাথন। প্রথম বছর আলফা আইওটা ওমিক্রন নামে একটি সংগঠন এর আয়োজন করে। জর্জিয়া ট্র্যাকে ২০০ লোক অংশ নেয়। আয় হয় চার হাজার মার্কিন ডলার। ক’বছরের মধ্যে পাশে দাঁড়িয়েছে বহু ছাত্র সংগঠন, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। এগিয়ে এসেছেন সমাজে প্রতিষ্ঠিত মানুষজনও। দৌড়ে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যাও কয়েক হাজারে পরিণত হয়েছে। ফলে আয় বেড়েছে আগের চেয়ে বহুগুণ।
ময়াঙ্ক ও প্রিয়া জানান, একই লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করে চলেছে ভারত-আমেরিকা ক্যানসার সোসাইটি। তারা ২০০৯ সাল থেকে কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালটির ব্যথা উপশম কেন্দ্রের খরচ বহন করছে। ‘ইন্ডিয়া রান ফর হোপ’ গত বছর তাদের মাধ্যমেই টাকা পাঠায়।
কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালের প্রশাসনিক অফিসার কল্যাণ চক্রবর্তী জানান, গত বছর আমেরিকার ম্যারাথন থেকে যে ৮ লক্ষ টাকা এসেছে, তা ভারত-আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির ব্যথা উপশম কেন্দ্রের জন্য পাঠানো টাকার বাইরে। তিনি জানান, সংস্থার দুই ডিরেক্টর এখানকার কাজকর্ম দেখে যে উচ্ছ্বসিত। তাঁরা আশ্বাস দিয়ে জানিয়ে গিয়েছেন, ২০১২-র অগস্টে যে বিশেষ ম্যারাথন দৌড় হবে, তা থেকে অর্জিত অথের্র একটা বড় অংশ দান করা হবে এই মহৎ কর্মযজ্ঞে। |