আমরা-ওরা বিভাজন এ বার ঢুকে পড়ল স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নিয়োগে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের পুরনো নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। কেন এই সিদ্ধান্ত, তার নির্দিষ্ট জবাব কেউ দিতে পারেননি। কবে এই শূন্য পদ পূরণ হবে, সে নিয়ে আপাতত ভাবছেনও না স্বাস্থ্য-কর্তারা।
প্রথমে বাতিল হয়েছিল চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের প্যানেল। তার পরে চলতি মাসে চাকরি খুইয়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় নিযুক্ত ৮২ জন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক। কেন বাতিল হল এই সব নিয়োগ? আগের সরকারের আমলের সব নিয়োগ তাঁরা মানতে বাধ্য নন শুধু এইটুকু জানিয়েই চুপ থেকেছেন স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক কর্তা। শূন্য পদগুলি কবে পূরণ হবে তা স্থির না হওয়ায়, পরিষেবাও শিকেয় উঠতে চলেছে। স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস জানিয়েছেন, এ বিষয়ে এখনও তাঁদের কোনও ভাবনা-চিন্তা নেই। আপাতত এ ভাবেই চলবে।
রাজ্যে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ও সাফাই কর্মীর শূন্য পদের সংখ্যা প্রায় ৪০০০। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত সরকারের আমলে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পরীক্ষার পরে গ্রুপ ডি পদে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে সফলদের নামের তালিকা প্রকাশ হয় গত জুন মাসে। বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য মোট ২৮১৭ জন প্রার্থীর একটি প্যানেলও তৈরি হয়। কিন্তু পরে প্রক্রিয়া আর এগোয়নি। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে জানিয়ে দেওয়া হয়, এখনই চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের কথা ভাবা হচ্ছে না। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর প্যানেলভুক্ত এক যুবক বলেন, “স্বাস্থ্য ছাড়া অন্য ক্ষেত্রেও একই সময়ে প্যানেল তৈরি হয়েছিল। স্বাস্থ্য ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রেই কাজে যোগ দেওয়া হয়ে গিয়েছে। আমরা বারবার জানতে চাইছি, আমাদের নিয়ে সমস্যাটা কোথায়? কিন্তু কেউ জবাব দিচ্ছেন না।”
হাসপাতাল কর্তাদের মতে, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ না হওয়ার কারণে হাসপাতালের অপরিচ্ছন্নতা বাড়ছে। ওয়ার্ডের ভিতরে-বাইরে অন্যান্য পরিষেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে। এমনকী ট্রলি ঠেলে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার লোকও পাওয়া যাচ্ছে না। এমনিতেই টানা বেশ কয়েক বছর নিয়োগ হয়নি। প্রতি বছর একটা বড় সংখ্যার কর্মী অবসর নিচ্ছেন, ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে।
অন্য দিকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ২০০৮ সাল থেকে তাঁরা চাকরি করছেন। ফি বছর এপ্রিলে তাঁদের চুক্তির নবীকরণ হয়েছে। কিন্তু এ বার স্বাস্থ্য ভবনের আয়ুর্বেদ বিভাগ থেকে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী মাস থেকে তাঁদের আর কাজে বহাল রাখা হবে না। রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসক ঘাটতি মোকাবিলায় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এই ব্যবস্থা বেশ জনপ্রিয়ও হয়। আচমকা সেই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তে ধন্দে পড়েছেন রোগীরাও। কেন এই সিদ্ধান্ত? আয়ুর্বেদ বিভাগের কর্তারা জানিয়েছেন, পুরনো নিয়োগ বাতিলের নির্দেশটুকুই শুধু তাঁরা পেয়েছেন, তার কারণ সম্পর্কে তাঁদেরও কিছু জানানো হয়নি।
বাদ যাওয়া আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকেরা নিজেরা একটি সংগঠন তৈরি করেছেন। সেই সংগঠনগত ভাবেই সরকারের দ্বারস্থ হচ্ছেন তাঁরা। এক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের কথায়, “গত চার বছর ধরে কাজ করছি। যথেষ্ট রোগী আসেন আমাদের কাছে। এখন রাতারাতি আমাদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, এই মাসের পরে আমাদের আর প্রয়োজন নেই। কোনও কারণ না দেখিয়ে এ ভাবে চাকরি যাওয়ার ব্যাপারটা মানতে পারছি না।”
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নিয়োগের ব্যাপারে তা হলে কী ভাবছে প্রশাসন? স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নিয়োগের জন্য বিশেষ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড তৈরি হয়েছে। নিয়োগ ওই বোর্ডের মাধ্যমেই হবে। তার আগে কোথায় কোথায় ঘাটতি আছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এই বোর্ড তৈরির কথা অবশ্য নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শোনা যাচ্ছে। সেই প্রক্রিয়া কিন্তু এগোয়নি। নিয়োগের যাবতীয় কাজকর্মই অনিশ্চিতির মধ্যে রয়েছে। |