তরাই ও ডুয়ার্সকে গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা জিটিএ-র অন্তর্ভুক্ত না-করার আবেদন জানিয়ে শ্যামল সেন কমিশনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস। মঙ্গলবার বিধানসভার বাইরে এ কথা জানান জলপাইগুড়ির কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়। পক্ষান্তরে ওই দুই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্তির দাবির বিষয়টির সমাধান না-হওয়া পর্যন্ত মনোনীত বোর্ড গড়ে জিটিএ চালাতে চান গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতারা। সেই সঙ্গেই দাবি পূরণ না-হলে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে ফের সরব হওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছে মোর্চা।
এ দিন বিধানসভার দ্বিতীয়ার্ধে রাজ্যপালের ভাষণের উপরে আলোচনার সময় জিটিএ-র প্রসঙ্গ তোলেন কংগ্রেসের দেবপ্রসাদবাবু। রাজ্যপালের ভাষণ ‘সম্পূর্ণ সমর্থন’ করেও তিনি বলেন, “তরাই-ডুয়ার্স হল মিনি ভারতবর্ষ। বহু জাতের মানুষ সেখানে বসবাস করেন। সেখানে আমরা কোনও রাজনৈতিক ক্ষত চাই না।” পরে সভার বাইরে তিনি জানান, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ইতিমধ্যেই শ্যামল সেন কমিশনকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছেন, তরাই ও ডুয়ার্সকে জিটিএ-র অন্তর্ভুক্ত করা চলবে না। করলে বিরাট বিপদ দেখা দেবে। সে-ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ভাবে বিরাট ক্ষত তৈরি হবে বলে মনে করছে প্রদেশ কংগ্রেস। ওই বিধায়কের প্রস্তাব, দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদের আওতায় দার্জিলিং, কালিম্পং ও কার্শিয়াং এই তিন মহকুমাকে নিয়ে যে-এলাকা রয়েছে, সেখানেই নির্বাচন করানো হোক। পরে সীমানা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। এমন ঘটনা যে বিরল নয়, তার নজির হিসেবে তিনি অসম-নাগাল্যান্ড প্রসঙ্গ টেনে আনেন। বলেন, “অসম ও নাগাল্যান্ডের মধ্যে আজও সীমানা চূড়ান্ত হয়নি। তাতে কি নাগাল্যান্ড রাজ্য গঠন আটকে ছিল?”
এলাকা নিয়ে জল্পনার মধ্যেই জিটিএ-র নির্বাচন নিয়ে মোর্চা নেতারা এ দিন দার্জিলিঙের সিংমারিতে বৈঠক করেন। মোর্চা সূত্রের খবর, তরাই ও ডুয়ার্সের নির্দিষ্ট এলাকাকে জিটিএ-র অন্তর্ভুক্ত করার দাবি নিয়ে মোর্চা নেতৃত্ব এখনই আন্দোলনে যেতে চাইছেন না। দলের নেতারা চান, বিষয়টির নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত মনোনীত বোর্ড গড়ে জিটিএ চালানো হোক। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “পাহাড়-সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধান করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী সোমবার দিল্লিতে আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যে আমরা খুশি।” তিনি জানান, তরাই, ডুয়ার্সের নেপালিভাষী এলাকাগুলিকে জিটিএ-র অন্তর্ভুক্ত করলে সুবিধাই হবে। “নচেৎ আমাদের পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য বিবেচনা করুক,” দাবি তুলেছেন রোশন। রাজ্য সরকার অবশ্য অনড়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এ দিন মহাকরণে বলেন, “জিটিএ চুক্তিতে যা বলা আছে, তার বাইরে কিছু করা যাবে না। জিটিএ এলাকা নিয়ে মোর্চা এখন যে-দাবিই করুক, তাতে কান দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।” দার্জিলিঙের জেলাশাসক জিটিএ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন বলে জানান তিনি। |