সোমবার সকাল থেকেই বনগাঁ মহকুমার যে রাস্তায় চোখ পড়েছে সেখানেই দেখা গিয়েছে মতুয়া ভক্তদের ভিড়। হয় গাড়িতে, নয়তো হাঁটাপথে সকলেরই গন্তব্যের অভিমুখ ছিল ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ি। হরির বোল ধ্বনি আর সেইসঙ্গে ডঙ্কা-কাঁসির আওয়াজে মুখরিত চারদিক।
মঙ্গলবার ভোর থেকে ঠাকুরবাড়ির ‘কামনা’ সাগরে পূণ্যস্নানের মাধ্যমে শুরু হয়ে যায় এ বারের মতুয়া ধর্ম মহামেলা। এ দিন সকালে স্নান সারেন মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপানি ঠাকুর (বড়মা)। এর পরেই আনুষ্ঠানিক ভাবে লক্ষ লক্ষ ভক্তের শুরু হয় পূণ্যস্নান। এ দিন স্নানপর্ব মিটে গেলেও মেলা চলবে আগামী সাতদিন ধরে। |
ফি বছর প্রয়াত হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে ঠাকুরনগরে মেলার আয়োজন করা হয়। ১৯৪৮ সালে ঠাকুরনগরে মেলার সূচনা করেছিলেন ঠাকুর পরিবারের সদস্য প্রমথরঞ্জন ঠাকুর। তার আগে বাংলাদেশের ওড়াকান্দিতে দেড়শো বছরেরও বেশি সময় আগে মেলার সূচনা করেন মতুয়া ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হরিচাঁদ ঠাকুর।
মেলা শুরুর কয়েক দিন আগে থেকেই ঠাকুরনগরে ভিড় শুরু হয়ে যায় ভক্তদের। ধর্মের টানে মুছে যায় পরিচিত-অপরিচিতের গণ্ডি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্তদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সে জন্য তাঁদের চেষ্টার ত্রুটি থাকে না। এ দিন ঝাড়খন্ড থেকে আসা ভক্তদের মধ্যে মধুমিতাদেবী, ময়নাদেবীরা জানালেন, “এত দূরে এসেও মনে হয় যেন আত্মীয়ের বাড়িতে এসেছি।” এ বার মেলায় ঘুরে দেখা গেল রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ও ভিন রাজ্য থেকে আসা ভক্তদের জন্য যথেষ্ট নিরপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “মেলা প্রাঙ্গণে এ বার পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছে। ভিড় সামলাতে ট্রাফিক পুলিশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের পদস্থ কর্তারা সমস্ত বিষয়টি দেখভাল করছেন।”
জেলার তৃণমূল বিধায়ক ও রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আমরা মতুয়া সম্প্রদায়কে ভুলে যাইনি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পর্যটন দফতর এ বার মেলায় ২৮টি তোরণ তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে ঠাকুরবাড়ির আরও উন্নতিসাধন করা হবে।” এ দিন বিভিন্ন জায়গায় তৈরি তোরণে দেখা গিয়েছে বড়মা ও মুখ্যমন্ত্রীর ছবি। উদ্যোক্তাদের আশা এ বার মেলায় ২৫-৩০ লক্ষ ভক্তের সমাগম হবে। |