|
|
|
|
পেট্রোকেমের পর্ষদে আসতে পারেন পার্থ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস চালাতে প্রত্যক্ষ প্রশাসনিক উপস্থিতি থাকবে রাজ্যের। সংস্থার পরিচালন পর্ষদে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে থাকবেন ৪ জন প্রতিনিধি।
মঙ্গলবার শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, “রাজ্য সরকারের তরফ থেকে পরিচালন পর্ষদে ইতিমধ্যেই তিন প্রতিনিধি রয়েছেন। এঁরা হলেন দিল্লিতে রাজ্যের রেসিডেন্ট কমিশনার ভাস্কর কুলবে, শিল্পসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নন্দিনী চক্রবর্তী।” সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে চতুর্থ প্রতিনিধি হিসেবে পর্ষদের সদস্য হিসেবে যোগ দিতে চান শিল্পমন্ত্রীই। তাঁকে বোর্ডের সদস্য হিসেবে চেয়ে চিঠি দিয়েছে নিগমও। শিল্পমন্ত্রী পর্ষদে যোগ দিলে এর পর সংস্থা চালানো নিয়ে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকার পক্ষের সম্পর্ক কোনও নতুন মাত্রা পায় কিনা, তা দেখতে আগ্রহী পর্যবেক্ষকরাও। তবে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এ দিন অনিরুদ্ধ লাহিড়ী জানিয়েছেন, সংস্থার আর্থিক হাল ফেরানোর লক্ষ্যে করা যে কোনও পদক্ষেপের সঙ্গেই তাঁরা একমত।
প্রসঙ্গত, হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের পর্ষদে মোট সদস্য সংখ্যা ১৫। এর মধ্যে রাজ্যের প্রতিনিধি ৪ জন, চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর ৪ জন, এক জন স্বাধীন ডিরেক্টর, ৫ জন ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক সংস্থার প্রতিনিধি। এবং আর এক জন হলেন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর। এ দিন নিগমের অফিসে ঋণদাতা ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন পার্থবাবু। শিল্প দফতরের ভার নেওয়ার পর ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে এটি তাঁর দ্বিতীয় বৈঠক। ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা চান যে, সংস্থা পরিচালনায় প্রত্যক্ষ ভাবে থাকুক রাজ্য।
হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসে গোড়া থেকেই সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল বিতর্ক। প্রথমে আরপিজি গোষ্ঠী। তার পরে দরবারি শেঠ। অবশেষে আইডিবিআই-এর পরামর্শে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য হাত বাড়িয়ে দেওয়া। সেই সূত্রে প্রকল্পের অংশীদার হয়ে আসে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী।
সমস্যা শুরু হয়, যখন আর্থিক কারণে ঠিক সময়ে প্রকল্প শেষ করা যাচ্ছিল না। হলদিয়া পেট্রোকেমে অর্থ সঙ্কটের সূত্রপাত প্রকল্প শেষ করার জন্য ৯৬৯ কোটি টাকার ঋণ করা নিয়ে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক ছিল ৫ হাজার ১৭০ কোটি টাকার প্রকল্পের ১ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা আসবে শেয়ার বেচে। বাকি ৩ হাজার ১৯১ কোটি টাকা তোলা হবে ঋণ করে। আরও স্থির হয়েছিল চ্যাটার্জি গোষ্ঠী ৪৩৩ কোটি, রাজ্য সরকার ৪৩৩ কোটি ও টাটা গোষ্ঠী ১৪৪ কোটি টাকা সংস্থার শেয়ারে বিনিয়োগ করার পরে বাকি ৯৬৯ কোটি টাকা তোলা হবে বাজারে শেয়ার বিক্রি করে। কিন্তু সে সময়ে বাজারে টানা মন্দা ও প্রকল্পটি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের অনাস্থার কারণে শেয়ার বিক্রির রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ৯৬৯ কোটি টাকা তুলতে হয় ঋণ করে। প্রায় ১৭ শতাংশ সুদের হারে ওই ঋণই জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসে সংস্থার কাঁধে।
এই সমস্যা থেকে বেরনোর একমাত্র উপায় টাকার জোগান। কিন্তু আর্থিক সঙ্কটে জর্জরিত সংস্থার পক্ষে টাকা জোগাড়ের বিষয়ে স্বাভাবিক ভাবেই সমস্যা তৈরি হয়। এই সময় ইন্ডিয়ান অয়েলকে সংস্থার শেয়ার বেচে টাকা তোলার কথা ভাবা হয়েছিল। সেই সঙ্গে শুরু হয় সংস্থার অংশীদারি নিয়ে বিবাদ। এবং তা নিয়ে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকার পক্ষের বিবাদ গড়ায় আদালতের দরজা পর্যন্ত।
তবে এটাও ঠিক যে, চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর দাবি মেনে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের সত্ত্ব ছেড়ে বেরিয়ে আসার কথা ভেবেছিল পূর্বতন বাম সরকারই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দাম নিয়ে মতৈক্য না-হওয়ায়, আদালতের দ্বারস্থ হয় চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। মহাকরণে সরকার বদলে যাওয়ার পরও এখনও পর্যন্ত দু’পক্ষের যা অবস্থান, তাতে সেই বিরোধ মেটার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ দিন শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সংস্থার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। দুর্বলতার মধ্যে রয়েছে বিপণন। তাই বিপণন পরিচালন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করলে সংস্থা ঘুরে দাঁড়াবে বলেই তাঁর বিশ্বাস। |
|
|
|
|
|