|
|
|
|
বিল নিয়ে নানা অভিযোগ, ফের বিতর্কে সম্পত্তিকর |
কাজল গুপ্ত |
পুরসভা চালু হতেই লম্বা লাইন। সম্পত্তিকরের বিল দিতেই রোজ এমন ভিড়ের দেখা মিলছে বিধাননগর পুরভবনে। ভাবা গিয়েছিল এই দৃশ্যটাই গত কয়েক বছর ধরে চলা সম্পত্তিকর ‘বিতর্কে’র সমাধানের পথ খুঁজে দিতে পারে। কিন্তু ‘বিতর্ক’ পিছু ছাড়ল না। কারণ সম্প্রতি বাড়ি বাড়ি পাঠানো করের বিল নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ তুলছেন বাসিন্দারা। এমনকী সম্পত্তিকরের বিল নিয়ে শাসকদলের দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে এসেছে।
অভিযোগ, অনেকের করের বিল ‘অস্বাভাবিক’। কারও ক্ষেত্রে আবার আগের থেকে করের পরিমাণ অনেক কমেছে। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, প্রাক্তন বাম পুর-বোর্ডের সময়েও সম্পত্তিকরের বিলের ক্ষেত্রে একই বিতর্ক হয়েছিল। তৃণমূল পুরবোর্ড দায়িত্ব নিয়ে ঘোষণা করেছিল, করের সরলীকরণ হবে এবং বাড়তি করের বোঝা বাসিন্দাদের উপর চাপানো হবে না। কিন্তু যে বিল বর্তমানে পাঠানো হয়েছে তা বাম আমলের ‘বিতর্কিত’ বিলেরই প্রতিলিপি। বর্তমান শাসকপক্ষ দ্বিচারিতা করছেন বলে অভিযোগ।
তৃণমূল পরিচালিত বিধাননগর পুরবোর্ড জানিয়েছিল, আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতে বঙ্গীয় পুর আইন মোতাবেক পুরনো মূল্যায়নের ভিত্তিতে সম্পত্তিকর নির্ধারণ করে বিল পাঠানো হয়েছে। তাতে করের বোঝা কমবে বলেই মত প্রকাশ করেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু অনেকের যেমন করের পরিমাণ কমেছে, তেমনই অনেকের ক্ষেত্রে তা উল্টো হয়েছে। যদিও ইতিমধ্যেই সম্পত্তিকর বাবদ চার কোটি টাকারও বেশি জমা পড়েছে বলে জানান পুর-কর্তৃপক্ষ।
যেমন, রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি বিকাশকলি বসুর বাড়ি, সিডি ২৬০-র বার্ষিক মূল্যায়ন ১৯৯৪-৯৫ আর্থিক বছরে ছিল ৩৪০০ টাকা। বাম আমলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫৭৩৬ টাকায়। ২০১১-১২ আর্থিক বছরে তৃণমূল পুরবোর্ডের পাঠানো করের বিলে দেখা গেল, সেই মূল্যায়নও ৩৫৭৩৬ টাকাই। পরিবারের তরফে জয়দেব বসু বলেন, “এ বার আমাদের যত টাকা বিল হয়েছে, তা অস্বাভাবিক বলেই মনে হচ্ছে। আমাদের কোনও ভাড়াটে নেই, বাণিজ্যিক প্লটও নয়। তা হলে কী ভাবে এত বিল হল? পুর-প্রশাসনকে জানিয়েছি।” সিই ব্লকের ১৪৬ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত স্বপ্রকাশ ভট্টাচার্যের কথায়, “এ বার সম্পত্তিকরের যে বিল পাঠানো হল, তা কার্যত প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিশ্বজীবন মজুমদারের আমলে পাঠানো বিলের নকল। অথচ তা নিয়েই গোলমাল। তা হলে কী ভাবে এ বারও এই বিল হল?” এজে ব্লকের ২৪৬ নম্বর বাড়ির ক্ষেত্রেও দেখা যায়, বাম আমলের বার্ষিক মূল্যায়ন ও বর্তমান মূল্যায়ন একই।
শুধু দু’এক ক্ষেত্রে নয়, এমনটা হয়েছে অনেকের ক্ষেত্রেই। যদিও বিক্ষুব্ধদের সমর্থন করে বিধাননগর টাউন তৃণমূলের সভাপতি তথা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত বলেন, “এটা দলীয় সিদ্ধান্ত নয়। গত পুর-নির্বাচনের আগে আমরা দলগত ভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, করের সরলীকরণ করা হবে এবং বাড়তি করের বোঝা বাসিন্দাদের উপর চাপানো হবে না। কিন্তু এখন যে বিল পাঠানো হচ্ছে, তা দলের সিদ্ধান্ত নয়। সম্পত্তিকর সামলায় চেয়ারপার্সনের দফতর। তিনিই বলতে পারবেন কেন এই অবস্থা।”
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সব্যসাচীবাবু যেহেতু পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান, তা হলে তাঁরও এই সিদ্ধান্তের শরিক হওয়ার কথা। যদিও তাঁর দাবি, চেয়ারম্যান পরিষদ কিংবা বোর্ড মিটিংয়ে সম্পত্তিকরের বিল নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
অভিযোগের জবাবে বিধাননগরের চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “আদালতের নির্দেশ মেনেই সম্পত্তিকরের মূল্যায়ন করে বিল পাঠানো হয়েছে। চেয়ারম্যান পরিষদ ও কাউন্সিলরদের বৈঠকের মাধ্যমেই সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “বিশ্বজীবনবাবুর আমলের বিলের মতো একেবারেই নয়, হওয়ার কথাও নয়। আইন মেনেই এই কাজ হয়েছে। কারও ক্ষেত্রে যদি বিল একই রকম হয়ে থাকে, আমাদের কাছে এলে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানুষকে বিপদে ফেলা নয়, বরং মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি আমরা।” করের বিল এবং কী ভাবে তা পাঠানো হবে সে বিষয়ে সকলের মতামত নিয়েই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে চেয়ারপার্সনের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন চেয়ারম্যান পারিষদ অনুপম দত্ত, অশেষ মুখোপাধ্যায় ও দেবাশিস জানা। পুরসভা সূত্রে খবর, যে বৈঠকগুলিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেখানে ভাইস চেয়ারম্যান হাজির ছিলেন।
এ দিকে বাসিন্দাদের একটি সংগঠন সল্টলেক (বিধাননগর) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “আইনের ভুল ব্যাখ্যার জন্যই এই পরিস্থিতি উদ্ভুত হয়েছে। এখনও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব।” |
|
|
|
|
|