|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা জলাভূমি |
ইকো-ট্যুরিজম প্রকল্প বাতিল করল সরকার |
মিলন দত্ত |
ইকো-ট্যুরিজম প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য পূর্ব কলকাতা জলাভূমি এলাকায় ছ’টি বাণিজ্যিক সংস্থাকে ৪০ একরেরও বেশি জমি দেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পের অনুমোদনে এবং জমি বণ্টনে যথেষ্ট স্বচ্ছতা না-থাকায় সবক’টি প্রকল্পই বাতিল করে দেওয়া হল। অনুমোদন দিয়েছিলেন পূর্ব কলকাতা জলাভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের পূর্বতন চিফ টেকনিক্যাল অফিসার। তা বাতিল করলেন বর্তমান কর্তা।
প্রকল্প অনুমোদনে স্বচ্ছতার অভাবই শুধু নয়, বাণিজ্যিক সংস্থাকে দিয়ে ইকো-ট্যুরিজম প্রকল্প রূপায়ণের উদ্যোগ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন পূর্ব কলকাতা জলাভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের চিফ টেকনিক্যাল অফিসার অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “পূর্ব কলকাতা জলাভূমির মৎস্যজীবীদের উদ্যোগে এবং প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে পরিবেশ সম্মত কোনও পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে, সেটিই হবে ইকো-ট্যুরিজম। তার জন্য কোনও বাণিজ্যিক সংস্থাকে দিয়ে বড় বাড়ি বানানোর প্রয়োজন নেই।” কিন্তু ওই বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি ইতিমধ্যে পাঁচিল তুলে জমি ঘিরে নিয়েছে। সেগুলিও ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ দিকে, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি এলাকার ওই জমি বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি প্লট করে চড়া দামে বিক্রি করতে শুরু করেছে বলে জানতে পেরেছেন কর্তৃপক্ষ।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘রামসার’ অনুমোদিত পূর্ব কলকাতা জলাভূমি বাঁচানোর জন্য আইন প্রণয়নের পরেও সেখানকার জলাশয় এবং জমি দখলের চেষ্টা অব্যাহত। সম্প্রতি একটি ভেড়ি দখল করে সেখানে নির্মাণ শুরু করার জন্য পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলেছিলেন কোনও প্রোমোটার। পূর্ব কলকাতা জলাভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তায় সেটি ভেঙে দেন। তার পরেই জলাভূমি এলাকা বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের উদ্যোগ বন্ধ করতে তৎপর হন কর্তৃপক্ষ। ইকো-ট্যুরিজমের জন্য যাঁদের জমি দেওয়া হয়েছিল, সে রকম একটি সংস্থার কর্ণধার পার্থ ঘোষদস্তিদার অবশ্য ওই জমি পাওয়ার ব্যাপারে এখনও আশা রাখেন। তাঁর বক্তব্য, “আমরা এখনও হাতে কোনও চিঠি পাইনি। দেখাই যাক কী হয়।”
এ ছাড়া পূর্ব কলকাতা জলাভূমি এলাকার মধ্যে যে গ্রামগুলি আছে, সেখানেও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বড় কোনও নির্মাণ করা নিষেধ। পূর্ব কলকাতা জলাভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের পূর্বতন আধিকারিকেরা বহু গ্রামবাসীকে নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিলেন। বর্তমান কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত ১৬৩টি অনুমতি বাতিল করেছেন। পরিবেশ দফতর সূত্রে জানা যায়, ওই অনুমতি নিয়ে অনেকেই জমি, বাড়ি প্রোমোটারের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন চড়া দামে। কলকাতার সংলগ্ন হওয়ায় সেখানে জমির এবং স্থাবর সম্পত্তির দাম রীতিমতো চড়া। পূর্ব কলকাতা জলাভূমি এলাকায় অবাধ নির্মাণ ঠেকাতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে ওই সূত্রের খবর।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞেরা সব সময়েই মনে করিয়ে দেন যে, সাড়ে বারো হাজার হেক্টর এলাকায় রয়েছে ২৫৪টি ভেড়ি। কলকাতার নিকাশি নোংরা জলে টেনে নিয়ে, প্রাকৃতিক উপায়ে তা শোধন করে সেখানে মাছ চাষ করা হয়। নোংরা জল ব্যবহার করে মাছ চাষের জন্য ওই জলাভূমি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই কলকাতার বাস্তুতন্ত্রকেও ধারণ করে রেখেছে ওই জলাভূমি।
কলকাতার পরিবেশ বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে কোনও মূল্যেই ওই জলাভূমি নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন নদী ও ভূজল বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র। ‘সাউথ এশিয়ান ফোরাম ফর এনভায়রনমেন্ট’-এর চেয়ারম্যান দীপায়ন দে-র বক্তব্য, “ওই জলাভূমি সংরক্ষণ ও বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থেই সমস্ত কাজে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে এলাকার বাসিন্দা, মৎস্যজীবীদের যুক্ত করতে হবে। না হলে জলাভূমি উন্নয়নের কোনও কাজই সম্পূর্ণ করা যাবে না।” |
|
|
|
|
|