কলকাতা থেকে উড়ান তুলে নিচ্ছে কিংফিশার। শনিবার ২৪ মার্চ পর্যন্ত তারা কলকাতা থেকে উড়ান চালাবে। তার পর থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে কলকাতার সমস্ত উড়ান। সংস্থা সূত্রে খবর, যে একটি মাত্র এটিআর বিমান কলকাতায় রাখা আছে, সেটিকে মুম্বইয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তার আগে প্রতিদিন নির্ধারিত উড়ান চালানো হবে। মঙ্গলবার কলকাতা থেকে ব্যাঙ্কক, ঢাকা, ভুবনেশ্বর, মুম্বই ও আইজলের উড়ান চলাচল করেছে। বাতিল করা হয় ভুবনেশ্বরের দ্বিতীয় উড়ানটি।
এ বারের গ্রীষ্মকালীন উড়ানসূচিতে দিল্লি-মুম্বই-বেঙ্গালুরু থেকেও বহু উড়ান বাতিল করেছে কিংফিশার। যেখানে ২৮টি বিমান চলত, সেখানে চালানো হবে ১৬টি। কিংফিশারের এই সিদ্ধান্তে খুশি নয় বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)। বিমানসংস্থার লাইসেন্স বাতিল করা হবে, এমন গুঞ্জনও শুরু হয়ে গিয়েছে। এ দিনই দিল্লিতে বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ বলেন, “গত দু’তিন মাস ধরে কিংফিশার যা যা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে, তার কোনওটাই বাস্তবায়ন করতে পারেনি। যাত্রীদের সুরক্ষা বিঘ্নিত হলে, তা বরদাস্ত করা হবে না।” তেমন ক্ষেত্রে লাইসেন্স বাতিল করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মন্ত্রী। মঙ্গলবারেই দিল্লিতে সংস্থার ডিরেক্টর ভরত ভূষণের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কিংফিশারের কর্ণধার বিজয় মাল্য। বৈঠক শেষে মাল্য জানান, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। ডিরেক্টর যা যা জানতে চেয়েছিলেন আমরা তা জানিয়েছি।
বিমান সংস্থা সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন টাকা বকেয়া থাকার জন্য কিংফিশারের যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলির লেনদেন অর্থ মন্ত্রক বন্ধ করে দিয়েছিল, সেগুলির মধ্যে কয়েকটি সোমবার বিমানসংস্থার হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিংফিশার কর্মীদের আশা, এর ফলে বকেয়া বেতন পেতে পারবেন তাঁরা।
এত দিন ধরে যে বিমানগুলি কিংফিশার চালাচ্ছিল সবগুলিই ভাড়া নেওয়া বিমান। সংস্থা সূত্রে খবর, তার মধ্যে বিলাসবহুল বিমান এ-৩৩০ ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছে। ফলে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কিংফিশারের আন্তর্জাতিক সমস্ত উড়ান তুলে নেওয়া হবে। এ বার এ-৩২০ বিমানও ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংস্থার এক কর্তার কথায়, “যে সময়ে আমরা এ-৩২০ বিমান ভাড়া নিয়েছিলাম, তখন এক একটি বিমানের ভাড়া ছিল মাসে পৌনে দুই কোটি টাকা। এখনও প্রতি মাসে সেই টাকা গুনতে হচ্ছে। পুরনো হয়ে যাওয়ায় বিমানগুলির রক্ষণাবেক্ষণের খরচও বাড়ছে। অথচ এখন, মাসে এক কোটি টাকায় একেবারে নতুন বিমান ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে।” তাই ঠিক করা হয়েছে, পুরনো সমস্ত বিমান ফিরিয়ে দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম টাকায় নতুন বিমান ভাড়া নেওয়া হবে। এই মূহূর্তে আটটি এটিআর এবং আটটি এ-৩২০ বিমান রেখে বাকিগুলি একে একে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কর্তার কথায়, “ন্যূনতম পাঁচটি বিমান থাকলেই নিয়মিত উড়ান চালানো যায়। তা হলে আপত্তি কেন? আর নিয়ম মেনেই তো আমরা ছোট শহরে উড়ান চালাচ্ছি। তা হলেও কেন উত্তর-পূর্ব ভারতে উড়ান চালাতে আমাদের বাধ্য করা হবে? লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে আমাদের তো উড়ান সংখ্যা কমাতেই হবে।” |