যে কোনও বিপণনকে আকর্ষণীয় করে তোলার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে থাকেন রুপোলি পর্দার তারকারা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বাস এটাই। তাই যে ভাবে গুজরাতের মুখ হয়ে গিয়েছেন অমিতাভ বচ্চন, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সে ভাবেই এ রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করা হয়েছে শাহরুখ খানকে। এ বার রাজ্যের অধিগৃহীত এক রুগ্ণ সংস্থাকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলতেও মুখ্যমন্ত্রী বেছে নিলেন টলিউডের দুই হিট নায়ক-নায়িকাকে। তাঁর নির্দেশে ওই সংস্থার বিজ্ঞাপন ছবিতে অভিনয় করছেন ওই দুই তারকা।
মাদার ডেয়ারির মাসিক লোকসানের পরিমাণ কয়েক মাস আগে ছ’কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। মেট্রো ডেয়ারি’, ‘আমূল’-এর মত প্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে দুধের দাম বাড়ানোয় প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতর মাদার ডেয়ারির দুধের দামও বাড়াতে চায়। সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। নির্দেশ দেন, দাম না বাড়িয়ে বর্তমান সুযোগের সদ্ব্যবহার করেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে সংস্থাকে। তাঁর কথা মেনে সরকারি সংস্থার বিজ্ঞাপন হয়েছে টলিউডের তারকাদের দিয়ে।
মাদার ডেয়ারির সমস্যা সমাধানে প্রথমে কিছু টোটকা দিয়েছিলেন মমতা। তা মেনে সুফল পায় সংস্থা। গত ডিসেম্বর মাসে সংস্থার লোকসানের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৩ কোটি টাকার উপরে। ২০১২-র জানুয়ারিতে সেই লোকসান আরও কমে হয় ৮৪ লক্ষ টাকা। ফেব্রুয়ারিতে লাভ দাঁড়ায় ৩৪ লক্ষ টাকা। দুগ্ধ কমিশনার উদয়শঙ্কর নন্দী বলেন, “আশা করি বড় অঘটন না ঘটলে সংস্থার এই লাভের অঙ্ক এ বার বাড়তে থাকবে।”
দেব ও শুভশ্রী। ফাইল চিত্র |
ফেব্রুয়ারিতেই মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে ওই দফতর এবং মাদার ডেয়ারির কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। মূল্যবৃদ্ধির পথ না ধরেও সংস্থা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে জেনে খুশি হন মুখ্যমন্ত্রী। টলিউডের কয়েক জন তারকার নাম উল্লেখ করে তাঁদের দিয়ে তিনি বিজ্ঞাপন-ছবি তৈরির নির্দেশ দেন আমলাদের। মাদার ডেয়ারির চিফ জেনারেল ম্যানেজার উদয় গঙ্গোপাধ্যায় এ কথা জানিয়ে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাদের হরনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।” নিখরচায় কাজ করেছেন দেব আর শুভশ্রী। ছবিতে দেবজ্যোতি মিশ্রের ‘জিঙ্গল’ এবং হরনাথ চক্রবর্তীর ব্যবস্থাপনা মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে সবই হয়েছে নিখরচায়। এ রাজ্যে সাম্প্রতিক কালে এই প্রথম।
শুভশ্রীর কথায়, “এই প্রথম কোনও সরকারি পণ্যের বিজ্ঞাপনে অভিনয় করলাম। জিঙ্গলের সঙ্গে গান গাইতে হয়েছে। খুব ভাল লেগেছে।” অভিভূত দেবও। সেলুলয়েডে এই মুহূর্তে অন্যতম ব্যস্ত নায়কের কথায়, “এখন অন্য রকম অভিনয়ই বেশি করতে হয়। সরকারি পণ্যের প্রচারে অংশ নিয়ে সত্যিই ভাল লাগছে।”
কিন্তু সিনেমা-তারকারা কি সরকারি পণ্যের বাজার ভাল করতে পারেন? বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞ শিলু চট্টোপাধ্যায়ের জবাব, “নিশ্চয়ই পারে! অন্য বিজ্ঞাপনের ভিড়ে এই তারকারাই তো তুরুপের তাস!” মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, “এ রাজ্যে এ রকম চেষ্টা আগে হয়েছে কি না, মনে নেই। গুজরাতের সরকারি সংস্থার বিজ্ঞাপন যদি অমিতাভ বচ্চন করতে পারেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনও সংস্থা কেন পারবে না?”
বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞাপন-পরামর্শদাতা ‘রেসপন্স’-এর চেয়ারম্যান রাম রে বলেন, “টলিউড তারকাকে দিয়ে সরকারি কোনও সংস্থার টিভি-বিজ্ঞাপনের কথা আমারও জানা নেই। উদ্যোগটাকে নীতিগত ভাবে সমর্থন করছি। ক্রেতাদের মধ্যে এই বিজ্ঞাপনের প্রভাব কতটা পড়বে, তার অনেকটাই নির্ভর করবে গুণগত মানের উপরে।”
তবে একটা প্রশ্ন থাকছেই টিভিতে এই বিজ্ঞাপন দেখানোর খরচ জোগাড় হবে কোথা থেকে। |