অভিযোগ, মদত কংগ্রেস বিধায়কের
আইএনটিইউসি-র আন্দোলনে তিন মাস বন্ধ কারখানা
শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি-র আন্দোলনের জেরে প্রায় তিন মাস কারখানা বন্ধ। অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও সমস্যা মেটেনি। এ বার মালদহের বৈষ্ণবনগর থেকে রেললাইনের ‘স্লিপার’ তৈরির ওই বেসরকারি কারখানাটি উত্তরপ্রদেশে সরানোর হুমকি দিলেন কর্তৃপক্ষ। মালিক পক্ষের অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের মদত দিচ্ছেন কংগ্রেস বিধায়ক ঈশা খান চৌধুরী। বিধায়ক-সহ অভিযোগ মানেনি সংশ্লিষ্ট কোনও পক্ষই। তবে রাজ্যের শ্রম প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের আশ্বাস, কারখানাটি আবার চালু করার ব্যাপারে সব পক্ষকে নিয়ে অবিলম্বে বৈঠক হবে।
১৯৯০ সালে বৈষ্ণবনগরের চামাগ্রাম স্টেশনের কাছে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কারখানাটি গড়া হয়। প্রায় ৪০০ শ্রমিক কাজ করেন সেখানে। প্রতিদিন গড়ে ৫০০-৫৫০টি কংক্রিটের ‘স্লিপার’ তৈরি হয়। কর্তৃপক্ষের দাবি, বার্ষিক উৎপাদন হয় ১৫-২০ কোটি টাকার। কিন্তু সংগঠনের ১০ জন কর্মীকে নিয়োগ করার দাবিতে গত ২২ ডিসেম্বর থেকে সদর দরজায় তালা মেরে, ঝান্ডা পুঁতে আইএনটিইউসি কারখানাটি বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ। কারখানার জেনারেল ম্যানেজার রতিকান্ত দে বলেন, “কারখানায় ঢোকা যাচ্ছে না। উৎপাদন বন্ধ। ফলে, কারখানার ভিতরে প্রায় ৮০০ টন সিমেন্ট নষ্ট হতে বসেছে। আন্দোলনকারীরা কারখানায় কোনও মাল ঢুকতে দিচ্ছেন না, বারও করতে দিচ্ছেন না। তৈরি হয়ে যাওয়া ৪০ হাজার কংক্রিটের স্লিপার পড়ে রয়েছে। সেগুলি সময়ে দিতে না পারায় রেলকে প্রচুর ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে।”
মালদহের বৈষ্ণবনগরে বন্ধ কারখানায় পড়ে তৈরি স্লিপার। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়
কারখানা খোলার ব্যাপারে মালিকপক্ষের তরফে সব্যসাচী মুন্সি তিন বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি দিয়েছেন এবং রাজ্যের শ্রম প্রতিমন্ত্রী তথা মালদহের (মোথাবাড়ি) বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিনকে জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। রবিবার তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর আশা ছিল, নিশ্চিন্তে কারখানা চালাব। আইএনটিইউসি জোর করে কারখানা বন্ধ করার পরে মুখ্যমন্ত্রী, জেলা পুলিশ-প্রশাসন, সবাইকে একাধিক বার জানাই।” তাঁর ক্ষোভ, “কারও সহযোগিতা পাচ্ছি না। উত্তরপ্রদেশে কারখানা সরিয়ে নেব বলে ভাবছি।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, সাত বছর আগে সিটু-র আন্দোলনের জেরেও এই কারখানাটি বন্ধ ছিল বেশ কিছু দিন। এ দিন সেই প্রসঙ্গ তুলে সব্যসাচীবাবু বলেন, “সে বার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হস্তক্ষেপে জেলা প্রশাসন তৎপর হওয়ায় সাত দিনের মধ্যে কারখানা খুলে গিয়েছিল। এ বার যা চলছে, তাতে মনে হচ্ছে না যে এই রাজ্যে নিশ্চিন্তে কারখানা চালু রাখতে পারব।” তাঁর অভিযোগ, “যাদের আন্দোলনের জেরে কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, বৈষ্ণবনগরের কংগ্রেস বিধায়ক ঈশা খান চৌধুরী তাদের মদত দিচ্ছেন।”
অভিযোগ মানেননি আইএনটিইউসি-র জেলা সভাপতি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর দাবি, “আমরা কারও মদতে নয় আন্দোলন করছি শ্রমিক-স্বার্থে। যাঁদের নিয়োগের দাবিতে এই আন্দোলন তাঁরা স্থানীয় বাসিন্দা এবং আগে তাঁরা ওই কারখানায় ঠিকা ভিত্তিতে কাজও করতেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ এক সময়ে তাঁদের নিয়োগের প্রতিশ্রতি দিয়েও কথা রাখেননি। তা ছাড়া, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিও রয়েছে আমাদের।” আর বিধায়ক ঈশা খান চৌধুরী বলেন, “কারখানা বন্ধ করতে কাউকে মদত দিইনি। দলের নিচুতলার কিছু কর্মী কারখানাটি বন্ধ করার অনেক পরে আমায় বিষয়টি জানিয়েছেন। কারখানাটি খোলার জন্য সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছি।”
সব্যসাচীবাবু অবশ্য বলেন, “ওই ১০ জনের মধ্যে পাঁচ জনকে আমরা নিতে পারি। কিন্তু বাকিদের নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে।” মালদহ মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত কুন্ডুর ক্ষোভ, “কারখানাটি খোলানোর ব্যাপারে জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই।” যদিও জেলাশাসক শ্রীমতি অর্চনা বলেন, “ওই কারখানা খোলার ব্যাপারে মালিক, শ্রমিক ও মালদহ মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের প্রতিনিধিদের নিয়ে দু’বার বৈঠক করেছে প্রশাসন। তাতে লাভ হয়নি। আগামী সপ্তাহে ফের ওই কারখানা খোলার ব্যাপারে বৈঠক ডাকা হবে।” আর পুলিশ সুপার জয়ন্ত পালের বক্তব্য, “ওই কারখানায় শ্রমিক-সমস্যা আছে। পুলিশ সে ক্ষেত্রে কারখানার দরজায় ঝোলানো তালা ভাঙতে পারে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.