ভিন্ ধর্মে বিয়ে, পুলিশের ‘ভুলে’ হাজতে দম্পতি
ভিন ধর্মে বিয়ের পরে আত্মীয়দের ‘চাপ’ সামলাতে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক নবদম্পতি। সেই পুলিশই তাঁদের বিরুদ্ধে শান্তিভঙ্গের অভিযোগ জানিয়ে ক্রিমিনাল প্রসিডিওর কোড বা সিআরপিসির ৪১ ধারায় মামলা করে। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে রবিবার তাঁদের হাজির করানোর পরে বিচারক ওই নবদম্পতির জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। তবে পুলিশ দাবি করেছে, ‘ভুল’ করেই ওই দম্পতির বিরুদ্ধে আইনের ওই ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। তার উপরে, সিআরপিসির ৪১ ধারায় মামলা দায়ের করা হলে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সময়ে অভিযুক্তকে বিচারক জামিনে মুক্তি দেন। কিন্তু এ দিন ছুটির দিন হওয়ায় আদালতে কোনও আইনজীবীই যাননি। ফলে ওই দম্পতির হয়ে কেউই আবেদন জানাননি। সরকারি আইনজীবীও অভিযুক্তদের জামিনের পক্ষে সওয়াল না-করায় বিচারক তাঁদের জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সরকারি আইনজীবী দেবজ্যোতি পাল বলেন, “ছুটির দিন বলে ওই দম্পতির হয়ে কেউ জামিনের আবেদন জানাননি। পুলিশ শান্তিভঙ্গের অভিযোগ জানানোয় আমিও কোনও কথা বলিনি। তার পরেই বিচারক জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন।”
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, একই গ্রামে বসবাসের সুবাদে গঙ্গারামপুরের জাহাঙ্গিরপুরের নান্দোর গ্রামের ওই দুই তরুণ তরুণীর মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। মাস তিনেক আগে তাঁরা রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন। তার জেরে গ্রামে সালিশি সভাও হয়। তবে নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন ওই তরুণী। কিন্তু পরিবারের লোকের চাপে পড়ে ওই তরুণ বেসরকারি সংস্থায় চাকরি নিয়ে মুম্বইয়ের গুরগাঁওয়ে চলে যান। গ্রামে পড়ে থাকেন তরুণের বিধবা মা। কয়েকদিন আগে ওই তরুণ বাংলায় স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষা দিতে গ্রামে ফেরেন।
এই সময়েই তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই তরুণী বাড়ি থেকে পালিয়ে স্বামীর কাছে আশ্রয় নেন। তরুণীর পরিবারের লোকেরা বিয়ে ভাঙার জন্য ফের চাপ দিতে শুরু করেন। এরপরেই গত শুক্রবার তাঁরা গ্রাম থেকে পালান। শনিবার সন্ধ্যায় তাঁরা গঙ্গারামপুর থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। ওই দম্পতির অভিযোগ, অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশই তরুণীর পরিবারের লোকেদের খবর দিয়ে থানায় ডেকে আনে। সেখানে সালিশি সভা হয়। সালিশি সভাতেও তরুণী ওই যুবকের সঙ্গে সংসার করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। তখন তরুণীর পরিবারের লোকেরা বাড়িতে ফিরে যান।
রাতভর ওই দম্পতিকে থানায় আটকে রাখার পরে এদিন পুলিশ আদালতে পাঠায়। ওই তরুণ বলেন, “আমরা দু’জনেই সাবালক। নিরাপত্তা চাইতে পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদেরই জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করল পুলিশ। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী সেটাই বুঝলাম না।’’ ওই তরুণ-তরুণীর বিরুদ্ধে তাঁদের পরিবারের লোকেরা পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি।
খোদ গঙ্গারামপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক নারায়ণ সরকার অবশ্য মামলার তদন্তকারী অফিসারের ‘ভুল’ মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওই দম্পতিকে নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা থাকায় সুরক্ষার জন্য ‘সেফ কাস্টডি’তে পাঠানো উচিত ছিল। কিন্তু এখন যা হয়েছে, তা তদন্তকারী অফিসারের ভুলেই হয়েছে। ব্যাপারটি দেখা হচ্ছে।” তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার চিরন্তন নাগও। তিনি বলেন, “বিষয়টি গঙ্গারামপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিককে তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মামলার তদন্তকারী অফিসার সিধাংশু ঘোষ বলেন, “খুব সমস্যায় আছি। এই নিয়ে কোনও কথা বলব না।”
ওই তরুণীর কাকা জাহাঙ্গিরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান। তিনি বলেন, “এর আগেও গ্রামে সালিশি করে ওদের বোঝানো হয়। মেয়ে রাজি হয়নি। থানাতেও ভাইঝি ওই ছেলের সঙ্গে সংসার করবে বলে জানানোয় আমাদের কার্যত তা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না” তবে ওই দম্পতির জেল হয়েছে, সে খবর তিনি জানতেন না বলে জানিয়েছেন।
জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিপ্লব মিত্র অবশ্য বলেন, “ভিন ধর্মে বিয়ে করলে তাঁদের বিয়ে ভাঙার জনা চাপ দেওয়া অনুচিত। এই নিয়ে সালিশি সভাও করা ঠিক নয়। গঙ্গারামপুরে কী হয়েছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।” কুমারগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক মাহমুদা বেগমও বলেন, “দু’জন সাবালক ছেলেমেয়ে যে ধর্মেরই হোক না কেন, বিয়ে করতেই পারেন। এই ব্যাপারে নাক গলানো বা বাধা দেওয়া অনুচিত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.