হাসপাতাল চত্বরের ভেতরের রাস্তা থইথই করছে নোংরা জলে। রাস্তার পাশেই নিকাশি নালা। সেটি বন্ধ হয়ে পড়ায় জল উঠে এসেছে রাস্তায়। হঠাৎ করে হাসপাতালে ঢুকতে গেলে মনে হতেই পারে নতুন জলাশয় আবার খোঁড়া হল কবে! কেননা, সেখানে নিশ্চিন্তে চরে বেড়াচ্ছে হাঁসের পাল। তার মধ্যে দিয়েই জলকাদা মাড়িয়ে রোগীদের পৌঁছতে হচ্ছে হাসপাতালে। যেখানে প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশী রোগী যাতায়াত করেন সেই হাসপাতালের এই ছবিটাই যেন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে মালদহের চাঁচলে। নোংরা আবর্জনা জমে থাকায় গোটা চত্বরেই বেড়েছে প্রবল মশার উৎপাত। পাশেই হাসপাতালের শয্যায় থাকা কয়েকশো রোগীকে নাজেহাল হতে হচ্ছে মশার দাপটে। কেবল রোগী বা তাদের আত্মীয়রাই নন, ওই ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও। নিকাশি নালা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ার পাশাপাশি আবাসন ও দোকানের ব্যবহার করা জল রাস্তায় এসে জমা হয়ে থাকায় ওই পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর ও জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। চাঁচলের সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন বিশ্বাস বলেছেন, “সামনেই বর্ষা। তার আগে অবস্থা না বদলালে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠবে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হয়ে পড়ায় মূলত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।” |
স্বাস্থ্য ও পিএইচই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এতদিন হাসপাতাল চত্বরের জল নিকাশি নালার মাধ্যমে পিছনের মাঠে ফেলা হত। বাড়ি, দোকান গড়ে ওঠায় তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে নিকাশি নালার জল উপচে উঠে আসছে রাস্তায়। এরই পাশাপাশি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পিএইচইর জল। চাঁচলের ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক অশোক সরকার বলেছেন, “দ্রুত যাতে হাসপাতালে জল নিকাশির সমস্যা মেটানো যায় তা দেখা হচ্ছে। ব্লক প্রশাসনকে পরিকল্পনা তৈরির কথা বলা হয়েছে।” পিএইচই সূত্রেই জানা গিয়েছে, হাসপাতাল চত্বরের আবাসনে ৩৮টি জলের ট্যাঙ্ক রয়েছে। পাম্প চালিয়ে তা ভরতে সময় লাগে এক ঘন্টা। দিনে ৩ বার তা চালানো হয়। এর মধ্যে বেশ কিছু ট্যাঙ্ক ফুটো হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি বেশ কিছু কর্মীর আবাসনে জলের ট্যাঙ্ক নেই। ফলে জল ধরে রাখার জন্য চাপ দেওয়ায় প্রতিবার ৩ ঘন্টা করে পাম্প চালাতে বাধ্য হন পিএইচই দফতরের কর্মীরা। ফলে ব্যবহার করা বিপুল পরিমাণ বাড়তি জল এসে জমা হয় রাস্তায়। শুধু তাই নয়, এজন্য বাড়তি ৬ ঘন্টা বিদ্যুতেরও অপচয় হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চললেও কারও কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য দফতর জানায়, আর্থিক সমস্যার জন্য ফুটো ট্যাঙ্ক মেরামত বা নতুন ট্যাঙ্কের ব্যবস্থা করতে পারেননি তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে নিকাশি নালার ব্যবস্থা হলে সমস্যা অনেকটাই মিটত। কেননা হাসপাতালে ব্যবহার করা জল তো সারাজীবন কেউ মাঠে ফেলতে দেবে না। দু’বছর আগে প্রশাসনকে জানানো হলেও সমস্যা মেটেনি। পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ইন্দ্রনারায়ণ মজুমদার বলেন, “হাসপাতালের ভবন সংস্কার বা জলের ট্যাঙ্ক মেরামতির জন্য তো আমরা কোনও বরাদ্দ পাই না। ওরা টাকা দিলে কাজ করে দিই।” |