তিনি এইচ আই ভি আক্রান্ত। এই রোগের কথা জানার পরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এক যুবক। কিন্তু তাঁর রোগের খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় ছোট গাড়ির চালকেরা তাঁকে গাড়িতে করে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে রাজি হননি। এক সপ্তাহ পরে স্বাস্থ্যকর্মী সূত্রে খবর পেয়ে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে শুক্রবার রাতে ওই যুবককে মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
মানবাজারের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরজিৎ সিং হাঁসদা বলেন “স্বাস্থ্যকর্মী সূত্রে জানতে পারি, মানবাজার থানা এলাকার বাসিন্দা ওই যুবক এইচ আই ভি রোগে আক্রান্ত। তিনি রাঁচির একটি বেসরকারি হাসপাতাল পরীক্ষা করে রোগের কথা জানতে পারেন। এখানেও প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা করার পরে আমরা জানতে পেরেছি, তিনি সত্যিই ওই রোগে আক্রান্ত। তাঁর স্ত্রীও এই রোগে আক্রান্ত। দম্পতির পাঁচ মাসের একটি শিশু কন্যাও আছে। খবর নিয়ে জেনেছি, ওই এলাকার কোনও গাড়ির চালক ওই যুবককে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে রাজি হননি।” গাড়ি চালকদের যুক্তি, গাড়িতে বাচ্চারাও চাপে। তাঁরা বসলে বাচ্চাদের মধ্যে এই রোগ ছড়াতে পারে। সুরজিৎবাবু জানান, মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে স্বাস্থ্য দফতরের প্রচার বিভাগের উদ্যোগে ওই গ্রামে এড্স বিষয়ক একটি শিবির করা হবে।
ওই যুবকের স্ত্রী বলেন, “আমার স্বামীরা চার ভাই। জমিজমা নেই। আড়াই বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে। কয়েক বছর ধরে আমার স্বামী বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকের কাজ করেছেন। এক বছর ধরে কাশি, জ্বর সারছিল না। দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছিল। অনেক জায়গায় চিকিৎসা করিয়েছি। কিছুতেই রোগ সারছিল না। একটু কথা বললেই হাঁপাচ্ছেন।” আর ওই যুবকের কথায়, “শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে যাই। কী ভাবে এই রোগ হল জানি না। এক বছর ধরে চিকিৎসা করিয়ে সর্বসান্ত হয়ে গিয়েছি। সম্প্রতি রাঁচির এক বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করে জানতে পারি, আমার এড্স হয়েছে। ওই দিনই বাড়ি ফিরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করি।” তাঁর আক্ষেপ, “মানবাজার থেকে আমাদের গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। শরীরের এই অবস্থায় বাসে চড়তে কষ্ট হয়। কিন্তু কোনও গাড়ি আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে রাজি হয়নি।”
এ দিকে, শনিবার ওই গ্রামে গেলে ছোট গাড়ির চালকেরা কথা বলতে রাজি হননি। এক গাড়ির চালক বলেন, গ্রামে এমনিতে যাত্রী কম মেলে। তার ওপর যদি শোনে এড্স আক্রান্ত রোগী আমার গাড়িতে চেপেছেন, তা হলে কেউ আমার গাড়িতে আর চাপবেন না। ওই গ্রামের বাসিন্দা সুজিত চৌধুরী বলেন, “ঘটনা জানার পরে আমি স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তির চেষ্টা চালাই। আমি নিজেও চেষ্টা করে গাড়ি জোগাড় করতে পারিনি। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু মানবাজার লাগোয়া গ্রামে তাঁর আত্মীয়রা আছেন। দেখভাল করতে পারবেন এই ভেবে মানবাজারে ভর্তি করানো হয়েছে।”
স্বাস্থ্যকর্তা সুরজিৎবাবু বলেন, “এইসব রোগের চিকিৎসার জন্য কাছাকাছি মেদিনীপুরে চিকিৎসা পুনর্বাসনকেন্দ্র রয়েছে। ওই দম্পতিকে ওখানেই পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।” |