ডায়ালিসিস পরিষেবা চালু হল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রাজ্যে পালাবদলের দশ মাসের মাথায়। তিনটি মেশিন কেনা হয়েছিল আগেই। কিন্তু ডায়ালিসিস পরিষেবা চালু হচ্ছিল না। স্বভাবতই ক্ষোভ ছড়িয়েছিল রোগী ও তাদের পরিজনদের মধ্যে। শেষমেশ শনিবার মেডিক্যালে ডায়ালিসিস পরিষেবার উদ্বোধন করলেন রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী তথা মেদিনীপুর মেডিক্যালের পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান সৌমেন মহাপাত্র। উপস্থিত ছিলেন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শুদ্ধধন বটব্যাল, হাসপাতাল সুপার রামনারায়ণ মাইতি প্রমুখ। মন্ত্রী বলেন, “এ বার আর ডায়ালিসিসের জন্য রোগীদের কলকাতায় যেতে হবে না। এখানেই এই পরিবেষা মিলবে।”
পশ্চিম মেদিনীপুর ‘পিছিয়ে পড়া’ জেলা হিসেবে পরিচিত। জেলায় গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। ব্লক হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পরিষেবা মেলে না-বলেই অভিযোগ। জেলার অধিকাংশ মানুষই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপর ‘ভরসা’ করেন। গোয়ালতোড়-লালগড় থেকে কেশিয়াড়ি- নয়াগ্রাম প্রভৃতি এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও এখানে রোগী আসে। স্বাভাবিক ভাবেই রোগীর ‘চাপ’ রয়েছে। মেদিনীপুর মেডিক্যালে এখন ৫৬০টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই রোগী থাকে প্রায় ৭০০-এর কাছাকাছি। অনেকেরই ঠাঁই হয় মাটিতে। এরই মধ্যে ডায়লিসিস পরিষেবা না থাকায় রোগীদের ভোগান্তি বাড়ত। বিশেষ করে বর্ষায়। এই সময় সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা বাড়ে। এঁদের একাংশের ডায়ালিসিস প্রয়োজন হয়। কিন্তু উপায় না-থাকায় এত দিন তঁদের কলকাতায় ‘রেফার’ করা হত। |
কিন্তু মেশিন কেনা হয়ে পড়ে থাকলেও এতদিন ডায়ালিসিস চালু করা যায়নি কেন? কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনায় ভুল ছিল। যে মেশিন কেনা হয়েছিল, তা চালু হলে রোগীর পরিবারের লোকজনই সমস্যায় পড়তেন। তাঁদের অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হত। হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রায় তিন বছর আগে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে তিনটি ডায়ালিসিস মেশিন কেনা হয়। কিন্তু এই মেশিনে একবার ডায়ালিসিস হলেই ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা খরচ পড়ত। পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো এলাকায় রোগীর পরিজনদের পক্ষে যা বহন করা সম্ভব নয় বলেই কর্তৃপক্ষের মত। অবশ্য রোগীর পরিবারের লোকজনদেরও একই বক্তব্য। অথচ, এমন মেশিনও রয়েছে যাতে একবার ডায়লিসিস করতে অনেক কম খরচ পড়বে। সম্প্রতি সেই মেশিনই আনা হয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এখানে ৫০০ টাকাতেই ডায়ালিসিস পরিষেবা মিলবে। গরিব মানুষের জন্য বিশেষ ছাড়ও রয়েছে।
শুধু ডায়ালিসিস পরিষেবার উদ্বোধনই নয়, শনিবার হাসপাতাল চত্বরে রোগীর পরিজনদের জন্য একটি বিশ্রামকক্ষও চালু হয়েছে। বিশ্রামকক্ষের উদ্বোধন করেন মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতি। ওই দিন রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকও হয়। মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের উপস্থিতিতে এই বৈঠকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়। এখন হাসপাতালে ৫৬০টি শয্যা রয়েছে। রোগীর ‘চাপ’ যে ভাবে বাড়ছে, তাতে অবিলম্বে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো জরুরি। আপাতত, ১৫০ টি শয্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, কর্মীর অভাবে তা চালু করা যাচ্ছে না। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ ক্ষেত্রে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। |