সন্ধ্যার পর লোডশেডিং হলে অন্ধাকারে ডুবে যেত গোটা হাসপাতাল। জেনারেটর থাকলেও তা চালিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে লেগে যেত আরও বেশ কিছুটা সময়। ওয়াডের্র মধ্যে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে এমন দৃশ্যও দেখা গিয়েছে। লোডশেডিংয়ের ফলে গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন আটকে যাওয়ার অভিযোগও উঠেছে বারবার। পাশাপাশি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা রোগীদের অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ছিলই। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে দীর্ঘদিনের এই সব সমস্যার সমাধানে প্রায় এক বছর আগে থেকে নেওয়া হয় ব্যবস্থা। শুরু হয়েছিল আপৎকালীন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ। রবিবার হাসপাতাল চত্বরে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা-সহ তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন হল।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এবং বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠের বিধায়ক তহবিলের টাকায় বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ হয়েছে। খরচ হয়েছে ১০ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। এ দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গোপাল শেঠ, বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, হাসপাতালের সুপার গয়ারাম নস্কর, বনগাঁর মহকুমাশাসক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। গোপালবাবু বলেন, “হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য মোট ২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলে হাসপাতালে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না।” হাসপাতাল সূত্রেও জানানো হয়েছে, নতুন বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় লোডশেডিংয়েও কোনও সমস্যা হবে না। বিদ্যুতের অভাবে বন্ধ হবে না অস্ত্রোপচার। |
হাসপাতালে এ দিন নতুন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার পাশপাশি চালু হয়েছে সদ্যোজাতদের জন্য ‘সিক নিওনেটাল সাপোর্ট ইউনিট’-এর মতো আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। সাত লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই আধুনিক ব্যবস্থায় জন্মের পর এক মাস পর্যন্ত অসুস্থ সদ্যোজাতদের চিকিৎসা করা হবে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ইউনিটে ৬টি শয্যা থাকবে। গয়ারামবাবু বলেন, “এর ফলে অসুস্থ সদ্যোজাতদের কলকাতার হাসপাতালে পাঠানোর প্রবণতা অনেকটাই কমানো যাবে। পাশাপাশি ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ তৈরির কাজও চলছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে তার কাজও শেষ হয়ে যাবে। ওই ইউনিটে ৩০টি শয্যা থাকবে।” পরিকাঠামোর উন্নতিতে সমস্ত ব্যবস্থা চালু হয়ে গেলে রোগীদের কলকাতা বা জেলা হাসপাতালে ‘রেফার’ করা যেমন কমবে তেমনই শিশুমৃত্যুও কমানো যাবে বলে হাসপাতালের চিকিৎসকদের অভিমত। সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যে বেশ কিছু শিশুমৃত্যুর ঘটনার পরে রাজ্য সরকার বেশ কিছু হাসপাতালে এই ব্যবস্থা চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে।
এ দিন বনগাঁ হাসপাতালে দু’টি ভবনের মধ্যে চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের যাতায়াতের জন্য করিডরের উদ্বোধন হয়। এতদিন এটা একটা গুরুতর সমস্যা ছিল। এ ছাড়া হাসপাতালের সবচেয়ে গুরুত্বপর্ণ অপারেশন থিয়েটারেরও সম্প্রসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অপারেশন থিয়েটারটি অপরিসর হওয়ার কারণে একসঙ্গে এতদিন একাধিক অপারেশন করা যেত না। অপারেশন থিয়েটার সম্প্রসারণের পরে সেই সমস্যা থাকবে না। পাশাপাশি চিকিৎসকদের ঘর, রোগীর বাড়ির লোকজনের জন্য বিশ্রামাগার, পানীয় জলের ব্যবস্থা, শৌচাগার প্রভৃতির ব্যবস্থা হচ্ছে। প্রসূতি বিভাগ এবং মর্গের সংস্কারের কাজও শুরু হয়েছে। মেডিসিন বিভাগ থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। |
বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নতিতে যে সব প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে সে গুলি যাতে দ্রুত ও সঠিক ভাবে রূপায়িত হয় সে জন্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর কাছে এ ব্যাপারে দাবিও জানানো হয়েছে।” সুপার জানান, শুধু এই সব ব্যবস্থাই নয়, হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ইকো কার্ডিওগ্রাফি এবং একটি আলট্রা সোনোগ্রাফি যন্ত্রের জন্য সাংসদ গোবিন্দ নস্করের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। কয়েক মাস আগেই হাসপাতালে প্রসূতি ও নবজাতকদের চিকিৎসায় শুরু হয়েছে ‘ক্যাশলেস’ ব্যবস্থা। এর ফলে রোগীর পরিবারকে আর বাইরে থেকে ওষুধপত্র কিনতে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে না। কিনতে হবে না চিকিৎসার সরঞ্জামও। এ সব খরচ বহন করবেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তাঁরা রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধপত্র কিনতে বাধ্য করেন। এ ব্যাপারে সুপার বলেন, “এখন থেকে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পাশাপাশি তিনি জানান, রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসক, নার্স বিশেষ করে আয়াদের ব্যবহার নিয়েও বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। পরিকাঠামো উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়টির দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।
সন্ধের পর হাসপাতাল চত্বরে অসামাজিক কাযর্কলাপ নিয়ে নানা সময়ে অভিযোগ উঠেছে। এমনকী রোগী, চিকিৎসকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। হাসপাতালের নিরাপত্তার কথা ভেবে এ বার চারপাশে প্রাচীর দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। |