|
|
|
|
দুই কিশোরীকে ‘পাচারের চেষ্টা, দেগঙ্গায় গ্রেফতার ৩ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দেগঙ্গা |
যানজটে আটকে গেল ‘পুলিশ’ স্টিকার সাঁটা গাড়ি। আর তাতেই ‘উদ্ধার’ করা গেল দুই কিশোরীকে। ওই গাড়িতে তুলে তাদের পাচারের চেষ্টা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। রবিবার দুপুরে দেগঙ্গার হামাদামা বাজারের কাছে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে এক তরুণী-সহ তিন জনকে। ধৃতদের এক জন নিজেকে ‘রেলপুলিশের কর্তা’ বলে পরিচয় দেয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়ি বেশ দ্রুত আসছিল। কিন্তু হামাদামা বাজারের কাছে যানজটে আটকে পড়ে। আশপাশের লোকজনের তখন নজরে পড়ে, গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দু’টি মেয়ে ছটফট করছে। জনতা গাড়ি ঘিরে ধরে। শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। গাড়ির ভিতরে বসা এক যুবক নিজের পরিচয় দেন রেলপুলিশের বারাসত শাখার অফিসার বলে। ইতিমধ্যে দরজা খুলে নেমে এসেছে ওই দুই কিশোরী। বিপদ বুঝে গাড়ির আরোহী আর এক মহিলাও চম্পট দেন। এই সময়ে যানজট একটু কাটতেই চালক গাড়ি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। পিছু ধাওয়া করে জনতা। তত ক্ষণে খবর পৌঁছে গিয়েছে দেগঙ্গা থানাতেও। ওসি গৌতম মিত্র জিপ নিয়ে গাড়িটিকে তাড়া করেন। হাড়োয়া রেললাইনের কাছে গাড়ি আটকায় পুলিশ-জনতা। চালক-সহ বাকিদের ধরে শুরু হয় গণধোলাই। পুলিশ সকলকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
ধৃতদের নাম শেখ ইমরান, মহিরন খাতুন এবং চালক জাহির বাবর। বাবরের বাড়ি হাবরার মথুরাপুরে। ইমরান এয়ারপোর্ট ২ নম্বর এলাকার বাসিন্দা। মহিরনের বাড়ি দেগঙ্গার পূর্ব চ্যাংদানা গ্রামে। অন্য যে মহিলা পালিয়েছেন, তাঁর খোঁজ মেলেনি।
পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন, থানায় বসেও নিজেকে প্রথমে ‘রেল পুলিশের অফিসার’ বলেই পরিচয় দিয়েছিলেন ইমরান। পরে জানান, এয়ারপোর্টের কাছে একটি কলসেন্টার চালান তিনি। সেখানেই নিয়ে যাচ্ছিলেন মেয়ে দু’টিকে। কিন্তু তাদের জোর করে কেন গাড়িতে তোলা হল, তার সদুত্তর নেই ইমরানের কাছে। সংবাদমাধ্যমের কাছে ওই যুবক আবার দাবি করেন, তিনি এক পুলিশ অফিসারের ছেলে। কল সেন্টারের কাজের জন্যই মেয়েদের নিতে এসেছিলেন। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। গাড়িটি সত্যিই কোনও পুলিশ অফিসার ব্যবহার করেন কি না, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, দেগঙ্গার কুমাড়ালির বাসিন্দা ওই দুই কিশোরী এ বার স্থানীয় হাইমাদ্রাসা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। তাদের দু’জনকে গত কয়েক মাস ধরেই ‘কল সেন্টারে’ মোটা টাকার চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ‘প্রলোভন দেখাচ্ছিল’ মহিরন। সংসারের অভাব ঘোচাতে মহিরনের প্রস্তাবে রাজিও হয়েছিল তারা। এই দিন সকালে গাড়ি নিয়ে মহিরন যায় মেয়ে দু’টির কাছে। বাড়ি থেকে ডেকে আনে তাদের। ওই দুই কিশোরী জানিয়েছে, ‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে বসেছিল আরও এক মহিলা-সহ দু’জন। তাঁদেরই এক জনকে ‘বস’ বলে পরিচয় করিয়ে দেয় মহিরন। কথাবার্তা চলার সময়ে হঠাৎই মেয়ে দু’টিকে জোর করে গাড়িতে টেনে তুলে নেওয়া হয়। পুলিশের কাছে তারা দাবি করেছে, তাদের ‘পাচারের উদ্দেশ্যেই’ চাকরির প্রলোভন দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সে কথা বুঝতে পেরেই তারা গাড়ি থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করছিল। তখনই গাড়িটি যানজটে আটকে যায়। |
|
|
|
|
|