প্রতিশ্রুতি ছিল, শাসক দল বাহুবলীদের সহিত দূরত্ব রচনা করিবে, তাহাদের প্রশ্রয় দিবে না এবং সরকারও কঠোর হাতে দুষ্কৃতী দমন করিবে। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ সিংহ যাদবকে ভোটদাতাদের কাছে এই প্রতিশ্রুতি দিতে হইয়াছিল, কেননা তাঁহার পিতা মুলায়ম সিংহ যাদবের পূর্বতন সরকার ক্ষমতায় থাকা কালে বাহুবলীদের দৌরাত্ম্য উত্তরপ্রদেশে চরম আকার ধারণ করিয়াছিল। পরিণামে ২০০৭ সালে দল ধরাশায়ী হয়। ক্ষমতায় ফিরিবার জন্য অখিলেশ যাদবকে অতএব সুশাসন, আইনের শাসনের আশ্বাস দিতে হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী পদে নিযুক্ত হইয়া মন্ত্রিসভা তথা সরকার গঠনের প্রথম দিনটিতেই দেখা গেল, অখিলেশ ভোটদাতাদের সঙ্গে প্রতারণা করিয়াছেন। তাঁহার ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভায় ২৮ জনই বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত বাহুবলী।
কেহ-কেহ অখিলেশ যাদবের এই মন্ত্রী-বাছাইকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখিতে চাহিয়াছেন। তাঁহাদের বক্তব্য, বেচারা নবীনকুমার সবে সিংহাসনে বসিয়াছেন, তাঁহাকে অন্তত তিন বা ছয় মাস সময় দেওয়া হউক। কিন্তু প্রশ্নটি কি সময়ের? এই তিন বা ছয় মাস রাজ্য যে খুন-রাহাজানি-ডাকাতি ও অপহরণে অভিযুক্ত এবং প্রায়শ জেল-খাটা বাহুবলীদের দ্বারা শাসিত হইবে, তাহাকে কি আইনের শাসন বলা যাইবে? মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ নিজেই তাঁহার মন্ত্রিসভায় রাজা ভাইয়ার অন্তর্ভুক্তি সম্পর্কে সাফাই দিয়াছেন, উনি তো কৃতকর্মে সাজা পাইয়াই গিয়াছেন, জেল খাটিয়াছেন, তবে এখনও তাঁহার অতীত লইয়া টানাহ্যাঁচড়া কেন? কিন্তু রাজা ভাইয়া, মেহবুব আলি, আজম খান কিংবা শিবপাল যাদবের মতো মন্ত্রীদের সকলের বিরুদ্ধেই তো ফৌজদারি মামলা অমীমাংসিত। যাঁহারা জেলে গিয়াছেন, লখনউয়ে ক্ষমতা-বদলের সঙ্গে-সঙ্গে এত দ্রুত তাঁহাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহৃত হইয়াছে যে, ‘কৃতকর্মের সাজা’ যাহাকে বলে, তেমন কিছুই তাঁহারা পান নাই। তাঁহারাই যখন আজ অখিলেশের মন্ত্রিসভা আলো করিয়া বসেন, তখন সংশয় হয়, অন্যান্য নির্বাচনী আশ্বাসের মতো আইনের শাসনের আশ্বাসটিও ছিল একটি পরিকল্পিত ধাপ্পা।
উত্তরপ্রদেশ রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের তালিকায় একেবারে শীর্ষ স্থানাধিকারী। তাহার ঠিক নীচেই ছিল বিহারের স্থান। নীতীশ কুমার কিন্তু বিহারের সেই বদনাম ঘুচাইতে সচেতন প্রচেষ্টা চালাইয়াছেন। বস্তুত, উত্তরপ্রদেশে মায়াবতীর শাসনকালেও অন্য ব্যাপারে যে সমস্যাই থাক, নিরাপদে রাস্তা দিয়া চলাফেরা করা যাইত এবং আইনশৃঙ্খলার প্রভূত উন্নতি হইয়াছিল। এ বার কিন্তু রাজ্যের নবনির্বাচিত বিধায়কদের প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি (১৮৯ জন) বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত। এমন কেহ-কেহ আছেন, যাঁহাদের বিরুদ্ধে বহু খুনের মামলা পর্যন্ত রহিয়াছে, তদুপরি অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, ডাকাতির অভিযোগ তো আছেই। এত জন আসামি যদি জনাদেশ পাইয়া বিধানসভায় পৌঁছাইতে পারেন, তবে তন্মধ্যে জনা ত্রিশেক তো মন্ত্রিসভায় স্থান পাইবেনই। হিন্দি বলয়ের রাজনৈতিক সংস্কৃতিই যদি বাহুবলীদের বীরের সম্মান দেয়, তবে সুশাসন সেখানে অধরাই থাকিয়া যাইবে। জয়োৎসব উদ্যাপনে রত দলীয় সমর্থকদের তাণ্ডবের দৃশ্য ইতিমধ্যেই প্রত্যক্ষ করা গিয়াছে। অখিলেশ সিংহ যাদব যদি তাঁহার প্রতিশ্রুতি পালনে মনোযোগী না হন, তবে উত্তরপ্রদেশের উচ্ছৃঙ্খলতা ও নৈরাজ্য ক্রমশ বাড়িতেই থাকিবে। |