|
|
|
|
সম্পাদক সমীপেষু... |
সাহিত্য না বাঁচলে ভাষা বাঁচবে? |
আমি বাংলা সাহিত্যের ছাত্র। বাংলা ভাষার একজন লেখক। সারা জীবন বাংলায় সাংবাদিকতা করে এসেছি। ‘কে পড়বে কেনই বা’ এবং ‘বাংলার পড়ুয়ারা সেই তিমিরেই থাকবে’ (২১-২) লেখা দুটি পড়ে বাংলা ভাষার কারবারি হিসাবে আমার কিছু মতামত সবিনয় জানাচ্ছি।
১) মুখের ভাষা হিসাবে বাংলা কোনও দিনই বিলুপ্ত হবে না। কিন্তু আগামী দিনে ঋজু শুদ্ধ সাবলীল বাংলা গদ্য লেখার লেখক বেশি পাওয়া যাবে না। এর কারণ, প্রাথমিক থেকে স্কুলে বাংলা ভাষা শিক্ষাকে কোনও গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না। আমি প্রতি বছরই বিভিন্ন কর্মশালার মাধ্যমে শহরে ও গ্রামে ‘বসে আঁকো’-র মতো বাংলা ও ইংরেজি লেখার প্রতিযোগিতা করি। দেখেছি, অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী ইংরেজি তো ছেড়েই দিলাম, সাবলীল ভঙ্গিতে বাংলা ভাষায় একটি প্যারাগ্রাফও লিখতে পারে না। সকলের ধারণামাতৃভাষা সহজাত, আলাদা করে শেখার দরকার নেই। এটা ভুল ধারণা।
২) উচ্চ মাধ্যমিকের পর ছেলেমেয়েদের যখন সাহিত্য বোঝার মতো মানসিকতা জন্মায়, ঠিক সে সময়েই কলেজে উঠে আর বাংলা পড়তে হয় না। এটা আত্মঘাতী নীতি। ফলে, বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে এত দিন ছেলেমেয়েদের যে আবশ্যিক পরিচয় গভীরতর হত, এখন আর তা হয় না। বাংলার প্রতি মমত্ববোধও জন্মায় না।
৩) টিভি-কম্পিউটার-সেলফোন ইত্যাদি এসে যাওয়ায় ছেলেমেয়েরা এখন আর বাইরের বই পড়ে না। শহরের অধিকাংশ ছেলেমেয়ে এবং সম্পন্ন পরিবারের ছেলেমেয়ে এখন সবাই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ে। যে মাধ্যমেই পড়ুক না কেন, স্কুলে ভাষা-সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় নিবিড়তর না-হলে ভাষার প্রতি মমত্ববোধ গড়ে ওঠে না। বই পড়ার অভ্যাসকে আর স্কুলে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এখনকার শিক্ষা সম্পূর্ণ কোচিং ক্লাস-নির্ভর। কিন্তু তার জন্যও ছোটবেলা থেকে বই পড়া দরকার। এই কথাটাই মাস্টারমশাইরা বোঝান না। কারণ, তাঁরাও তো পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বই পড়েননি। সাহিত্য না বাঁচলে ভাষা বাঁচবে কী করে। বাংলা সাহিত্যকে এখন বাঁচিয়ে রেখেছে জেলার মানুষরা। কিন্তু সেখানেও এখন যে ভাবে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের বিস্তার ঘটছে, তাতে বাংলা সাহিত্যের বইয়ের বাজার ক্রমশ ছোট হবে।
৪) বাংলা ভাষাকে বাঁচাতে গেলে বাংলা ভাষা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। সবার আগে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ চাই। সহজ ইংরেজি আন্দোলনের ধাঁচে সহজ বাংলা-প্রসার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ‘সপ্রাণ দীপ্রতা’, ‘উপেক্ষার বহুকালীন অন্ধকার’, ‘দেদীপ্যমান’ প্রভৃতি অধ্যাপকী বাংলার অবসান ঘটিয়ে বাংলা সংবাদপত্র এখন যে সহজ, মুচমুচে ভাষা ব্যবহার করছে, সেই ধরনের বাক্যরীতিতে ছাত্রছাত্রীদের অভ্যস্ত করাতে হবে। ইংরেজি শিখতেই হবে, কিন্তু বাংলাকে বাদ দিয়ে নয়। এ জন্য পশ্চিমবঙ্গের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিতে বাংলাকেও প্রথম ভাষার সমমর্যাদা দিয়ে শেখাতে হবে। পশ্চিমবাংলার সমস্ত স্কুলে বাংলা শিক্ষাকে আবশ্যিক করতে হবে।
সবশেষে বলি, রাজ্যের সংস্কৃতি দফতরের মধ্যে ভাষা একটি আলাদা বিভাগ হবে। ভাষা ছাড়া সংস্কৃতি হয় না, শিক্ষাও হয় না। সাইনবোর্ডে বাংলা থাকল কি থাকল না, তাতে ভাষার কিছু যায়-আসে না। সাহিত্য বাঁচল কি মারা গেল, সেটাই ভাষার জীয়নকাঠি। |
পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা-৬৪
|
বাংলা নেই |
জাতীয় সড়ক ৬ নম্বরের পাশে স্থান নির্দেশক যে-সব ফলক লাগানো হয়েছে, তাতে সব লেখাই আছে হিন্দিতে এবং ইংরেজিতে। এমনকী জরুরি ফোন নম্বরগুলিও লেখা আছে শুধু হিন্দিতে। দেশটা পশ্চিমবঙ্গ, কিন্তু কোথাও বাংলা লেখা নেই। তবে একটা মজার ঘটনা দেখলাম বসন্তপুরে। বসন্তপুরে যে-ফলকটি আছে, তার উপরে কে বা কারা আলকাতরা লেপে দিয়েছে। মনে হয়, এটা কোনও বাংলাভাষাপ্রেমীর কাজ। কেন্দ্রীয় সরকারের ত্রিভাষা সূত্র ন্যাশনাল হাইওয়ের ক্ষেত্রে কাজ করেনি কেন, সেটাই জানতে চাই। |
সঞ্জয় চৌধুরী। ইন্দা, খড়্গপুর
|
উত্তরপত্র দেখারও কেন্দ্র থাকা জরুরি |
প্রায় প্রতি বছর মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের পর রাস্তার পাশে নর্দমায়, শৌচাগারে, ট্রেনের মেঝেতে বা বাসে মেলে নবীন পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র।
পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্ন আনা ও পরীক্ষার পর যথাস্থানে উত্তরপত্র পৌঁছে দেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তায়। প্রধান পরীক্ষকের কাছে সেগুলি পাঠানোর দায়িত্ব নেয় পর্ষদ বা সংসদ। গোল বাধে তার পর। পরীক্ষকেরই দায়িত্ব, তাঁর প্রধান পরীক্ষকের কাছ থেকে সেগুলি সংগ্রহ করা ও মূল্যায়নের পর সেখানেই জমা দেওয়া। পরীক্ষকের বাড়ি গঙ্গাসাগর আর প্রধান পরীক্ষকের বাড়ি কসবা হলেও নিয়ম একই। অসতর্কতায় যদি উত্তরপত্রের কিছু হয়, দায়িত্ব সংসদ বা পর্ষদের নয়, ওই পরীক্ষকের।
পরীক্ষকের দায়িত্ব উত্তরপত্রের যথাযথ মূল্যায়ন। খাতার নিরাপত্তার দায়িত্ব তাঁর উপর ছেড়ে পর্ষদ বা সংসদ কী ভাবে নিশ্চিন্ত থাকে? পথিমধ্যে এমন কিছু ঘটতেই পারে, যার জন্য উত্তরপত্র খোওয়া গেল! পরীক্ষক দায়ী না-ও হতে পারেন। পরীক্ষাকেন্দ্রের মতো উত্তরপত্র মূল্যায়ন-কেন্দ্রেরও ব্যবস্থা করা যায় কি না, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে ভাবতে অনুরোধ করছি। পরীক্ষকরা সেখানে যাবেন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবেন, জমা দিয়ে ফিরে আসবেন।
পরিচিত এক প্রধান শিক্ষক জানালেন, তাঁর স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশাসনিক বন্দোবস্তের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক অন্যায় আবদার সহ্য করতে হয়। শোনার কেউ নেই। যে-পরিমাণ বরাদ্দ এই খাতে আসে, তা-ও পর্যাপ্ত নয়। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। |
দীপ্তেশ মণ্ডল। চালুয়াড়ি, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা |
|
|
|
|
|