ঝাড়খণ্ডে লাতেহারের জঙ্গলে মণিপুরী জঙ্গিদের খোঁজে অভিযানে নেমেছে যৌথ বাহিনী। মাওবাদী জঙ্গিদের মদত দেওয়ার নেপথ্যে মণিপুরের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন পিএলএ-র জঙ্গিরা বড়-সড় ভূমিকা নিয়েছে বলে দাবি সিআরপি-র। এক সঙ্গে দু’টি গোষ্ঠীর জঙ্গিদের নিকেশ করার লক্ষ্যে রাজ্যে এই নয়া অভিযানের নাম ‘অপারেশন হপ-টু’।
লাতেহারের সরজুর জঙ্গলে চলতি মাসের গোড়ায় শুরু হয়েছে এই অভিযান। সিআরপি সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডে মাওবাদী-প্রভাবিত এলাকার অন্যতম ‘গর্ভগৃহ’ লাতেহার-পলামু বা চাতরা জেলায় বিচ্ছিন্নতাবাদী মণিপুরী জঙ্গিদের সঙ্গে মাওবাদীদের সংস্রবের খবর পেয়েই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ঝাড়খণ্ডের এই অঞ্চল থেকে ছত্তীসগঢ়ের জঙ্গলে ‘পালিয়ে’ যাওয়াও সহজ। জঙ্গলে-ঘেরা রাজ্যের এই ভৌগোলিক চরিত্রের কথা মাথায় রেখেও প্রতিবেশী রাজ্যগুলির মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোয় জোর দিচ্ছেন ঝাড়খণ্ডে সিআরপি-র কর্তারা। তবে এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া এলাকায় দু’টি রাজ্যের মধ্যে তথ্যে বিনিময়ে কোনও খামতি নেই বলেই দাবি সিআরপির আইজি ডি কে পাণ্ডের।
তবে মণিপুরী জঙ্গিদের ঝাড়খণ্ডে আনাগোনা নিরাপত্তা-বাহিনীর মাথাব্যথারবড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিআরপি সূত্রের খবর, বছর দেড়েক আগেই চাইবাসায় মামাইলে জঙ্গি-ঘাঁটিতে একটি অভিযানের পরে এ বিষয়ে কিছু তথ্যপ্রমাণ পেয়েছিল সিআরপি। মাওবাদীদের ঘাঁটি থেকে উদ্ধার হওয়া নথিতে মণিপুরের পিপলস লিবারেশন আর্মি ও মাওবাদীদের গোপন বৈঠকেরও সাক্ষ্য মেলে। মণিপুরেরজঙ্গিরা ঝাড়খণ্ডে এসে মাওবাদী জঙ্গিদের অস্ত্র ব্যবহারে তালিম দিয়েছে বলেও দাবি সিআরপি-র।
পরবর্তী পর্যায়ে দিল্লিতে ধরা-পড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের এক জঙ্গিও ঝাড়খণ্ডে তাদের যাতায়ায়ের কথা স্বীকার করে। এত দিন ঝাড়খণ্ডের ওড়িশা সীমানায় চাইবাসায় মণিপুরী জঙ্গিদের আনাগোনার কথা জানা গিয়েছিল। এ বার বিহার ও ছত্তীসগঢ় লাগোয়া পলামু-লাতেহার এলাকাতেও উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের প্রভাবের খবর মিলল। ঝাড়খণ্ডের চাইবাসার ডিআইজি, সিআরপি ভানুপ্রতাপ সিংহের কথায়, “আগে বেশ কয়েকটি অভিযানে আমরা মাওবাদীদের সঙ্গে উত্তর-পূর্বের বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠনগুলির যোগসাজশের তথ্যপ্রমাণ পেয়েছি। প্রযুক্তির ব্যবহার ও সামরিক অভিযান নিয়ে তাদের মধ্যে নিয়মিত তথ্য আদানপ্রদান চলে।”
এমনিতে ঝড়খণ্ডের ২৪টি জেলার মধ্যে ১৮টিই মাওবাদী-প্রভাবিত বলে মেনে নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সেখানে সিপিআই (মাওবাদী) ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের রমরমা। তাদের মধ্যে তৃতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি, ঝাড়খণ্ড লিবারেশন টাইগার্স, ঝাড়খণ্ড জনমুক্তি পরিষদ ও ঝাড়খণ্ড প্রস্তুতি কমিটি প্রমুখ রয়েছে। বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ভিড়ে উত্তর-পূর্বের জঙ্গি সংগঠনগুলি প্রভাব বাড়াতে থাকলে নিরাপত্তাবাহিনীর পক্ষে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হবে বলে মনে করে স্বরাষ্ট্র দফতর। |