ওড়িশার আদিবাসী-অধ্যুষিত কন্ধমাল ও গঞ্জাম জেলার সীমানা থেকে দুই ইতালীয় নাগরিককে অপহরণ করল মাওবাদীরা। ২০১১ সালে জেলাশাসক আর ভি কৃষ্ণকে মাওবাদীরা অপহরণ করায় অস্বস্তিতে পড়েছিল নবীন পট্টনায়ক সরকার। এই ঘটনায় রাজ্য ফের প্যাঁচে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। দুই বিদেশিকে মুক্তি দিতে মাওবাদীদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার মাঝরাত নাগাদ কয়েকটি স্থানীয় টিভি চ্যানেলে অপহরণের কথা প্রথম জানায় মাওবাদীরা। বসুকো পাওলো ও ক্লডিও কোলানজেলো নামে ওই দুই ইতালীয়ের মধ্যে এক জন গত ১০ বছর ধরে পুরীতে বসবাস করছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কন্ধমালের পুলিশ সুপার জে এন পঙ্কজ জানান, ১২ মার্চ ওই দুই ইতালীয় পুরীর কিছু পর্যটন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কন্ধমালের দারিঙ্গিবাদিতে আসেন। তখনই মাওবাদীদের কার্যকলাপ সম্পর্কে তাঁদের সতর্ক করে দিয়েছিল পুলিশ। বসুকো ও ক্লডিও জানান, তাঁরা কন্ধমালের প্রত্যন্ত এলাকায় যাবেন না। তার পরে তাঁদের গতিবিধির কথা পুলিশ আর জানতে পারেনি।
মাওবাদীদের দাবি, আদিবাসীদের ‘আপত্তিকর’ ছবি তোলার সময়ে ওই দুই বিদেশিকে অপহরণ করা হয়েছে। এই ধরনের ছবি তোলা ওড়িশায় নিষিদ্ধ। |
ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসেছে ওড়িশা ও কেন্দ্রীয় সরকার। ইতালীয়দের মুক্তির জন্য আইন মেনে যে কোনও ধরনের আলোচনায় রাজ্য রাজি বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। পাশাপাশি ঘটনার তীব্র নিন্দাও করেছেন তিনি। তাঁর মতে, কোনও সভ্য সমাজে এই অপরাধকে সমর্থন করা যায় না। পুলিশ জানিয়েছে, কোনও পদক্ষেপ করার আগে তারা আরও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে। তবে ঘটনাটি যে কন্ধমাল ও গঞ্জাম জেলার সীমানাতেই ঘটেছে তা মেনে নিয়েছেন কন্ধমালের জেলাশাসক আর পি পাটিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, অপহরণের পরে মাওবাদী দমন অভিযান আপাতত বন্ধ রেখেছে রাজ্য পুলিশ ও আধাসেনা।
ঠিক কবে বসুকো ও ক্লডিওকে অপহরণ করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মুখ্যসচিব বি কে পট্টনায়ক জানান, শনিবার মাঝরাতে ওই ঘটনা ঘটে। ক্লডিও ও বসুকোর সঙ্গে ছিলেন এক গাড়িচালক ও একজন রাঁধুনিও। মাওবাদীরা তাঁদের ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু মাওবাদীদের দাবি, ১৪ মার্চ দুই বিদেশিকে ‘বন্দি’ করেছে তারা।
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মালকানগিরির তৎকালীন জেলাশাসক আর ভি কৃষ্ণকে অপহরণ করে মাওবাদীরা। ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের তিন মধ্যস্থতাকারীর সাহায্যে তাঁর মুক্তির বিষয়ে মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনা চালায় ওড়িশা সরকার। শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণ মুক্তি পেলেও সরকার জঙ্গিদের সঙ্গে একটি ‘চুক্তি’ করেছিল বলে দাবি মাওবাদী মুখপাত্র সব্যসাচী পণ্ডার। মাওবাদী দমন অভিযান বন্ধ, মাওবাদী সন্দেহে আটক আদিবাসীদের মুক্তির পাশাপাশি ওই ‘চুক্তি’ পালনেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
কৃষ্ণের মুক্তির সময়ে মধ্যস্থতাকারীর কাজ করেছিলেন জন অধিকার মঞ্চের আহ্বায়ক দণ্ডপাণি মহান্তি। দুই ইতালীয়ের মুক্তির বিনিময়ে দাবি মেটানোর জন্য কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা না করতে মাওবাদী নেতৃত্বকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
শনিবারই ঘটনার কথা কেন্দ্রকে জানায় ওড়িশা সরকার। ইতালির দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিদেশ মন্ত্রক। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতে ভুবনেশ্বরে এসেছেন ইতালীয় কনসাল জেনারেল জোয়েল মেলচিওরি। স্বরাষ্ট্রসচিব ইউ এন বেহরার সঙ্গে কথাও বলেন
তিনি। মেলচিওরির বক্তব্য,“আমাদের আশা, ওই দুই ইতালীয় মুক্তি পাবেন।” এই ধরনের বিপদসঙ্কুল এলাকায় না যেতে ইতালীয় নাগরিকদের অনুরোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। |