অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় • নলহাটি |
নলহাটি পুরনির্বাচনের দিন ক্ষণ ঘোষণা না হলেও প্রশাসনের তরফে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। ইতিপূর্বেই এই পুরসভার ওয়ার্ডের সংখ্যা ১৬ থেকে কমিয়ে ১৫ করা হয়েছে। শনিবার ওয়ার্ড ভিত্তিক আসন সংরক্ষণের খসড়া তালিকাও প্রকাশ করল প্রশাসন।
রাজনৈতিক দলগুলিও পিছিয়ে নেই। ইতিমধ্যেই তৃণমূল ও কংগ্রেস কর্মীরা দেওয়াল দখল করে চুনকামও শুরু করে দিয়েছেন। প্রার্থীদের নাম লেখাই যা বাকি! এই অবস্থায় তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট গড়ে নির্বাচনে লড়বে কি না তা নিয়েই এখন শহর সরগরম। কারণ পাঁচ বছর আগে কংগ্রেসের দখল করা এই পুরসভার পুরপ্রধান বিপ্লব ওঝা কয়েক বছর আগে সাত জন কাউন্সিলরকে নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন। তার জেরে বিপ্লববাবুর সঙ্গে জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি-র দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ছেলে কংগ্রেসের অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে জেতানোর জন্য বিপ্লববাবু প্রচারে নামেন। অভিজিৎবাবু বিধায়ক হওয়ার পরেও সিরাজ সাহেবের সঙ্গে বিপ্লববাবুর সর্ম্পক মধুর হয়নি। সেই সিরাজ সাহেব মাস খানেক আগে কংগ্রেসের জেলা সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। ফলে আসন্ন পুর নির্বাচনে কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোট হবে কি না তা নিয়ে অনেকেই সংশয়ে।
পুরসভার আসন সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে দেখা যাচ্ছে, পুরপ্রধান বিপ্লব ওঝার নিজের ৪ নম্বর ওয়ার্ডটি তফসিলি সংরক্ষিত হয়ে গিয়েছে। ফলে বিপ্লববাবুকে এ বার অন্য ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে হবে। তিনি অন্য ওয়ার্ড থেকে লড়তেও প্রস্তুত। তাঁর কথায়, “৪ নম্বর ওয়ার্ডটি সংরক্ষিত হয়ে গিয়েছে। তাই এ বার অন্য ওয়ার্ড থেকে লড়তে হবে।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নলহাটির ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডটি তফসিলি সংরক্ষিত হয়েছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডটি তফসিলি মহিলা সংরক্ষিত এবং ৫, ৯, ১২ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে।
নলহাটি পুরসভায় গত নির্বাচনে (২০০৭) ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে কংগ্রেস ১১টি, সিপিএম ২টি, ফরওয়ার্ড ব্লক, সিপিআই ও নির্দল ১টি করে আসন পায়। কংগ্রেস পুরবোর্ড গঠন করলেও আড়াই বছর পরে বিপ্লববাবুরা আট জন তৃণমূলে যোগ দেন। এক ফরওয়ার্ড ব্লক এবং সিপিআইয়ের দুই কাউন্সিলর তাঁদের অনুসরণ করে তৃণমূলে যোগ দেন। ফলে নির্বাচনে একটিও আসন না পাওয়া তৃণমূল ১০ কাউন্সিলরকে নিয়ে পুরবোর্ডের দখল নেয়। এর প্রতিবাদে কংগ্রেস নেতা সিরাজ সাহেব শহরের বুকে মঞ্চ বেঁধে সাত দিন ধরে প্রতিবাদ সভা করেন। তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য ছিলেন বিপ্লববাবু। বিপ্লববাবুকে কংগ্রেস দমিয়ে রাখতে পারেনি। তাঁরই মদতে কংগ্রেস পরিচালিত কুরুমগ্রাম, কয়থা ১, বানিওড় ও বাউটিয়া পঞ্চায়েতের কংগ্রেস সদস্যেরা তৃণমূলে যোগ দেন। ফলে নলহাটি ১ পঞ্চায়েত সমিতির ওই চারটি পঞ্চায়েতও কংগ্রেসকে হারাতে হয়।
সিরাজ সাহেব অবশ্য বলেছেন, “সাংগঠনিক স্তরে পুরনির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। প্রতিটি ওয়ার্ডেই আমরা প্রার্থী দিতে চাই। তবে প্রদেশ নেতৃত্ব অন্য নির্দেশ দিলে তা মানতে বাধ্য।” অন্য দিকে বিপ্লববাবু বলেছেন, “জোটের পক্ষেই আমার মত। তবে শেষ পর্যন্ত কী হবে তা দল ঠিক করবে।” ওয়াকিবহাল মহলের মতে বিধায়ক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিপ্লববাবুর সর্ম্পক ভাল। আবার সিরাজ সাহেব অনেক ক্ষেত্রেই অভিজিৎবাবুর উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এক সময়কার ‘দলত্যাগী’ বিপ্লববাবুর উপর পুরনো রাগ তাঁর মন থেকে মোছেনি। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের সঙ্গে শরিক কংগ্রেসের সর্ম্পকও খুব একটা ভাল যাচ্ছে না। তাই আসন্ন পুর নির্বাচনে দুই দলের জোট হবে কি না তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। |