শ্রীলঙ্কায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে আমেরিকা যে প্রস্তাব এনেছে, সেই প্রস্তাব ভারত সমর্থন করবে কি না, তা নিয়ে আরএসএস-বিজেপির দ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে চলে এল। বস্তুত, শ্রীলঙ্কায় রাজাপক্ষের সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এলটিটিই নিধনের নামে বেছে বেছে তামিলদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই সংসদে সরব হয়েছে ডিএমকে, এডিএমকের মতো দলগুলি। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে লোকসভার বিরোধী দলনেতা সুষমা স্বরাজের নেতৃত্বে একটি দলের শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার কথা। এরই মধ্যে, আরএসএস জানিয়ে দিয়েছে, এই প্রস্তাব ভারতের সমনর্থন করা উচিত নয়।
মূলত আমেরিকার নেতৃত্বে ফ্রান্স এবং নরওয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে শ্রীলঙ্কা সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি প্রস্তাব এনেছে। এ ক্ষেত্রে ভারত যাতে ওই প্রস্তাব সমর্থন করে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই ইউপিএ সরকারকে চাপ দিয়েছে ডিএমকে, এডিএমকে-র মতো দলগুলি। সিপিআই-ও দক্ষিণ ভারতের এই দু’টি দলের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে। বিজেপি-ও মার্কিন প্রস্তাবের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে সে সময় বলেছিল, এ ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান কী হবে, তা স্পষ্ট করে জানাক। সে সময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, কোনও নির্দিষ্ট দেশের বিরুদ্ধে এই ধরনের প্রস্তাব ভারত সমর্থন করে না। তবে, এ ব্যাপারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরএসএস জানিয়েছে, এ ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত। বিজেপির ঘোষিত অবস্থানের একেবারে উল্টো পথে হেঁটে, আরএসএস জানিয়েছে, কোনও ভাবেই মার্কিন এই প্রস্তাবকে ভারতের সমর্থন করা উচিত নয়। আরএসএসের মুখপত্রে এ বিষয়ে যে সম্পাদকীয়টি লেখা হয়েছে, তা বলছে, “ভারত এখন যদি এই নিরপেক্ষ অবস্থান নেয়, তা হলে আখেরে ভারতেরই সমস্যা বাড়বে। যে ভাবে এই প্রস্তাব আনা হচ্ছে, তা যে কোনও দেশের গণতন্ত্রের পক্ষেই অনভিপ্রেত। এই পশ্চিমী আগ্রাসনের বিরোধিতা করে এই প্রস্তাব থেকে ভারতের দূরে থাকা উচিত।” আরএসএস-এর মুখপত্রে আরও লেখা হয়েছে, “শ্রীলঙ্কার সরকারকে দোষারোপ করার আগে ভাবতে হবে, এলটিটিই-ও কিন্তু নিরস্ত্র নয়। এলটিটিই-র হাতে অত্যাধুনিক মেশিনগান, রকেট লঞ্চার, ট্যাঙ্ক রয়েছে।” শুধু তা-ই নয়, আরএসএস-এর এই মুখপত্রটির আরও দাবি, এলটিটিই-ই শ্রীলঙ্কায় তামিলদের উপর অত্যাচার করছে। রাজাপক্ষে সরকার এ জন্যই এলটিটিই-নিধনের রাস্তায় হেঁটেছে। একই সঙ্গে সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির ক্ষমতায় আসার প্রসঙ্গটিও এসেছে সম্পাদকীয়টিতে। বলা হয়েছে, যে ভাবে আঞ্চলিক দলগুলি ক্ষমতায় এসে জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে, তা-ও ‘সমান চিন্তার’। কারণ এর ফলে জাতীয় দলগুলির গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। |