ইতিহাস অন্য ভাবে এগোলে, হলিউড থেকেই হয়তো দুনিয়া শাসন করতেন হিটলার। অন্তত তেমনটাই ঘটবে ধরে নিয়ে গোপনে তার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলেন ফুয়েরারের মার্কিনী ভক্তরা। তৃতীয় রাইখ তার এক বিশ্বস্ত চরকে সেখানে পাঠিয়ে রেখেছিলেন, পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করার জন্য।
কেমন ছিল সেই ব্যবস্থা?
হলিউডের চড়াই-উতরাই ধরে পরের পর তারকাদের প্রাসদোপম বাড়ি। জলপাই গাছের সারি। স্টিভেন স্পিলবার্গের বাড়ি থেকে মাইলখানেকও যেতে হবে না। নজরে আসবে ভাঙাচোরা এক খামার। নিস্তরঙ্গ-নির্জন, কিছুটা বা ভুতুড়ে। ১৯৩৩ সালে জনা পঞ্চাশ মার্কিন ফ্যাসিস্ত মিলে ৫৫ একর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই খামারকেই তাদের ঘাঁটি হিসেবে গড়ে তুলেছিল। বাইরের জগতের উপরে নির্ভর না করেই জীবনযাপনের জন্য সেখানে ছিল চাষবাসের যাবতীয় ব্যবস্থা ও ৩.৭৫ লক্ষ গ্যালন জল ধরে রাখার মতো কংক্রিটের তৈরি ট্যাঙ্ক। এমনকী, ডিজেল থেকে বিদ্যুৎ তৈরির একটি কেন্দ্রও। এ সবই বাইরে-বাইরে। খামারের নীচে তৈরি করা হয়েছিল বিশাল পাতালঘর। যুদ্ধের সময় বোমার হাত থেকে বাঁচতে! নয়-নয় করে ২২টি শোওয়ার ঘর ছিল সেখানে। এবং সেই অনুযায়ী অন্যান্য ব্যবস্থা।
ইতিহাসবিদ র্যান্ডি ইয়ং জানাচ্ছেন, মার্কিন নাৎসিদের ছক ছিল, হিটলার-বাহিনী আমেরিকা জয় করা মাত্রই তারা ওই ঘাঁটি থেকে বেরিয়ে আসবে। দখল নেবে দেশের শক্তিকেন্দ্রগুলির। কিন্তু ইতিহাসের খাত বইল অন্য দিকে। ১৯৪১-এর ৭ ডিসেম্বর বোমা পড়ল পার্ল হারবারে। তার পরে পরমাণু বোমার চরম প্রত্যাঘাত। এরই মাঝে মার্কিন গোয়েন্দারা খবর পয়ে যান এই নাৎসি ঘাঁটির। ওই ‘খামার’ থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় সবাইকে। ভিতরে ঢুকে দেখা যায়, কী কাণ্ড করে রেখেছিল দেশেরই কিছু ফাসিস্ত। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেই একতরফা ছিল না। হিটলারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগেই তৈরি হয়েছিল এই ঘাঁটি। খামারবাড়িটি আদতে ছিল হলিউড অভিনেতা উইল রজার্সের। ১৯৩৩ সালে তিনি জেসি মারফি নামে এক মহিলাকে তা বিক্রি করে দেন। মহিলার প্রকাশ্য পরিচয় ছিল খনি ব্যবসায়ী। হের শ্মিট নামে এক জার্মান ভদ্রলোকের অনুরক্ত ছিলেন তিনি। এই শ্মিটই আসলে হিটলারের পাঠানো চর। সে-ই জেসি মারফিকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ওই খামারবাড়িকে নাৎসিদের ঘাঁটি করে তুলেছিল। স্থানীয় একটি দৈনিক জানাচ্ছে, জরাজীর্ণ ‘খামারটি’ আর কিছু দিনের মধ্যেই বনভোজন আর বেড়ানোর জায়গা হিসেবে খুলে দেওয়া হবে। চলছে তার প্রস্তুতি। |