তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত দলীয় কর্মীদেরই গ্রেফতারের দাবি শুনলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। রাইপুরের একটি জনসভা থেকে ফেরার পথে শুক্রবার মুকুলবাবু যান জয়পুরের হরিণাশুলি গ্রামে। গত রবিবার সেখানেই খুন হয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী গোলাম শেখ। নিহতের পরিবার মুকুলবাবুর কাছে ওই খুনের ঘটনায় যুক্ত তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।
এ দিন প্রথমে সারেঙ্গার পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের রজত জয়ন্তী উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে মুকুলবাবু যোগ দিয়েছিলেন। চোলাই থেকে শুরু করে কলেজে কলেজে হিংসা নিয়ে যেখানে সিপিএম-তৃণমূলের ‘তিক্ততা’ চরমে, সেখানে সৌজন্যের নজির রেখে এ দিন মুকুলবাবুর পাশে একই মঞ্চে দেখা গেল রাইপুরের সিপিএম বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন কিস্কুকে। পাশাপাশি থাকলেন তৃণমূলের আরও চার বিধায়ক। তৃণমূল মন্ত্রীদের সুরে গলা মিলিয়ে উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাসও দিলেন উপেনবাবু। |
মুকুলবাবু ও উপেনবাবু ছাড়াও অনুষ্ঠানে ছিলেন রাজ্যের আবাসন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো, বড়জোড়ার বিধায়ক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, সোনামুখীর বিধায়ক দীপালি সাহা, ওন্দার বিধায়ক অরূপ খা। তার আগে কলেজের রজত জয়ন্তী তোরণের এবং পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর আবক্ষ মূর্তির উন্মোচন করেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা। কলেজের মূল অনুষ্ঠান শুরুর অনেক আগেই অবশ্য তিনি চলে যান। কলেজের কিছু সমস্যার কথা জানতে পেরে মুকুলবাবু বলেন, “শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণের জন্য যথা সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কলেজের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য সাংসদ তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করা হবে।” স্থানীয় বিধায়ক সিপিএমের উপেন কিস্কু বলেন, “১৯৮৬ সালে এই কলেজ তৈরি হলেও এখনও সব সমস্যার সমাধান করা যায়নি। নতুন সরকার সেই কাজ করুক। আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করব।”
কলেজের অনুষ্ঠানের পরে মুকুলবাবু যান রাইপুরের মটগোদায় দলীয় জনসভায় যোগ দিতে। সেখানে তিনি দাবি করেন, “গত ৩৪ বছরে বামফ্রন্ট সরকার যা করতে পারেনি, তার অনেকটাই আমরা করেছি এই সাত মাসে।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জোট সরকারের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরে তাঁর বক্তব্য, “জঙ্গলমহলের বেকার যুবকদের পুলিশে চাকরি দেওয়া, দু’ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার প্রকল্পের শুরু হয়ে গিয়েছে।” মটগোদা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য তাঁর সাংসদ তহবিল থেকে একটি অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও তিনি দেন। এছাড়া জেলার ১৫টি প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে অলচিকি পড়ানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও মন্ত্রী জানান। উল্লেখ্য, অলচিকি মাধ্যমে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করানোর ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ তুলে আদিবাসীদের চারটি সংগঠন শুক্রবার বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে। সভায় শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো’র অভিযোগ, “জঙ্গলমহলে সিপিএম সশস্ত্র শিবির করে নিরীহ মানুষকে খুন করেছিল। তবু আমরা এখানে বদলার রাজনীতি করিনি”। সভায় তৃণমূলের দুই জেলা কার্যকরী সভাপতি অরূপ চক্রবর্তী, শ্যামল সরকার প্রমুখ হাজির ছিলেন। জনসভায় ভিড় দেখে মুকুলবাবু শেষে বলেন, “এত মানুষের সমাগম দেখে মনে হচ্ছে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহল থেকে কর্পূরের মত উবে যাবে সিপিএম।”
রাইপুরের জনসভা থেকে ফেরার পথে হরিণাশুলি গ্রামে দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে খুন হওয়া গোলাম শেখের বাড়িতে মুকুলবাবু যান। নিহত কর্মীর স্ত্রী জাহানারা বিবিকে তিনি সান্ত্বনা দেন। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের জয়পুর ব্লকের কার্যকরী সভাপতি দিলীপ খা। তিনি বলেন, “মুকুলবাবু মৃত কর্মীর স্ত্রী’র হাতে ২৫,০০০ টাকা আর্থিক সাহায্য তুলে দিয়েছেন।” মৃতের ভাইপো রবিয়াল শেখ খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত রবিউল মিদ্যা ও ইয়ামিন শেখের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান। তিনি অভিযোগ করেন, ওই তৃণমূল নেতাদের নির্দেশেই তাঁর কাকাকে খুন করা হয়েছে। মুকুলবাবু তাঁদের কিছু দিন পর কলকাতায় যেতে বলেন। |