সংস্কৃতি যেখানে যেমন |
হবি নিয়ে প্রদর্শনী |
টাকা বা মূল্যবান সামগ্রী নয়। এঁদের ‘হবি’ বিভিন্ন ধরনের দেশলাই বাক্স জমানো। এই সংগ্রাহকদের দেশ বিদেশের নানা ধরনের ছবি সম্বলিত দেশলাই বাক্সের প্রদর্শনী হয়ে গেল এ বারের পৌষ মেলায়। শান্তিনিকতনের পশ্চিম গুরুপল্লির কচি-কাঁচাদের সংস্থা ‘নতুন কুঁড়ি’ আয়োজিত এই প্রদর্শনী প্রচুর পর্যটকের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এই ধরনের প্রদর্শনীর মূল ভাবনার নেপথ্যে ছিলেন‘চির সবুজ’ মনস্ক মানুষ বিশ্বভারতীর ভূগোল বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক মলয় মুখ্যোপাধ্যায়। তাঁরই প্রচেষ্টায় প্রদর্শনী উপলক্ষে দেশলাই বাক্স জমানোর বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘দেশলাই বাক্সের ছবি জমানোও একটা হবি’ নামে একটি পুস্তিকাও প্রকাশিত হয়েছে। ৫৬ পৃষ্ঠার ঐ পুস্তিকাতে কচি-কাঁচা দেশলাই সংগ্রাহক থেকে শুরু করে অভিভাবক এবং বিশিষ্ট জনেদের দেশলাই সংগ্রহের নানা অভিজ্ঞতা ও মতামত প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া এতে আছে হরেক রকমের দেশলাই বাক্সের ছবিও। এই পুস্তিকাটির পেছনের মলাটে রবীন্দ্রনাথের ‘জীবন স্মৃতি’ গ্রন্থ থেকে তাঁর এই বিশেষ মন্তব্যটি উদ্ধৃত হয়েছে‘অনেক পরীক্ষার পর বাক্সকয়েক দেশলাই তৈরি হইল ভারতসন্তানদের উৎসাহের নিদর্শন বলিয়াই যে তাহা নহে আমাদের এক বাক্সে যে খরচ পড়িতে লাগিল তাহাতে একটা পল্লীর সম্বৎসরের চুলা ধরানো চলিত। আরো একটু সামান্য অসুবিধা এই হইয়াছিল যে, নিকটে অগ্নশিখা না থাকিলে তাহাদিগকে জ্বালাইয়া তোলা সহজ ছিল না। দেশের প্রতি জ্বলন্ত অনুরাগ যদি তাহাদের জ্বলনশীলতা বাড়াইতে পারিত, তবে আজ পর্যন্ত তাহারা বাজারে চলিত।’
|
উৎসব ও প্রতিযোগিতা |
রামপুরহাটের ‘রবীন্দ্র সুর ও তরঙ্গ’ সাংস্কৃতিক সংস্থার ১৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১ জানুয়ারি স্থানীয় রেলমঞ্চে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক উৎসব ও প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান হয়। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত, রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি, দেশগান, ভজন ও ছোটদের ছড়া গানে বীরভূম, বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের ২০১৭ জন যোগদান করেছেন। রাতের অনুষ্ঠানে সমবেত তবলা লহড়া বাদন এবং রাজ্যের বিশিষ্ট নৃত্য শিল্পী অলক ভাদুড়ির ভূপেন হজারিকার গাওয়া ‘বিস্তীর্ণ পাড়ে’ গানের দৃশ্যায়ন দর্শক ও শ্রোতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
|
পথ চিত্র প্রদর্শনী |
|
বীরভূম জেলা স্কুলের অঙ্কন বিভাগের শিক্ষক তথা বিশিষ্ট চিত্রকর সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় জীবদ্দশায় ছবি আঁকা নিয়ে নানা কাজ করে গিয়েছেন। প্রচুর ছাত্র তৈরি করেছেন। সেই সব ছাত্রেরা সুবীরবাবুর পথ অনুসরণ করে অঙ্কন শিল্পকে আরও ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি রিকশাচালক ও বাড়ির পরিচারিকাদের নিয়ে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা করেছেন। এক সময় তিনি সিউড়ির অলিতে গলিতে বাড়ির ফাঁকা দেওয়ালে নিজে এবং ছাত্রদের নিয়ে ছবি এঁকে রঙিন করে তুলেছিলেন। সেই দেওয়াল পরে বিজ্ঞাপনে ভরে যায়। এর পরে বছরের দু’দিন জেলা স্কুলের বাইরের দেওয়ালে রাস্তার ধারে নিজের এবং তাঁর ছাত্রদের আঁকা ছবি টাঙিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন নিয়েছিলেন সুবীরবাবু। ২০০৩ সালে কর্মরত অবস্থায় তিনি প্রয়াত হন। এখনও সেই প্রদর্শনী চলছে। এ বার ২৭ বছরে পড়ল। গত ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর প্রায় ৫০ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণরত ৫০ জনের আঁকা ২০০-এর বেশি ছবি প্রদর্শিত হল।
|
নাটক প্রতিযোগিতা |
|
‘নাগিনী কন্যার কাহিনী’ নাটকের একটি দৃশ্য। |
কলকাতার সল্টলেকের অনীক মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এ বারের রাজ্য ছাত্র যুব উৎসবের নাটক প্রতিযোগিতা। সেখানে কুড়িটি নাট্য দল যোগদান করেছিল। এই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে লাভপুরের ‘বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনী’র অষ্টম প্রযোজনা ‘নাগিনী কন্যার কাহিনী’। নাটকটি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্প অবলম্বনে উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় রচিত ও নির্দেশিত । প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর শিরোপা পেয়েছেন নাগিনী চরিত্রের অভিনেত্রী অন্বেষা ঘোষ। বীরভূমের ছাত্র যুব উৎসবে এই নাটকটিই প্রথম হয়েছিল। অন্বেষা সেখানেও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত এক বছরে নাটকটি বীরভূমের বিভিন্ন জায়গায় ও কলকাতার রাসবিহারী অ্যাভেনিউতে মঞ্চস্থ হয়েছে। উৎসবের হিন্দি ও ইংরেজি বিভাগের নাটক প্রতিযোগিতাতেও তাদের হিন্দি নাটক ‘চল্ একেলা’ দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছে। রবীন্দ্রনাথের ‘সুভা’, ‘দেনা পাওনা’ ও ‘দুই বিঘা জমি’ অবলম্বনে নাটকটি লিখেছেন উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়। তিনি এই বিভাগে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কারও পেয়েছেন।
|
নৃত্যশিল্পী |
আয়েত্রী |
যে কোন গান বা বাজনা শুনলেই নিজের তালে তালে নাচতো ছোট আয়েত্রী। বছর দুয়েক হতে না হতেই নৃত্যশিল্পী মা নিবেদিতা দত্ত তালিম দিতে শুরু করেন মেয়েকে। চার বছরের আয়েত্রী জীবনের প্রথম নৃত্য প্রতিযোগিতায়, সাঁইথিয়া পৌর ছাত্র যুব উৎসবের শিশু বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে। সেই শুরু। বছর ১২ এর আয়েত্রী এখন নৃত্যশিল্পী হিসেবে জেলার একটি পরিচিত নাম। তবে ঝিলিক নামেই পরিচিতি বেশি তার। শুধু জেলা নয় বর্তমানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের বহু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেই তাকে ডাকা হয় নৃত্যের জন্য। নিবেদিতাদেবী জানান, প্রথম দিকে ঝিলিকের নাচের ব্যাপারে তাঁর স্বামীর একটু আপত্তি ছিল। এখন তাঁরই আগ্রহ বেশি। শান্তিনিকেতনের নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ের কাছে ভারতনাট্যম, দমদমের শিবা কাপুরের কাছে ওয়েস্টার্ন, বর্ধমানের মনোজ দে’র কাছে সালসা নৃত্যের তালিম নেয় আয়েত্রী। ঝিলিকের কথায়, “ভারতনাট্যম বেশি পছন্দ। ওয়েস্টার্ন আর সালসা শেখার কারণ শরীরকে ‘ফিট’ রাখা।”
|
কল্পতরু উৎসব |
শ্রী রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ ভাব প্রচার সঙ্ঘের উদ্যোগে সম্প্রতি বড়জোড়ার মুক্তাতোড় গ্রামে ‘কল্পতরু’ উৎসবের হয়েছে। নামসংকীর্তন, ভক্তিগীতির পাশাপাশি বাউল গানও পরিবেশন করেন শিল্পীরা। কল্পতরু শ্রীরামকৃষ্ণ বিষয়ে একটি আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রামহরিপুর রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী শৈলজানন্দ। উদ্যোক্তা সঙ্ঘের বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার কো-অর্ডিনেটর সমীর পাণ্ডে বলেন, “আমাদের এই উৎসব এ বছর পঞ্চম বর্ষে পড়ল। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি নরনারায়ণ সেবার আয়োজনও করা হয়েছিল।”
|
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান |
বাঁকুড়া বইমেলায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হল। নাচ, গান, আবৃত্তি হয়। ছিল আলোচনা সভাও। স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে বক্তব্য রাখেন বাঁকুড়া রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী মুক্তিকামানন্দ। বইমেলার একটি স্টলে বাঁকুড়ার কৃতীসন্তানদের প্রতিকৃতি প্রদর্শিত হয়। বিষ্ণুপুর ঘরানার সঙ্গীত শিল্পী রামপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়, গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সাংবাদিক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ ১৫ জনের প্রতিকৃতি এঁকেছেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, এই জেলার অন্তত ১০০ জন কৃতীর প্রতিকৃতি নিয়ে অ্যালবাম প্রকাশ করার ইচ্ছা রয়েছে।
|
একাঙ্ক নাটক |
|
পুরুলিয়ায় ছাত্রযুব উৎসব। |
২-৪ জানুয়ারি পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে আদিবাসী একাঙ্ক নাটকের আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা হয়েছে। জেলার নাটক প্রতিযোগিতা দু’টি জোনে বিভক্ত ছিল। বান্দোয়ানে মোট ২৭টি দল যোগ দিয়েছিল। এর মধ্যে প্রথম হয়েছে মানবাজার ২ ব্লকের সনকুড়া গ্রামের মানদিশম মানগাড়, দ্বিতীয় হয়েছে মানবাজার থানার রতনাডি লাগচার আরজাড় মহল, তৃতীয় হয়েছে মানবাজার ২ ব্লকের রয়না ভুরকা ইতিল এভেন মাডোয়া। জেলা অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের আর্থিক সহায়তায় এই প্রতিযোগিতা হয়। উদ্যোক্তারা জানানা, বান্দোয়ান থেকে নির্বাচিত প্রথম তিনটি দল ছাড়া চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ স্থানাধিকারী দলও জেলা প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে পারবে।
|
বিতর্কসভা |
জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে বাঁকুড়া বঙ্গবিদ্যালয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিযোগিতা হয়ে গেল। সেখানে বিতর্কসভা, ক্যুইজ ও প্রবন্ধ লেখার প্রতিযোগিতা হয়। বাঁকুড়া সদরের মহকুমাশাসক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “বাঁকুড়া শহরের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের পড়ুয়ারা প্রতিযোগিতায় যোগদান করেছিলেন। প্রতিটি বিভাগের প্রথম তিন জনকে পুরস্কৃত করা হয়। বাকি প্রতিযোগীদের শংসাপত্র দেওয়া হয়।” তিনি জানান, জেলার বাকি পুরসভা ও সমস্ত ব্লকে প্রতিযোগিতা হয়েছে। সেখান থেকে উঠে আসা সেরারা জেলাস্তরের প্রতিযোগিতায় যোগ দেবে।
|
শাস্ত্রীয় সংগীতানুষ্ঠান |
সুধাকর সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের ৩০ বছর উপলক্ষে সম্প্রতি এক শাস্ত্রীয় সংগীতানুষ্ঠান হয়ে গেল বাঁকুড়ার উত্তর প্রতাপবাগানের দুর্গামেলায়। অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ওখানকার ছাত্রছাত্রীরা। অধ্যক্ষ বাসুদেব ঘোষাল বলেন, “৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা প্রতি মাসেই শাস্ত্রীয় সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করার পরিকল্পনা নিয়েছি। এই অনুষ্ঠান আমাদের দ্বিতীয় নিবেদন।”
|
সাহিত্যসভা |
নতুন বছরের শুরুতে সম্প্রতি সোনামুখী বিধানচন্দ্র বয়েজ হাইস্কুলে একটি সাহিত্যসভা হল। উদ্যোক্তা স্থানীয় ‘লগ্নঊষা’ পত্রিকা। ওই সাহিত্য পত্রিকার তরফে জিতেন চট্টোপাধ্যায় এবং শ্যামল মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এবারের সাহিত্য সভায় সোনামুখীর ১০ জন কবির কবিতা সম্বলিত একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। সেইসঙ্গে ছিল কবিতা, গল্প পাঠ এবং সাহিত্য আলোচনা।
|
সংক্ষেপে |
• রাজ্য যুব উৎসবে প্রথম স্থান অধিকারের গৌরব অর্জন করল পুরুলিয়ার গড়জয়পুরের সপ্তর্ষি নাট্যসংস্থা। তাঁদের ‘মাটির জন্য’ রাজ্যস্তরের এই প্রতিযোগীতায় শ্রেষ্ঠ প্রযোজনার সম্মান পেয়েছে। ২ জানুয়ারি কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে রবীন্দ্রনাথের ‘দুই বিঘা জমি’ অবলম্বনে এই নাটকটি প্রতিযোগিতায় মঞ্চস্থ হয়েছে বলে সংস্থার পক্ষ থেকে সনৎ দাস জানিয়েছেন।
|
গৌতম দশন্দি |
• পুরুলিয়ার জেলা লিটল ম্যাগাজিন মেলা কমিটির উদ্যোগে ২৩-২৫ ডিসেম্বর পুরুলিয়ার হরিপদ সাহিত্য মন্দির প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হল দশম লিটল ম্যাগাজিন মেলা। উদ্যোক্তাদের পক্ষে রঞ্জন আচার্য জানিয়েছেন, বাংলা ও ভিন রাজ্য থেকে মোট ৬০টি পত্রিকা ও পত্রিকাগোষ্ঠী যোগ দিয়েছিল। মেলায় কবি অরুনেশ ঘোষ মঞ্চে ‘লিটল ম্যাগাজিন মেলায় পুরুলিয়ার লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের অগ্রগতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। মেলার তোরণ করা হয়েছিল কবি মল্লিকা সেনগুপ্তর নামে।
• পুঞ্চা থানার দাঁদড় আশ্রমে ১ জানুয়ারি সাহিত্য বিষয়ক একটি আলোচনাসভা হয়েছে। ওই দিন একটি সাহিত্য পত্রিকাও প্রকাশিত হয়। |
|