প্রায় ষাট বছর আগে বহরমপুর শহরের খাগড়া ভৈরবতলায় আগুন লেগেছিল। বীভৎস সে আগুন। তখন আমরা খুবই ছোট ছিলাম। তখন ওই এলাকার মানুষ আগুন আয়ত্বে এনেছিল পুরসভার ট্যাঙ্কের জল দিয়ে। তখন বহরমপুর শহরের অনেক জায়গাতেই পুরসভার জলের ট্যাঙ্ক ছিল। সেখান থেকে জল নিয়ে রাস্তায় দেওয়া হত। বহরমপুরে তখন দমকল বাহিনী ছিল না। পুরনো দিনের ওই জলের ট্যাঙ্ক গুলি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ওই শহরের রানিবাগানে আগে ৫-৬টি বড় বড় পুকুর ছিল। সেগুলি ভরাট করে বাড়িঘর ও বহুতল আবাসন গড়ে তোলা হয়েছে। বহরমপুরে জীবন বিমা নিগমের মুর্শিদাবাদ জেলা কার্যালয় যেখানে গড়ে তোলা হবে সেটিও পুকুর ভরাট করা জায়গা। এ ভাবে এ শহরের জলের উৎস গুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বহরমপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র রানিবাগান এলাকায় গড়ে উঠেছে বড় বড় বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বহুতল আবাসন, হোটেল, পানশালা। ওই এলাকার অলিগলিতে তৈরি হয়েছে বহুতল আবাসন। |
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওই রাস্তা গুলিতে দমকলের বড় গাড়ি ঢুকতে পারবে না। ওই বহুতল গুলিতে ঢোকা ও বেরোনোর একটিই রাস্তা, একটিই সিঁড়ি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একতলায় দোকান। আর উপরে বসতি। কাপড়, মুদিখানা ইত্যাদির দোকান। মুদিখানায় থাকে ঘি, তেলের মতো দাহ্য পদার্থ। একটি ফ্ল্যাট বাড়ির নীচে প্রবেশদ্বারের পাশে রয়েছে প্লাইউড, রং, বার্নিস ও ফেভিকলের দোকান। সবই দাহ্য পদার্থ। অঘটন ঘটলে বহুতলের ও এলাকার বাসিন্দাদের বিপদ। ওই এলাকায় রয়েছে দু’টি বহু পুরনো পেট্রোল পাম্প। যখন পাম্পগুলি হয়েছিল তখন ওই অঞ্চলে জনবসতি খুবই কম ছিল। এখন ওই রানিবাগান এলাকা ঘন বসতিপূর্ণ ও বানিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত। একটি পেট্রোল পাম্পের পাশেই রয়েছে জীবন বিমা নিগমের কার্যালয়। সেখানে লক্ষাধিক মানুষের অর্থনৈতিক ভবিষ্যত জড়িয়ে রয়েছে। ওই পেট্রোল পাম্পের অন্য পাশে রয়েছে সেটেলমেন্ট অফিস। সেখানেও রয়েছে জমিজমা ও বিষয় সম্পত্তি সংক্রান্ত নথিপত্র। অপর পেট্রোল পাম্প ঘিরে রয়েছে বেশ কয়েকটি নামজাদা হোটেল, পানশালা ও নার্সিং হোম। ওই পেট্টোল পাম্প দু’টিতে অঘটন ঘটলে কতটা বিপদ হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। তারপরও আমরি-কাণ্ড থেকে আমরা কোনও শিক্ষা নিইনি। নইলে সেটেলমেন্ট অফিসের সামনে পুরসভার মার্কেটের তিনতলায় নির্মীয়মাণ হোটেলের বারান্দার পুরোটা কাঁচ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হত না। কাঁচ দিয়ে ঘিরে দেওয়ায় আবাসিকরা কি সেখানে খুব নিরাপদে থাকবেন? প্রতিটি বহুতলের সামনে বিদ্যুৎ পর্যদ থেকে একটি করে ট্রান্সফর্মার বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে অপরিসর গলিতে হাইটেনশান লাইন উঠেছে। গরমকালে ওই ট্রান্সফর্মারে আগুন লাগলে এলাকার মানুষ বিশেষ করে বহুতলের বাসিন্দারা বিপদে পড়বেন। ফলে গোটা রানিবাগান এলাকা আজ জতুগৃহে পরিণত।
নারায়ণ সরকার, রানিবাগান, বহরমপুর। |
ধুবুলিয়ার এক মাত্র ঐতিহ্যশালী ঐতিহাসিক নিদর্শন বলতে বিমান ওঠানামার জন্য ইংরেজ রাজত্বে তৈরি কংক্রিট ঢালাই করা চওড়া রাস্তা। যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। পূর্বরেলের শিয়ালদহ বিভাগের কৃষ্ণনগর-লালগোলা শাখার ডবল লাইন তৈরি করতে গিয়ে স্রেফ প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণে নষ্ট হতে চলেছে বিমান ওঠানামার জন্য ইংরেজ আমলে তৈরি ওই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি। কারণ, রেলের ওই ডবল লাইন তৈরি করতে গিয়ে ধুবুলিয়ার বিভিন্ন গ্রাম থেকে লরি বোঝাই মাটি আনা হচ্ছে বিমান ওঠানামার জন্য তৈরি সিমেন্ট ঢালাই ওই রাস্তা দিয়ে। তার ফলে সিমেন্ট ঢালাই ওই রাস্তার বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, কৃষ্ণনগর-লালগোলা শাখায় রেলের ডবল লাইন তৈরি হোক সেই সঙ্গে বিমান ওঠানামার জন্য ইংরেজ আমলে তৈরি সিমেন্ট ঢালাই করা রাস্তা অক্ষত থাকুক এমন ব্যবস্থা করুন।
সুরজিৎ মণ্ডল, ধুবুলিয়া
|
কান্দি শহরে অবস্থিত আচার্য রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী স্মৃতি বিজড়িত পান্থশালাটি ১৯৭৮ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তার পর ৩২টি বছর পার হয়ে গেল। সংস্কারের অভাবে ওই পান্থশালাটি এখন আস্তাকুঁড়ে পরিণত। সেখানে দরজা-জানালা উধাও। সেখানে এখন সমাজবিরোধীদের আড্ডা চলে। পান্থশালার সামনের পুকুরে একদা মাছচাষ করা হত। সংস্কারেরর অভাবে ও আর্বজনা ফেলে এখন সে জলাশয়টি ডোবায় পরিণত হয়েছে। সরকারি ওই পান্থশালাটি দেখভালের জন্য বছর দুয়েক আগেও এক জন কর্মী ছিলেন। বর্তমানে আর নেই। রামেন্দ্রসুন্দর প্রতিষ্ঠিত ওই পুকুর ও পান্থশালাটি সংস্কার এবং সৌন্দর্যায়ণ করে ঐতিহ্য রক্ষা করা জরুরি।
অময় চক্রবর্তী, কান্দি |