দলে নেওয়ার তিন দিন পরেও বাবুভাই কুশওয়াহাকে ঘিরে ঘরে-বাইরে বিতর্কে রীতিমতো নাজেহাল বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী। দুর্নীতির দায়ে মায়াবতীর দল থেকে বিতাড়িত কুশওয়াহাকে দলে নেওয়ার কারণ নানা স্তরে ব্যাখ্যা করেও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় দলের নেতাদের মুখ বন্ধ করতে পারছেন না বিজেপি সভাপতি। দলের নেতাদের মুখ খোলার ব্যাপারে বিধিনিষেধ জারি করেও সুফল পাননি তিনি।
আজ সকালেই বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দেন, কুশওয়াহাকে দলে আনার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে তিনি নির্বাচনে লড়বেন না। দলের হয়ে প্রচারও করবেন না। প্রকাশ্যে উমা জানান, “আমার যা বলার দলকে জানিয়েছি।” উত্তরপ্রদেশের সাংসদ মানেকা গাঁধীও কুশওয়াহাকে নিয়ে গডকড়ীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুখ খুলে বলেন, “কারও সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই দুর্নীতিগ্রস্ত কুশওয়াহাকে বিজেপিতে আনা হয়েছে। দলে এই নিয়ে প্রবল ক্ষোভ রয়েছে।” দলের নেতাদের এই প্রকাশ্য সমালোচনা সামাল দিতে আসরে নামেন গডকড়ী নিজেই। দলের নেতাদের তিনি জানিয়ে দেন, উত্তরপ্রদেশের ভোট-অঙ্কের কথা মাথায় রেখে যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে পিছু হঠার কোনও প্রশ্ন নেই। দলের সিদ্ধান্ত সকলকেই মানতে হবে। নিতিনের বার্তার পরেই তড়িঘড়ি
বাবুভাই কুশওয়াহা |
উমাকে দিয়ে একটি বিবৃতি পেশ করানো হয়। সেখানে উমা দাবি করেন, ‘সংবাদমাধ্যমে ভিত্তিহীন মন্তব্য করা হচ্ছে’। উমা থামলেও চার দিক থেকে লাগাতার আক্রমণ কিন্তু ঠেকাতে পারছেন না বিজেপি সভাপতি। গত কাল প্রকাশ্যে সরব হওয়ার পর উত্তরপ্রদেশের আর এক বিজেপি সাংসদ যোগী আদিত্যনাথ আজ গোরক্ষপুরে জানিয়ে দেন, দল দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচার করলেও কুশওয়াহার মতো দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বিজেপিতে সামিল করা তাঁর কাছে ‘অপমানজনক’। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে তিনি রাজনীতিতে থাকবেন কি না, তা ‘বিবেচনা করে’ দেখবেন বলে গডকড়ীকে ইতিমধ্যে বার্তাও পাঠিয়েছেন বলে জানান তিনি। কুশওয়াহা-বিতর্কে গত কালও নিজেদের অসন্তোষ স্পষ্ট করেছিল সঙ্ঘ পরিবার। সঙ্কট আঁচ করে দল ও সঙ্ঘকে গডকড়ী বুঝিয়েছেন, ভোট-রাজনীতির কথা মাথায় রেখে অনেক সময় রাজনৈতিক সমঝোতা করতে হয়। এটি অনেকটা জুয়া খেলার মতো। তার পরিণতি ভোটবাক্সেই দেখা যাবে। বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক যদি বাড়াতে হয়, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।
ডামাডোল দেখে আসরে নেমে পড়েছেন প্রাক্তন বিজেপি নেতা ও উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংহ-ও। বিজেপির এক সময়ের পিছড়ে বর্গের এই নেতা এখন জনক্রান্তি পার্টির প্রধান। তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের টিকিট দিয়ে বিজেপি উত্তরপ্রদেশে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) তাস খেলতে চাইছে। আজ সন্ধ্যায় কল্যাণ বলেন, “কুশওয়াহাকে নেওয়া নিয়ে মায়াবতীর সঙ্গে বিজেপির টাকার লেনদেন হয়েছে। ফলে ভোটারদের জানাতে চাই, বিজেপিকে ভোট দেওয়া মানে আসলে মায়াবতীকেই ভোট দেওয়া।” গডকড়ী-ঘনিষ্ঠ এক নেতার মতে, বিজেপি যে ভাবে ওবিসি ভোটব্যাঙ্ককে সংগঠিত করতে চাইছে, তা কল্যাণ বা উমাদের অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। সে কারণে তাঁরা প্রকাশ্যেই বিরোধিতা করছেন। কুশওয়াহাকে দলে আনায় সম্মতি ছিল উমার। কিন্তু এখন কুশওয়াহাকে নিয়ে এত চর্চা হওয়ায় উমা মনে করছেন, দলে তাঁর গুরুত্ব খাটো হচ্ছে। উমা দলে আরও বড় দায়িত্ব চান। ওই নেতা জানান, অবস্থা বুঝে উমাকে আরও গুরুত্ব দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। তার পরেই লিখিত বিবৃতি দিতে সম্মত হন উমা। গোটা ঘটনার ফয়দা তুলতে পুরোদস্তুর আসরে নেমে পড়েছে কংগ্রেস। উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদ এ দিন রসিকতা করে বলেন, “উত্তরপ্রদেশে বিজেপির উপর এই ঘটনার প্রভাব সামান্যই পড়বে। কারণ সে রাজ্যে বিজেপির এমনিতেই প্রভাব কম। ফলে বড় প্রভাব পড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই!”
কুশওয়াহা-বিতর্কে লাগাতার নেতিবাচক প্রচারের মধ্যেও একটি ভাল দিক অবশ্য খুঁজে পেয়েছেন বিজেপি নেতারা। তা হল, উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে নিয়ে প্রচার শুরু হয়েছে! আগে শুধু মাত্র মায়াবতী বনাম রাহুল গাঁধী। এখন প্রচারের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে বিজেপিও। তাঁদের বক্তব্য, দলের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিরোধিতা যদি বিজেপি নেতারাই করেন, তা হলে কংগ্রেস বা অন্য দলের বিরোধিতার জায়গাটি সুকৌশলে কেড়ে নেওয়া সম্ভব হবে। তবে এটাও ঠিক, দলের মধ্যেই লাগামহীন বিরোধিতা বিজেপির পক্ষে সমস্যার। তাই তারও পাল্টা প্রচার চাই। সেই সূত্র ধরেই বিজেপি নেতা যশবন্ত সিন্হা আজ বলেন, “কুশওয়াহা আসলে ‘হুইসল ব্লোয়ারের’ কাজ করবেন। বিজেপি দুর্নীতির সঙ্গে কোনও আপস করছে না। সিবিআই বা আদালত এই নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে দল তখন তার অবস্থান জানাবে।” |