ধান কিনতে হাজার শিবির,
প্রশ্ন তবু থাকছে
ধান ও চাল সংগ্রহ নিয়ে ক্রমাগত সমালোচনার মুখে পড়ে এক হাজার শিবির খোলার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। আজ, শনিবার থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত শিবিরগুলি চলবে। শিবির বা চালকলে ধান নিয়ে যাওয়ার জন্য কিলোমিটারে কুইন্টাল পিছু এক টাকা হিসাবে ভাড়া দেওয়া হবে বলেও শুক্রবার খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন। কিন্তু টাকার জোগানের অভাবে যেখানে ধান কেনা গতি পাচ্ছে না, সেখানে এই শিবির করা কতটা সফল হবে তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।
ধানের অভাবী বিক্রি রুখতে এ বার ২০ লক্ষ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু টাকার অভাবে সরকারি সংস্থাগুলি এখনও লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশ টপকাতে পারেনি। ধান সংগ্রহে গতি আনতে গেলে গ্রামে-গ্রামে শিবির করা জরুরি। কেননা মোটা পরিবহণ খরচ দিয়ে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বহু চাষিই চালকলে গিয়ে ধান দিতে পারছেন না। এখনও পর্যন্ত সামান্য কিছু সমবায় সমিতিই শুধু নিজেদের তহবিলের টাকা দিয়ে গ্রামে শিবির করতে পেরেছে। তারাই চালকলে ধান পৌঁছে দিচ্ছে। যদিও গ্রাম থেকে চালকলে ধান নিয়ে যাওয়ার টাকা চাষিদের থেকেই কেটে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সীমিত সামর্থ্যে সমবায় সমিতির পক্ষেও বেশি কিছু করা সম্ভব নয়।
সরকার গ্রামে-গ্রামে হাজার শিবির খুলতে পারলে চাষির লাভ হবে দু’টি। এক, ধান নিয়ে তাঁদের দূরের চালকলে দৌড়তে হবে না। বেনফেড, কনফেড, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগমের মতো সরকারি সংস্থা সরাসরি বা সমবায় সমিতি মারফত পঞ্চায়েত এলাকা থেকেই ধান কিনবে। দুই, বর্তমানে অর্থাভাবের কারণে চালকলগুলি অনেক পরের তারিখের চেক দেয়। ফলে চাষির নগদ টাকা পেতে দেরি হয়। সেখানে নিজেদের টাকা থাকায় সমবায় সমিতিগুলি যে চেক দিচ্ছে, তা দু’দিনের মধ্যে ভাঙানো যাচ্ছে। সরকার যদি হাজার শিবিরে টাকার জোগান দিতে পারে, তবে সেগুলি থেকেও দ্রুত টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। চাষিরা সরকারকে ধান দিতে উৎসাহী হবেন।
বর্ধমানের মেমারি ২ ব্লকের মোহনপুর গ্রামে গত সাত দিন ধরে এমন একটি সমবায় সমিতির শিবির চলছে। স্থানীয় প্রায় ২০টি গ্রাম থেকে চাষিরা ধান নিয়ে আসছেন। সমবায়ের সম্পাদক জানান, স্থানীয় সাতগেছিয়া সমবায় ব্যাঙ্ক ও একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে পাঁচ লক্ষ টাকা মজুত রেখে তবেই চেক দেওয়া হচ্ছে। বর্ধমানের খাদ্য নিয়মক রাজু মুখোপাধ্যায় বলেন, “যে সমিতিগুলি নিজেদের টাকায় ধান কিনতে পারছে, তারাই এই ধরনের শিবির খুলছে। জেলায় এ রকম ২০টি ধান কেনার শিবির খোলা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল, ধান কিনতে সমবায়গুলিকে যে অগ্রিম টাকা দিতে হবে, তা বেনফেড বা কনফেডের মতো সরকারি সংস্থাগুলির হাতে নেই।” হুগলিতেও সাকুল্যে ৩৫টি শিবির চলছে।
বৃহস্পতিবার কালনার দু’টি চালকলে তৃণমূলের নেতৃত্বেই বিক্ষোভ দেখান চাষিরা। তাঁদের অভিযোগ, একে প্রয়োজনের তুলনায় কম ধান কেনা হচ্ছে, তার উপরে ধানের মান ও প্রজাতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বস্তা পিছু ২ থেকে ৬ কিলো পর্যন্ত অতিরিক্ত ধান নেওয়া হচ্ছে। ফলে সরকারের আশায় বসে থাকা বহু চাষিই ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। খাদ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেন, “সঠিক দাম দিতে অস্বীকার করা এবং চাষিদের হয়রান করায় আউশগ্রামের একটি চালকলের ধান কেনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আরও ১৬-১৭টি চালকল সম্পর্কে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
খাদ্য দফতরের হিসেব বলছে, সরকারি সংস্থাগুলির সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ধান ও চাল মিলিয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগমের লক্ষ্যমাত্রা ৬ লক্ষ টন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের সংগ্রহ মোটে ২৬ হাজার টন। অন্য যে সব সংগঠনের ধান সংগ্রহের দায়িত্ব ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টন, তারা সর্বনিম্ন ১১৩০ ও সর্বাধিক ৫ হাজার টন ধান সংগ্রহ করেছে। ফুড কর্পোরেশন (এফসিআই) কেবল চাল সংগ্রহ করে। ৪ লক্ষ টন লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সংগ্রহ আটকে আছে মাত্র ৪০ হাজার টনে।
হাজার শিবির খুলে আগামী দেড় সপ্তাহ ধান কেনা সম্ভব হলে এই পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ার কথা। কিন্তু তার টাকা কোথা থেকে আসছে তা পরিষ্কার নয়। এ দিন খাদ্যমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেন, “আমাদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা আছে।” আপাতত বেনফেড, কনফেড, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগম ও কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা এনসিসিএফ-এর ধান কিনতে নামার কথা। কনফেড ইতিমধ্যেই বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের থেকে বকেয়া ১০ কোটি টাকা এবং বেনফেড অর্থ দফতর থেকে আগাম ১৫ কোটি টাকা চেয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও নির্দিষ্ট আশ্বাস মেলেনি।
ফলে শেষ পর্যন্ত কত ধান কেনা যায়, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.