আগের রাতেই তাঁকে সঙ্গে নিয়ে তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবু তিনটি খুনের মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা সাউদ মিয়াঁকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করল না পুলিশ। শুক্রবার কাটোয়া আদালতে তোলা হলে তাঁকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূল নেতাদের নির্দেশেই পুলিশ তাঁকে হেফাজতে নিতে চায়নি। বর্ধমানের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর অবশ্য বলেন, “ধৃতকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন নেই, তাই নেওয়া হয়নি। কোনও রাজনৈতিক চাপ নেই।”
দীর্ঘদিন ধরে যাঁর খোঁজ মিলছিল না, সেই সাউদকে গত ২০ নভেম্বর কেতুগ্রামে তৃণমূলের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ ও দলের স্থানীয় পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা যায়। কিন্তু এর পরে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী, বিধায়কেরা দাবি করতে থাকেন, সাউদ ‘নির্দোষ’। তাঁকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। মহাকরণে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তা তাঁরা জানিয়েও এসেছিলেন। এর পরে কিছু দিন সাউদের খোঁজ না মিললেও বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় বামুনডিহি গ্রামে বাড়ির কাছ থেকেই তিনি ধরা পড়েন।
পুলিশ সূত্রের খবর, রাতে সাউদকে নিয়ে ফের বামুনডিহিতে যায় তদন্তকারী দল। তাঁর দেখানো জায়গা থেকে তিনটি মাস্কেট ও ১৫ রাউন্ড গুলি পাওয়া যায়। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অচিন্ত্য মল্লিকের ক্ষোভ, “তৃণমূলের ওই দুষ্কৃতী পুলিশের সঙ্গে বোমা-বন্দুক নিয়ে লড়াই করেছিল। আর পুলিশ তাকেই নিজেদের হেফাজতে নিল না!” কেতুগ্রাম থানার আইসি আব্দুল গফ্ফরের পাল্টা যুক্তি, “ওঁর কাছ থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এর পরে আর কী পাব!” কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের দাবি, “পুলিশকে কোনও চাপ দেওয়া হয়নি। পুলিশ কেন সাউদকে হেফাজতে নেয়নি, তা তারাই বলতে পারবে।”
নিজের ডেরা থেকেই সাউদ কী ভাবে ধরা পড়লেন, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই বামুনডিহি ও আশপাশের এলাকায় কার ‘প্রভাব’ থাকবে, তা নিয়ে সাউদ ও তাঁর ভাই কেবির মিয়াঁর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। সম্প্রতি কেবিরের গোষ্ঠী শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “সাউদের কাছের লোকেরা দূরে সরে গিয়েছে। তাতেই ওর বিপদ হয়েছে।” কেতুগ্রামের এক তৃণমূল নেতাও স্বীকার করেন, দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, বিপক্ষ গোষ্ঠীর থেকে খবর পেয়েই পুলিশ সাদা পোশাকে সাউদের পিছু নিয়েছিল। আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে কেবির অবশ্য বলেন, “আমাদের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই।” |