|
|
|
|
মেদিনীপুর মেডিক্যাল |
যত্রতত্র দাহ্য বস্তু, আগুন নেভানোরও সরঞ্জাম নেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
সিঁড়ির তলায় গজ-তুলোর স্তূপ। বহু দিন পরিষ্কার না করায় ডাস্টবিন থেকে উপচে পড়ছে আবর্জনা। দাহ্য বস্তু। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের যত্রতত্র এই অবস্থা। ফলে এক বার কোথাও আগুন লাগলে দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা। অথচ অগ্নি-নির্বাপণের ব্যবস্থাই নেই। একটাও ফায়ার এক্সটিংগুইশার সিলিন্ডার নেই আস্ত একটা মেডিক্যাল কলেজে! যেখানে ৫৬০ শয্যার প্রতি ১০টি পিছু অন্তত একটি সিলিন্ডার থাকা ন্যূনতম মাপকাঠি। হাসপাতালের অধ্যক্ষ সুকুমার মাইতির বক্তব্য, “কয়েক মাস আগেই কলকাতার একটি সংস্থাকে কিছু অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম সরবরাহের বরাত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওরা এখনও তা সরবরাহ করতে পারেনি। কেন এত দেরি করছে তা খতিয়ে দেখা হবে।”
কলেজ ভবনটি চারতলা। কলেজ লাগোয়া আর একটি চারতলা ভবনে রয়েছে প্যাথলজি, ফরেনসিক-সহ আরও কয়েকটি বিভাগ। এ ছাড়াও হাসপাতালের পুরনো ভবন থেকে কয়েকটি ওয়ার্ড ও অপারেশন থিয়েটার সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরও একটি চারতলা ভবন তৈরি হয়েছে। কিন্তু কোথাও অগ্নিনির্বাপণের কোনও ব্যবস্থাই নেই। |
|
এ ভাবেই পড়ে পরিত্যক্ত জিনিসপত্র। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
হাসপাতালের ভিতরে একটি পুকুর রয়েছে। ভাবনাটা এমন যে কোথাও আগুন লাগলেই দমকলে খবর দেওয়া হবে। আর পুকুর থেকে জল তুলে আগুন নিভিয়ে ফেলবে দমকল! এই ভরসাতেই হেলদোল নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
অথচ কলেজ ভবন থেকে পুকুরের দূরত্ব যথেষ্টই। দোতলায় আগুন লাগলে দমকল এসে কাজ শুরুর আগেই পুড়ে যেতে পারে অনেক কিছু। সে জন্য আপৎকালীন ব্যবস্থা থাকা জরুরি। হাসপাতালের চার দিকে ছড়িয়ে গজ, তুলোর মতো অতি দাহ্যবস্তু। রয়েছে ওষুধের প্যাকেট, পলিথিন। ওয়ার্ডের ভিতরেও কাগজের বড় বড় প্যাকেট। রোগীর বিছানার চাদর, কম্বল, মশারিও পুড়তে পারে। এক বার আগুন লাগলে তা যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দিনের বেলায় হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় সাইকেল, মোটরবাইক রাখা থাকে। তাতে স্বাভাবিক চলাফেরাতেও সমস্যা। রাতে অনেক সময়ে ওয়ার্ডের দরজা আটকানো থাকে। হঠাৎ কোনও অঘটন ঘটলে রোগীরা দ্রুত বেরোতেও পারবেন না।
পুরনো ভবনের করিডর জুড়ে পরিত্যক্ত জিনিসপত্র। এখানে সেখানে খোলা বৈদ্যুতিক তার। পুরনো ভবনের প্রতিটি ওয়ার্ডে যেখানে গড়ে ৩০-৪০ জন রোগী ভর্তি থাকেন, সেখানে ওয়ার্ডে ঢোকা-বেরোনোর রাস্তা একটাই। নতুন ভবনের তিনটি দরজার দু’টোই তালাবন্ধ। নতুন ভবনের ওয়ার্ডে একাধিক ঢোকা বেরোনোর দরজা থাকলেও খোলা থাকে একটিই। অন্য দরজা বন্ধ। জিনিসপত্রে দরজার সামনে-পিছন এমন ভাবে অবরুদ্ধ, জরুরি প্রয়োজনে খোলা দুঃসাধ্য। গোটা হাসপাতালে একটাও অগ্নি-নির্বাপক সরঞ্জাম না থাকায় আতঙ্ক বাড়ছে। বিশেষত, আমরি-র ঘটনার পর। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এখনও তেমন হেলদোল নেই বলেই অভিযোগ।
অধ্যক্ষের অবশ্য বক্তব্য, “প্রথম দফায় কিছু সরঞ্জামের বরাত দেওয়া হয়েছিল। যা এলে ওয়ার্ডে দেওয়া হবে। আমরি-র ঘটনার পরে আমরাও অগ্নি-সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখছি। প্রথম দফার সরঞ্জাম পাওয়ার পরে আরও সরঞ্জাম কেনা হবে।” কিন্তু তা কত দিনে হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কেউই কিছু জানাতে পারেননি। তত দিন সঙ্গী আতঙ্কই। |
|
|
|
|
|