নিজস্ব সংবাদদাতা • রাজগঞ্জ |
পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় রাজগঞ্জের শিকারপুর অঞ্চলের ১৭টি সংসদের মধ্যে ১৫টি সংসদ এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দাকে দূষিত জলই পান করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই নিয়ে পঞ্চায়েত-প্রশাসনে বহুবার দাবি জানিয়েও এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে তাঁরা হাল ছেড়েই দিয়েছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কবে সেই ব্যবস্থা গড়ে উঠবে, তার কোনও ভরসা করতেই পারছেন না বাসিন্দারা। ফলে তাঁরা হাল ছেড়ে দিয়েছেন। সমস্যার কথা অবশ্য স্বীকার করেছেন এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান তথা জেলা তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়ন নেতা কল্যাণ হোড়। কল্যাণবাবু বলেন, “এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা দূর করতে বিভিন্ন সময় প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে পরিকল্পনা জমা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।” রাজগঞ্জের বিডিও টি টি ভুটিয়া বলেন, “মাস দুয়েক হয়েছে আমি রাজগঞ্জের দায়িত্বে রয়েছি। ওই এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে কোনও তরফে আমার কাছে কিছুই জানানো হয়নি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।” শিকারপুর অঞ্চলেরই বাসিন্দা রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়। খোদ তাঁর সংসদ এলাকাতেই পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। তিনিও সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেছেন, “পানীয় জলের সমস্যা শুধু আমার অঞ্চলেরই সমস্যা নয়, রাজগঞ্জের অন্যান্য সংসদ অনেক এলাকাতেও সমস্যা রয়েছে। বিগত সরকার এই নিয়ে কোনও কিছু ভাবেনি। আমরা ক্ষমতায় আসায় পানীয় জলের সমস্যা দূর করার উপর গুরুত্ব দিয়েছি। রাজগঞ্জের প্রতিটি সংসদ এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনে পরিকল্পনা জমা দেওয়া হয়েছে। জলের সঙ্কট মেটাতে শিকারপুরের কিছু কিছু এলাকায় নলকূপের ব্যবস্থা হয়েছে।” খগেশ্বরবাবু ওই দাবি করলেও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, সিপিএম আমলেই শিকারপুর সহ ব্লকের অন্যান্য জায়গায় জলের সমস্যা মেটাতে যা কাজ হয়েছে, তারপরে আর কোনও কাজ হয়নি। শিকারপুরে তো হয়ইনি। শিকারপুরের সিপিএম নেতা রণজিৎ শর্মা, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নারায়ণ বসাকরা বলেন, “তৃণমূল শিকারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থেকেও এলাকার জলের সমস্যা মেটাতে কোনও ইতিবাচক ভূমিকা নেয়নি। যা কিছু কাজ হয়েছে, বাম আসলেই। পরিস্রুত পানীয় জলের কথা তো ভাবাই যায় না। বাসিন্দারা কুয়োর দূষিত জলেই খেতে বাধ্য হচ্ছেন।” পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, শিকারপুরের বেলাকোবার বিবেকানন্দপল্লি এলাকায় বিএইচই দফতর থেকে একটি জলাধার করা হয়েছে। কিন্তু ওই জলাধার থেকে শুধু বেলাকোবা বাজার চত্বর এলাকা ছাড়া আশেপাশে আর কোথাও ওই জলাধার থেকে পানীয় জলের পরিষেবা পান না। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেলাকোবার বিবেকানন্দপল্লির ওই এলাকা থেকে শিকারপুরের বটতলা এলাকা পর্যন্ত জলের পাইপলাইন ও ট্যাপকল বসানো হয়েছে তা থেকে শুধু বেলাকোবার বাবুপাড়া পর্যন্ত জল পৌঁছে। বাকি এলাকাগুলিতে জল পৌঁছয় না। রাস্তার ধারে ধারে যে ট্যাপকলগুলি বসানো হয়েছে, সেগুলি দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বহুবার দাবি জানিয়েও সেগুলি মেরামত করা হয়নি। প্রায় ২০ বছর ধরে সেগুলি আর মেরামতের কাজে হাত দেওয়া হয়নি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। শিকারপুরের উপপ্রধান কল্যাণবাবু বাবু অবশ্য জানিয়েছেন, ওই জলাধার থেকে বটতলা পর্যন্ত যে পাইপলাইন বসানো হয়েছে। কারিগরি ত্রুটির জন্য ওই পাইপলাইন দিয়ে বটতলা পর্যন্ত জল পৌঁছয় না। পিএইচই দফতরে বহুবার দাবি জানানোর পরে সেগুলি নতুন করে মেরামত হয়নি।” স্থানীয় বিএইচই দফতরের কর্মীরা অবশ্য দাবি করেছেন, “বটতলা এলাকায় মাটির স্তর উঁচু হওয়াতে ওই এলাকায় জল পৌঁছতে পারছে না। সে সব নতুন করে বসানোর ব্যবস্থা হলে সমস্যা মিটবে।” |