জল না পেয়ে ক্ষতি সব্জি চাষে |
পর্যাপ্ত সেচের অভাবে গত বছর আশানুরূপ শাকসব্জি ও বোরো চাষ করতে পারেননি চাষিরা। এবারও তা করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে রাজগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকার চাষিদের মধ্যে। চাষিদের অভিযোগ, প্রতি বছরে সব্জি ও বোরো মরসুমে সেচের অভাবে তারা জমিতে কাম্য ফসল ফলাতে পারেন না। রাজগঞ্জে বেশ কিছু কৃষি প্রধান এলাকায় ক্যানালের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু তারা ওই ক্যানালগুলি থেকে সেভাবে সেচের পরিষেবা পান না বলে অভিযোগ। সংস্কারের অভাবে প্রায় ক্যানেলের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। তা নিয়ে সেচ দফতর থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে দাবি জানিয়েও লাভ হয়নি অভিযোগ চাষিদের। সেচ দফতর অবশ্য জানিয়েছে, চাষিদের অভিযোগ পুরোপুরি ঠিক নয়। প্রতি বছরে শাখা ক্যানেলগুলির মাধ্যমে জল ছাড়ার ব্যবস্থা হয়। এবারও জল ছাড়া হবে। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে সেচ দফতরে একটি বৈঠকও হয়েছে। সেখানে ঠিক হয়েছে, আগামী ৭ জানুয়ারিতে জল ছাড়া হবে। ক্যানালগুলি সংস্কারের ব্যাপারে সেচ দফতরের বক্তব্য, ক্যানালগুলি সংস্কার হলেও সর্বত্র ঠিকঠাক কাজ করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রতিটি সাব ক্যানাল সংস্কার করা হবে। রাজগঞ্জের কৃষি বিভাগের অফিসার মধুসূদন রায় অবশ্য বলেছেন, “রাজগঞ্জের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সেচের অভাব রয়েছে। সেচ দফতর থেকে জলের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়, কিন্তু ক্যানালগুলির বেহাল অবস্থার জন্য সব কৃষি প্রধান এলাকায় জল পৌঁছতে পারে না। বৃহস্পতিবার সেচ দফতরের বৈঠকে সমস্যাগুলি তুলে ধরা হয়েছে।” তিনি জানান, গত বছর রাজগঞ্জের সুখানি, সন্ন্যাসীকাটা অঞ্চলে ক্যানেল থেকে জল না পাওয়াতে চাষিরা বোরো চাষ করতে গিয়ে বেশ সমস্যায় পড়ে। জলপাইগুড়ি জেলা কিসান কংগ্রেসের চেয়ারম্যান দুলাল দেবনাথ বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তা প্রকল্পের মাধ্যমে সেচের উন্নতির জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করছে। কিন্তু তিস্তা প্রকল্পের একশ্রেণির আমলাদের গাফিলতির জন্য চাষিরা সেচের পরিষেবা পাচ্ছে না, এটা ঘটনা। এই নিয়ে আমাদের সংগঠনের তরফে বহুবার আন্দোলন হয়েছে।” রাজগঞ্জের মালিয়ালি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তথা কংগ্রেস নেতা মানিক রায় জানান, তাঁদের গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সবচেয়ে বড় সমস্যা সেচের। তাঁর বক্তব্য, “মূলত করতোয়া সেচ প্রকল্প থেকে আমরা শাখা ক্যানেলের মাধ্যমে জল পেয়ে থাকি। জল পাওয়ার আশায় অনেকেই বোরো চাষে নেমে শেষ পর্যন্ত জল না পেয়ে মাঠেই খেত নষ্ট হয়ে গিয়েছে। চাষিরা অনেক লোকসানে পড়ে গিয়েছিল। বোরো চাষের মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। চাষিরা এখন বীজ তোলা শুরু করবে। কিন্তু ক্যানালগুলিতে একফোঁটা জল নেই। চাষিরা মাঠে নামতে সাহস পাচ্ছেন না। সেচের জন্য আমাদের এখানকার চাষিরা সব্জি ও বোরো চাষই করতে পারছেন না। এবার যাতে দ্রুত জল ছাড়ার ব্যবস্থা হয়, তার জন্য সেচ দফতরে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।” কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সব মিলিয়ে রাজগঞ্জে ১ হাজার হেক্টরের উপর বোরো চাষ ও সব্জি চাষ হয়ে থাকে। নতুন রায়, ভবেন রায়, জহর আলি মহম্মদের মতো চাষিরা বলেন, “একমাত্র বৃষ্টির জলের উপরে নির্ভর করে আমরা আমন চাষ করে থাকি। ইচ্ছে থাকলেও বাকি মরসুমগুলিতে কোনও কাম্য ফসল ফলাতে পারি না। গত বছর ক্যানেল থেকে প্রয়োজনীয় জল পাব আশায় মাঠে নেমেছিলাম। ফলন আসার আগে পর্যন্ত জল পাইনি। বহু লোকসানে পড়ে গিয়েছিলাম। এবারেও মাঠে নামার প্রস্তুতি শুরু করেছি। কিন্তু প্রয়োজনীয় জল পাব কি না, ভরসা করতে পারছি না।” |