আন্দোলন ঘোষণা জনমুক্তি যুব মোর্চার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
আলাদা ‘গোর্খাল্যান্ড’ রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনে নামার ঘোষণা করল ‘গোর্খা জনমুক্তি যুব মোর্চা’। রবিবার দুপুরে কালিম্পং মহকুমার মংপু স্পোর্টস গ্রাউন্ডে এক জনসভায় এই ঘোষণা করে ‘গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা’র যুব সংগঠন।
যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক প্রিয়বর্ধন রাই বলেন, “জিটিএ (গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) চুক্তির বিরোধিতা বা সমর্থন করছি না। আমাদের দাবি, গোর্খাল্যান্ড। এই দাবিতে পাহাড়-সমতল জুড়ে সভা, মিছিল হবে। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের কাছে দাবিপত্র পাঠানো হবে। দলীয় সভাপতি-সহ শীর্ষ নেতারা আগামী দিনে আন্দোলনে আমাদের সঙ্গেই থাকবেন।” এ দিনের ওই সভায় মোর্চার শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন না। তবে হাজির ছিলেন নারী মোর্চার সভানেত্রী তথা মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের স্ত্রী আশা গুরুঙ্গ। পরে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “যুব মোর্চা আলাদা রাজ্যের দাবিতে অনড় থাকতেই পারে। হৃদয়ে গোর্খাল্যান্ডের দাবি রেখে আমরাও জিটিএ-চুক্তি করেছি। এ দিনের সমাবেশে কী কথা হয়েছে তা জানি না। জেনে, পরে যা বলার বলব।” |
মংপুর সভায় মোর্চার যুব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। রবিন রাইয়ের তোলা ছবি। |
যুব মোর্চার তরফে এ দিন আলাদা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন-কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। ওই সংগঠনের নেতারা জানান, ১ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান চলবে। ৭ জানুয়ারি কার্শিয়াঙে, ১৫ জানুয়ারি মিরিকে, ২২ জানুয়ারি কালিম্পঙে, ২৯ জানুয়ারি শিলিগুড়িতে এবং ৫ ফেব্রুয়ারি দার্জিলিঙে জনসভা করা হবে। ১২ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের বৈঠকের পরে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
কিছু দিন আগেই বিধানসভায় জিটিএ-বিলটি পাশ হয়েছে। কিন্তু ওই বিলে সাংবিধানিক বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে অভিযোগে শুক্রবারই রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের দ্বারস্থ হন বামফ্রন্টের পরিষদীয় নেতৃত্ব। রাজ্যপালকে ওই বিলে স্বাক্ষর না করতে আর্জি জানান তাঁরা। তার উপরে যুব মোর্চার এই ‘ঘোষণা’ কি জটিলতা আরও বাড়াল না? জিটিএ-চুক্তি রূপায়ণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের প্রতিক্রিয়া, “এ ব্যাপারে আমি কোনও মন্তব্য করব না।” প্রশাসন সূত্রের খবর, পুরো বিষয়টি খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখছেন। কোনও কিছু বলার প্রয়োজন হলে, তা মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর দফতরের তরফেই বলা হবে।
উত্তরবঙ্গের রাজনীতির ‘গতি-প্রকৃতি’র নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের অনুমান, বস্তুত, দার্জিলিং পাহাড়ে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে অন্য কোনও রাজনৈতিক দল আন্দোলন শুরু করতে পারে এই সম্ভাবনা মাথায় রেখে তা গোড়াতেই নষ্ট করার ‘কৌশল’ নিয়েছেন মোর্চা নেতৃত্ব। কারণ, ‘জিটিএ’র সামগ্রিক রূপ নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে এখনও আলোচনা চলছে। রাজ্য সরকারের গড়া উচ্চ পর্যায়ের কমিটি এখন প্রস্তাবিত এলাকায় তরাই এবং ডুয়ার্সের কোনও এলাকা আদৌ সংযোজিত হবে কি না, তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে। সেই জন্যই ‘জিটিএ’ গঠন প্রক্রিয়া পূর্ণাঙ্গ চেহারা পেতে এখনও সময় লাগবে বলে মনে করছেন মোর্চা নেতারা। কিন্তু পাহাড়ের মানুষের মধ্যে আলাদা রাজ্য নিয়ে আবেগ রয়েছে। সেই আবেগকে কাজে লাগিয়ে জিটিএ-চুক্তি বাস্তবায়িত হওয়ার আগে অন্য কোনও দল যাতে পাহাড়ে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, তাই মোর্চা এই ‘কৌশল’ নিয়েছে।
এক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের কথায়, “এ দিন যুব মোর্চার সভায় মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যেরা উপস্থিত না থাকলেও, আশা গুরুঙ্গের উপস্থিতিই বুঝিয়ে দিচ্ছে, যুব মোর্চার কর্মসূচি মোর্চার শীর্ষ নেতাদের অজানা নয়। পাহাড়ের কংগ্রেস নেতারা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি তুলেছেন। সিপিআরএম, গোর্খা লিগের নেতারা সংগঠন মজবুত করার জন্য সভা, প্রচার অভিযান শুরু করেছেন। পাহাড়ে আন্দোলনের রাশ যাতে বেহাত না হয়, মোর্চা নেতৃত্ব সে জন্য এমন কৌশল নিতেই পারেন।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “মোর্চা নেতারাই তো জিটিএ-চুক্তি করেছেন! এখন আবার ওঁদের যুব সংগঠন অন্য কথা বলছে। মোর্চা নেতৃত্বের উচিত, দ্রুত ত্রুটিহীন ভাবে জিটিএ-চুক্তি রূপায়ণে জোর দেওয়া। কারণ, পাহাড়ে উন্নয়ন থমকে রয়েছে।”
|