বৃষ্টি নেই। অথচ জলে ভরা খানাখন্দ পেরিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে বসিরহাটের বাসিন্দাদের। রাস্তার যা অবস্থা তাতে কেউ দেখলে অনায়াসে ভাবতে পারেন খানিক আগে নিশ্চয় বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু না। বৃষ্টি হোক বা না হোক, সারা বছরই জল জমা থাকতে দেখা যায় বসিরহাট শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া প্রায় দু’কিলোমিটার দীর্ঘ ইটিন্ডা রাস্তায়।
কেন এমন অবস্থা?
ইটিন্ডার রাস্তার এই দুই কিলোমিটার অংশে নীচ দিয়ে গিয়েছে পানীয় জলের পাইপ। মাঝেমধ্যেই সেই পাইপ ফেটে যায়। মেরামতি নিয়ে দীঘর্সূত্রীতার জেরে বছরের বেশরিভাগ সময় জলকাদা পেরিয়েই চলাফেরা করতে হয় স্থানীয় মানুষকে। এ নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। কিন্তু তাতে কোনও হেলদোলও ঘটে না প্রশাসনের।
বসিরহাট পুরসভা এলাকার মধ্যে দিয়ে চলে গেছে ইটিন্ডা রোড। ত্রিমোহিনী থেকে ইটিন্ডাঘাট পর্যন্ত। গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা দিয়ে স্কুল-কলেজ, হাট-বাজার, অফিস-আদালতে যাতায়াত করতে হয় বাসিন্দাদের। হাসপাতাল-সহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে যেতেও এই রাস্তাই উপায়। অথচ রাস্তার একটা বড় অংশের দীর্ঘ মেরামতির অভাবে ভয়ঙ্কর অবস্থা। পিচ, পাথর উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সেই গর্তে গাড়ির চাকা পড়ে পাথর ছিটকে পথচারীদের জখম হওয়ার ঘটনা ঘটছে আকছার। তা ছাড়া ভাঙছে রাস্তার পাশের দোকানের দরজা, শোকেসের কাচ।
তবুও রাস্তার মেরামতিতে তেমন উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে। অসমান রাস্তায় গাড়ি চলতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন সাধারণ মানুষ। তার জেরে অবরোধ বিক্ষোভ হলে ভাঙাচোরা রাস্তার গর্ত ঢাকতে তখনকার মতো ইটের তাপ্পি দেওয়া হয়। তবে ওই পর্যন্তই। বেহাল রাস্তা বেহালই থেকে যায়। তার উপর বিপদ বাড়ে যখন রাস্তার নীচে জলের পাইপ ফেটে যায়। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত---সবসময়েই একই অবস্থা। রাস্তার জমা নোংরা জল ছিটকে জামাকাপড়ে লেগে সমস্যায় পড়তে হয় পথচারীদের। |
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় জল সরবরাহের জন্য ইটিন্ডা রাস্তার নীচ দিয়ে যে পানীয় জলের পাইপ বসানো হয়েছিল তা প্রায় ৪৫ বছরের পুরনো। বর্তমানে ওই পাইপের প্রায় পুরোটাই নষ্ট হতে বসেছে। কোথাও ফুটো হয়ে গিয়ে, কোথাও ফেটে গিয়ে মাঝেমধ্যেই বিপত্তি ঘটছে। রাস্তাঘাটা জলে ভরে যাচ্ছে। সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষ, যানচালকদের। কিন্তু নতুন পাইপ বসাতে গেলে প্রায় এক কোটি টাকা খরচ হবে। বসিরহাটের পুরাতন বাজার এলাকাতেই প্রায় ৫টি জায়গাতে মাটির নীচ থেকে জল উঠে রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে গিয়েছে। ত্রিমোহনী থেকে কলেজের দিকে এগোলে দালালপাড়ার কাছে দেখা যাবে রাস্তার মধ্যে জল জমার ছবি। আরও একটা বড় সমস্যা, রাস্তার দু’পাশের জল নিকাশি নালা বন্ধ করে দোকান তৈরি হওয়া। রাস্তার পাশে বেশ কিছু বাড়ির জলের পাইপের মুখও রাস্তার দিকে নামানো। এ সব কারণে ইটিন্ডা রাস্তার একটা বড় অংশে তেমন বড় বাজেটে মেরামতির কাজ হয় না বলে জানিয়েছে পূর্ত দফতর। তাদের কথায়, ইটিন্ডা রাস্তার বেশ কিছুটা উন্নত মানের করা হলেও জল জমার কারণে বাকি ধরনের মেরামতির কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। জলের কারণে দ্রুত নষ্ট হচ্ছে রাস্তা। এর পাশপাশি পরিকাঠামোর উন্নতি না করে সীমান্ত বাণিজ্যের জন্য পণ্যবাহী ভারী ট্রাক চলাচলও এই রাস্তা নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ।
পুরপ্রধান কৃষ্ণা মজুমদার বলেন, “বাড়ি বাড়ি পানীয় জল দেওয়ার জন্য মাটির তলা দিয়ে পাইপের বিষয়টা আমাদের দেখার। ইটিন্ডা রাস্তার নীচ দিয়ে যাওয়া জলের পাইপের লিকেজ মেরামতির দায়িত্ব পি এইচ ই-র। জনগণের স্বার্থে আমরা যৌথভাবে পাইপের লিকেজ মেরামতির চেষ্টা করছি। তবে বহন ক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে ভারী ভারী ট্রাক চলাচল করায় বার বার মেরামতির পরেও তা ঠিক রাখা যাচ্ছে না।”
পূর্ত দফতরের বসিরহাট উপনিবেশের সহকারি বাস্তুকার তপন নষ্কর বলেন, “ইটিন্ডা রাস্তায় জল জমা বন্ধে পুরসভা এবং পিএইচই দফতরকে বলা হয়েছে। জল বন্ধ হলে ভাল ভাবে মেরামতির কাজ শুরু করা হবে।” পিএইচই-র বসিরহাট ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার জয়দেব মণ্ডল বলেন, “অনেক বছরের পুরনো জলের পাইপ মেরামত করা হলেও ভারী যানবাহন চলাচল করায় করায় বার বার তা ফেটে যাচ্ছে। এই অবস্থায় পুরনো পাইপ তুলে ফেলে নতুন ভাবে পাইপ বসানো দরকার। কিন্তু আর্থিক কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পাইপের লিকেজ মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে।” |