|
|
|
|
চোলাইয়ের বিষে এ বার দৃষ্টি হারালেন দু’জন |
শুভাশিস ঘটক • কলকাতা |
মৃতের সংখ্যা আর না বাড়লেও বিষমদ-কাণ্ডে এমআর বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দু’জন দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। মগরাহাটের নুরুল হক লস্কর ও মন্দিরবাজারের বাসিন্দা কাশীনাথ ঘোষ নামে ওই দু’জনকে বৃহস্পতিবার রাতে ভর্তি করানো হয়েছিল। হাসপাতালের সুপার কাজলকৃষ্ণ বণিক বলেন, “শনিবার দুপুরে ওই দুই রোগী জানান, তাঁরা চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছেন না। সঙ্গে সঙ্গে চোখের ডাক্তারদের ডাকা হয়। তাঁরা দু’জনের চোখ পরীক্ষা করে জানান, বিষক্রিয়ায় ওই দু’জনই দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।”
চোলাই খেয়ে দৃষ্টিহীন হওয়ার নজির আগেও রয়েছে। ওডিশা বা কেরলে বিভিন্ন সময়ে যে সব বিষমদ-কাণ্ড ঘটেছে, সেখানে জীবিতদের একটা বড় অংশই আজ দৃষ্টিহীন। এমনকী ২০০৯ সালে পূর্ব মেদিনীপুরের বিষমদ-কাণ্ডের জেরে হোগলবেড়িয়া, নোনাকুড়ি, ভিতরআগাড়ের মতো গ্রামগুলিতে এখনও দৃষ্টিহীন মানুষের ভিড়। তাঁদের অনেকেই দেশের বিভিন্ন চোখের হাসপাতাল ঘুরে এসেছেন। কিন্তু দৃষ্টিশক্তি ফেরেনি। মগরাহাট-কাণ্ডে যাঁরা বেঁচে যাবেন, তাঁদের অনেকেরও দৃষ্টিহীন হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। |
|
গোঘাটের কুলিয়ায় ভাটি উচ্ছেদ অভিযান চালায় পুলিশ ও আবগারি দফতর।
সেই সময় দেখা যায় চোলাইয়ের ড্রামে ভাসছে মরা ইঁদুর। ছবি: মোহন দাস |
চোখের ডাক্তারেরা জানাচ্ছেন, চোলাইয়ে অতিরিক্ত পরিমাণ মিথাইল অ্যালকোহল থাকে। সেটাই দৃষ্টিশক্তি চলে যাওয়ার কারণ। কী ভাবে? তাঁদের ব্যাখ্যা, মিথাইল অ্যালকোহল সরাসরি অপটিক নার্ভ (চোখের স্নায়ু)-কে প্রভাবিত করতে পারে। আবার লিভারে গিয়ে মিথাইল অ্যালকোহল ভেঙে যায় ফরমাল ডিহাইড এবং ফরমিক অ্যাসিডে। ওই দুটি রাসায়নিকও ‘অপটিক নার্ভ’কে প্রভাবিত করে। এর ফলে চোখের ওই স্নায়ু দিয়ে উদ্দীপনা যাতায়াত বন্ধ যায়। দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়। এ ভাবে স্নায়ুর কাজ নষ্ট হয়ে গেলে দৃষ্টিশক্তি আর ফিরে আসার সম্ভবনাও থাকে না।
চিকিৎসকেরা আরও জানাচ্ছেন, চোখের স্নায়ুর পাশাপাশি ওই দু’টি রাসায়নিক শরীরের অন্য সব স্নায়ুকেও অকেজো করে দেয়। ধীরে ধীরে অকেজো হয় শরীরের মাংসপেশিগুলিও। লিভার, কিডনি, হৃৎপিণ্ড এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপরেও তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। হৃৎপিণ্ড যথাযথ ভাবে রক্ত ‘পাম্প’ করতে না পারায় শরীরে অক্সিজেনের অভাব হয়। কার শরীরে কতটা মিথাইল অ্যালকোহল, ঢুকেছে তার উপরে নির্ভর করে বিষক্রিয়ার মাত্রা। ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার ভিতরে বিষক্রিয়া শুরু হয়।
বিষমদ-কাণ্ডে এ পর্যন্ত ১৭০ জন মারা গিয়েছেন। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের বক্তব্য, মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পরেও মৃতদের পাকস্থলী থেকে মিথাইল অ্যালকোহলের তীব্র গন্ধ পাওয়া গিয়েছে। ওই অতিরিক্ত পরিমাণ মিথাইল অ্যালকোহলের বিষক্রিয়াতেই এত জনের মৃত্যু হয়েছে।
তাঁরা আরও জানান, সাধারণত মদ খাওয়ার পরে তা শরীরে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। কিছুটা প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সঙ্গে কিছু মিথাইল অ্যালকোহল বেরিয়ে গেলেও বাকিটা জমে থেকেছে শরীরে। রক্তের মাধ্যমে তা গিয়েছে লিভারে। ছড়িয়ে পড়েছে শরীরের সর্বত্র। একের পর এক অঙ্গ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। |
|
|
|
|
|