ইস্টবেঙ্গল-০
পৈলান অ্যারোজ-০ |
গোলের ব্যবধান বাড়ানো তো দূরের কথা, তিন পয়েন্টও জুটল না। উল্টে চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রহ থেকে এক ধাপ নেমে গেল ইস্টবেঙ্গল।
দৌড়ের পাল্টা দৌড়। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে চেয়েছিলেন ট্রেভর মর্গ্যান। অনামী গুরতেজ সিংহ-শৌভিক মণ্ডলদের দাপটে উল্টে সেই কাঁটাই গেঁথে গেল লাল-হলুদ কোচের গলায়। এক ঝাপটায় ‘ফার্স্ট বয়’ হওয়ার সুবর্ণ সুযোগে স্থগিতাদেশের অদৃশ্য ‘সাইনবোর্ড’ ঝুলে পড়ল। পৈলানের বিষাক্ত তিরে টোলগে-পেনরা আটকে গেলেন ‘ফোর্থ বয়’-এর কাঁটাতারেই।
চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে থাকা একটা দল কেন পৈলান অ্যারোজের মতো একটা ছোট দলের কাছে আটকে গেল? ডেম্পো ম্যাচ জেতার আত্মতুষ্টি, না আগে থেকেই প্রতিপক্ষকে ‘দুর্বল জোনে’ ঠেলে দেওয়ার বদভ্যাস? রবিবার যুবভারতীতে যে দৃশ্যমাল্য ধরা পড়ল, তাতে দু’টোরই গন্ধ লেপ্টে আছে।
সুখবিন্দর সিংহকে বেলাইন করতে তিন বিদেশি নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন মর্গ্যান। মজার ব্যাপার হল, ম্যাচের আগের দিন টোলগের আনফিট সার্টিফিকেটে মৌখিক ছাপ মেরেছিলেন স্বয়ং মর্গ্যানই। রবিবার পুরো নব্বই মিনিট খেললেন অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রাইকার। কী ভাবে? ডান পায়ে শট নিতে পারছেন না। ডান প্রান্ত ধরে দৌড়াচ্ছেন, কিন্তু শট নেওয়ার সময়ই ঢুকে পড়ছেন বক্সের বাঁ দিকে। বুঝতে অসুবিধা হল না, গোড়ালির চোট এখনও তরতাজা। |
মর্গ্যানের অবশ্য যুক্তি, “টোলগে সকালে আমাকে বলে, ও খেলতে পারবে। তাই ওকে নামিয়েছিলাম।” ফেডারেশন কাপে মেহতাব হোসেনকে নামানোর খেসারত পরের বেশ কয়েক’টা ম্যাচে দিতে হয়েছে ইস্টবেঙ্গলকে। মর্গ্যান ‘স্যার’ একটু দেখবেন, যেন আর একটা মেহতাব না হয়ে যায়!
আর দলের প্রধান স্টপার উগা ওপারা? শনিবারের অনুশীলনে তাঁর দেখা না পেলেও, রবিবার গোটা ম্যাচে লাল-হলুদের ডিফেন্স আগলে রাখলেন তিনিই। মর্গ্যান বলছেন, “টানা খেলার যা চাপ তাতে রোজ অনুশীলনের প্রয়োজন পড়ে না।” কিন্তু কম্বিনেশন প্র্যাক্টিস? মোহনবাগান কিংবা ডেম্পো ম্যাচের আগে এত বড় ঝুঁকি নেওয়ার দূরদর্শিতা কি দেখাতে পারতেন লাল-হলুদের ব্রিটিশ কোচ? গাওকে বাদ দিলে এই মুহূর্তে দলের সবচেয়ে লম্বা ফুটবলার ওপারা। তাই কর্নার কিক, থ্রো-ইন কিংবা ফ্রি-কিক হলেই সবার আগে ডাক পড়ে তাঁর। বক্সে হেডে গোল করার জন্য। বহু বার নাইজিরিয়ানের গোলে জয়োল্লাসও করেছেন টোলগেরা। কিন্তু এ দিন তাঁকে বক্সের আশেপাশে খুঁজেই পাওয়া গেল না। ডেম্পো ম্যাচে পাওয়া মাথায় সামান্য চোটও ভোগাল নাইজিরিয়ান স্টপারকে।
ইস্টবেঙ্গলের ব্যর্থতায় ফুটবলারদের চরম আত্মতুষ্টি আর মর্গ্যানের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস যদি প্রথম সারিতে থাকে, তা হলে দ্বিতীয় জায়গাটা অবশ্যই দখলে থাকবে ভাগ্যদেবতার। ইনজুরি টাইমের একদম শেষ লগ্নে যখন গোল করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন টোলগেরা, তখন হঠাৎ-ই পেনের একটা শট পৈলানের ফানাইয়ের হাতে লেগে বেরিয়ে যায়। মর্গ্যানের দুর্ভাগ্য, রেফারির তীক্ষ্ম নজরে সেটা ধরা পড়ল না। না হলে নিশ্চিত পেনাল্টি হতে পারত। যদিও সুখবিন্দরের যুক্তি, “রানিং বলে হ্যান্ডবল হয় না।” গোল না পাওয়ার হতাশা মাঝে মধ্যেই ফুটে উঠছিল ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের চোখে-মুখে। এমনকী মাথা গরম করার অপরাধে হলুদ কার্ড দেখতে হয় মেহতাবকে। চিরাগ কেরল ম্যাচে তাঁকে পাওয়া যাবে না।
‘কেউ কাউকে ছাড়ব না।’ লিগ-যুদ্ধে এখন মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের বোধহয় এটাই স্লোগান। অন্তত আগের দু’টো ম্যাচের পরিসংখ্যান তো সে দিকেই ঝুঁকে। বেঙ্গালুরুতে পিছিয়ে থেকে হ্যালকে হারালেন ওডাফারা। আবার ডেম্পোর কাছে প্রথমে গোল হজম করে ২-১ জিতল ইস্টবেঙ্গল। স্পোর্টিং ক্লুবের ব্যারিকেডে আটকে গেল মোহনবাগান। পৈলানের ফাঁদে ধরা পড়ল ইস্টবেঙ্গল। এখন দেখার ইস্ট-মোহনের ‘তেরা সাথ না ছোড়েঙ্গে’ আরও কদ্দিন চলে! আর পাশ দিনে চার্চিলরা বেরিয়ে যায় আই লিগের দৌড়ে সবার আগে।
ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, ওপারা, নির্মল, নওবা, সৌমিক, মেহতাব, সঞ্জু (রাবিন্দর), পেন, ভাসুম (সুশান্ত), টোলগে, লেন (বলজিৎ) |