ফুল-পশু-পাখিই সংসার সত্যজিতের
ছাদে সারি দিয়ে সাজানো আড়াইশোটি টবে নানা প্রজাতির ফুলের গাছ। একটি টবে ফুটেছে চন্দ্রমল্লিকা। এক-দুটি নয়। দু’হাজার ১৬টি ফুল ঝুলছে গাছে। শুধু কী তাই! মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের যুবক সত্যজিৎ প্রামাণিকের বাড়ির ছাদে পৌছনোর আগে পেয়ে যাবেন পায়রা থেকে চিনা মুরগির মতো অনেক কিছু। গোঁফ বাগিয়ে ‘ম্যাও’ ডাক ছেড়ে বেড়ালের দল বলবে আমরাও আছি। ইতিউতি ছুটে বেড়াচ্ছে খরগোশ। হরেক রকম পাখির কলতান তো আছেই। তবে সাবধান! ওই বাগানের গাছ ভুলেও ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করবেন না। কারণ, সেখানে নজরদারির কাজে ব্যস্ত রয়েছে সারমেয় দল। ফুল পাগল ২৪ বছরের যুবক সত্যজিৎ পশুপাখি প্রেমীও বটে! এক মুহূর্ত ফুল ও পশুপাখি ছাড়া থাকতে পারেন না ওই যুবক। বাড়ির লোকজন অথবা পাড়ার লোকজন কী ভাবছেন তা নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যথা নেই তাঁর। কিন্তু ফুল নষ্ট হলে বা কোনও পাখি আহত হলে ঘুমোতে পারেন না। যন্ত্রণায় ছটফট করেন। এমন পাগল যুবকের অবাক কাণ্ড দেখতে প্রতিদিন বাড়িতে ভিড় করেন প্রচুর মানুষ। প্রত্যেকে এক রাশ তৃপ্তি নিয়ে ফিরেও যাচ্ছেন। এ বার একটি টবে দু’হাজারের বেশি চন্দ্রমল্লিকা ফোটাতে পেরে সত্যজিৎ যেন খুশির জোয়ারে ভাসছেন। বাগান দেখতে আসা লোকজনকে তিনি সেটা বেশি করে দেখাচ্ছেন। ওই যুবকের কথায়, “প্রকৃতির সেরা সৃষ্টি ফুল। ফুলের রূপ ও সৌন্দর্য দেখে মানুষ ক্ষণিকের জন্য হলেও দুঃখ ভুলে যায়। স্বস্তি ফিরে পায়। আশার আলো দেখে।
অন্যদিকে পশুপাখিরা মানুষের মতো কথা বলতে পারে না ঠিক। কিন্তু সামান্য ভালোবাসা পেলে ওরা মানুষকে আপন করে নেয়।” প্রতিবেশী এক বাসিন্দার ফুলের বাগান দেখে শৈশব থেকে ফুলের প্রতি আগ্রহ সত্যজিতের। বাবা পাঁচু প্রামাণিক বিদ্যুৎ পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। ছয় ভাইবোনের সংসারে ভাইদের মধ্যে ছোট সে। মাধ্যমিক পাশ করার পরে টিউশন পড়িয়ে ছাদে গড়ে তোলেন শখের বাগান। সেখানে রয়েছে চন্দ্রমল্লিকা, পেনিজ, ডালিয়া, গাঁদা, এস্টার, পিটুনিয়া, গোলাপ সহ নানা চেনাঅচেনা ফুলের বাহার। আছে লঙ্কা, ক্যাপসিকাম, নবাবগঞ্জের বেগুন গাছ। শীতের মরসুমে দু’দণ্ড বসে থাকার সময় জোটে না। খাওয়া ভুলে সকাল থেকে রাত পর্য়ন্ত ছাদে চলে গাছ পরিচর্যা। এ জন্য শুরুতে বাড়ির লোকের কাছে কম বকুনি খেতে হয়নি। পরে হাল ছেড়ে দিয়ে ছেলের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। মা মঞ্জু দেবী বলেন, “ফুল আর পশুপাখি নিয়ে ওর দিন কাটে। এক সময় বকাবকি করতাম। এখন কিছু বলি না। কারণ, ওদের ছাড়া ছেলেটা থাকতে পারে না। তাই ওর মুখের দিকে তাকিয়ে যতটা পারি করি।” হরিশ্চন্দ্রপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির কর্তাদের দফতরে সত্যজিতের কর্মকাণ্ডের খবর পৌছেছে। এমন অভিনব সৃষ্টির নেশা দেখে তাঁরাও খুশি। সমিতির বনভূমি দফতরের কর্মাধ্যক্ষ মানিক দাস বলেন, “এমন দক্ষ কর্মী পেলে বন দফতর বর্তে যেত। উৎসাহ দিতে ওঁকে সাহায্য করা যায় কি না দেখছি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.